শান্তি সমাবেশে ওবায়দুল কাদের ও মহাসমাবেশে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর । শুক্রবার আওয়ামী লীগ ও বিএনপি এই কর্মসূচি পালন করে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
কাদির কল্লোল, ঢাকা: উত্তাপ-উৎকণ্ঠা থাকলেও শেষ পর্যন্ত শুক্রবার ঢাকায় বিএনপি ও আওয়ামী লীগের দুটি সমাবেশ শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়েছে। এটা স্বস্তির বিষয়। কিন্তু ঢাকার প্রবেশপথগুলোতে আজ শনিবার অবস্থান কর্মসূচি পালন করবে বিএনপি। বিরোধী দলের এই কর্মসূচিগুলোতে সতর্ক পাহারার কথা বলেছে আওয়ামী লীগ।
অন্যদিকে ঢাকা মহানগর পুলিশ গত রাতে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বলেছে, ঢাকার প্রবেশমুখগুলোতে কাউকে কর্মসূচি পালনের অনুমতি দেওয়া হয়নি। প্রবেশমুখে কর্মসূচি পালনের ক্ষেত্রে পুলিশ ব্যবস্থা নিতে পারে, এ ধরনের একটা ইঙ্গিত তাদের বক্তব্যে রয়েছে।
এমন পটভূমিতে পরিস্থিতি কী হতে পারে, এ নিয়ে নতুন করে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
এত দিন দুই দল একই দিনে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি পালন করলেও সেসব কর্মসূচি ছিল ভিন্ন ভিন্ন জায়গায়। কিন্তু বিএনপি এবার ঢাকার প্রবেশমুখগুলোতেই অবস্থান কর্মসূচি নিয়েছে। প্রবেশপথগুলোতেই সতর্ক পাহারার কথা বলেছে আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগী সংগঠনগুলো।
যদিও গত ডিসেম্বরে বিএনপির যুগপৎ আন্দোলনের শুরু থেকেই একই দিনে আওয়ামী লীগ পাল্টা কর্মসূচি দিয়ে আসছে। দীর্ঘ সময় ধরে দুই পক্ষের কর্মসূচিই ছিল শান্তিপূর্ণ। তবে এখন দুই পক্ষ অশান্তি ও সংঘর্ষের দিকে যাচ্ছে কি না, সেই প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। বিশ্লেষকদের অনেকে মনে করেন, নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে বিরোধে যে সংকট তৈরি হয়েছে, তাতে দুই দলের অবস্থান থেকে এখন সংঘাতের শঙ্কা বাড়ছেই।
দুই দলের নেতারা পরিস্থিতির জন্য পরস্পরের ওপর দায় চাপাচ্ছেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ঢাকার প্রবেশপথে তাঁদের অবস্থান কর্মসূচিও তাঁরা শান্তিপূর্ণভাবে পালনের জন্য নেতা-কর্মীদের কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন। কিন্তু কোনো অশান্তি হলে সে দায় সরকারের ওপরই বর্তাবে।
তবে আওয়ামী লীগ মনে করছে, সংঘাত হতে পারে, বিরোধী দল এখন সে ধরনের কর্মসূচির দিকে যাচ্ছে। দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, ‘বিএনপি যাতে কোনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে, সে জন্য আমরা রাজপথে সতর্ক অবস্থায় থাকছি। এ কারণে এত দিন কোনো সংঘর্ষ বা সংঘাত হয়নি।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকে মনে করেন, প্রবেশপথগুলোতে অবস্থান কর্মসূচি নিয়ে বিএনপি কার্যত রাজধানীকে অবরুদ্ধ করতে চাইছে। এসব জায়গায় ক্ষমতাসীনেরা যখন সতর্ক পাহারার কথা বলছে, তখন পরিবেশ কতটা শান্তিপূর্ণ রাখা সম্ভব হবে, সেটা বলা মুশকিল।
সাবেক নির্বাচন কমিশনার অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, রাজধানীর প্রবেশপথগুলোতে অবস্থান কর্মসূচি এবং বিপরীতে সতর্ক পাহারার কথা বলে দুই দল পরিস্থিতিকে সংঘর্ষের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। ঢাকাকে অবরোধ করার মতো বিএনপির কর্মসূচির ব্যাপারে সরকার আরও কঠোর মনোভাব দেখাবে। ফলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা কঠিন বলে মনে করেন তিনি।
বিএনপি ও আওয়ামী লীগ দুই দলই শুক্রবার ঢাকায় সমাবেশে জমায়েতের মাধ্যমে তাদের শক্তি প্রদর্শন করল। রাজপথে কর্মসূচি রেখে দুই পক্ষই একে অপরের ওপর চাপ সৃষ্টির কৌশল থেকে অনমনীয় অবস্থানের দিকে এগোচ্ছে। নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে দুই দলের মুখোমুখি এই অবস্থান পরিস্থিতিকে সংঘাতের দিকে নিয়ে যাচ্ছে বলেই বিশ্লেষকদের অনেকে মনে করেন।
যদিও শুক্রবার ঢাকায় অল্প দূরত্বে অনুষ্ঠিত দুটি সমাবেশই ছিল শান্তিপূর্ণ। কিন্তু বিএনপির শুক্রবারের মহাসমাবেশের আগে এর অনুমতি পাওয়া নিয়ে উত্তাপ ছড়িয়েছিল। এবার বিএনপির শুক্রবারের মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে ধরপাকড় বা পুলিশের গ্রেপ্তার অভিযানও চালানো হয়েছে। এর মাধ্যমে এটা বলা যায় যে ক্ষমতাসীনেরা কঠোর অবস্থানের দিকে যাচ্ছে।
অন্যদিকে বিএনপিসহ আন্দোলনকারী দল ও জোটগুলো আশুরা উপলক্ষে সরকারি ছুটির দিনেও আজ শনিবার ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশমুখগুলোতে অবস্থান কর্মসূচি নিয়েছে। সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলনের এখন চূড়ান্ত পর্যায় চলছে বলে বিএনপি বলছে। এমন পটভূমিতে দলটি এখন একের পর এক কর্মসূচি রাখার পরিকল্পনা নিয়েছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য জানিয়েছেন, ধারাবাহিক কর্মসূচি রেখে তাঁরা সরকারের ওপর চাপ বাড়াতে চাইছেন।
ইতিমধ্যে বিএনপির সমাবেশগুলোতে লোকসমাগম বাড়ছে। ফলে উত্তেজনাও বাড়ছে। দুই দলের সমাবেশেই নেতাদের বক্তব্যে বাড়ছে আক্রোশ।
রাজনৈতিক সংকটের সমাধান কীভাবে হতে পারে—সেটি এখনো পরিষ্কার নয়। কারণ, কোনো পক্ষই ছাড় দিতে রাজি নয়। যদিও মাঝে আলোচনার কথা উঠেছিল, কিন্তু তা এগোয়নি। এখন কোনো দলই আলোচনা বা সমঝোতার কোনো কথা বলছে না। যদিও আলোচনার ব্যাপারে সরকারের দায়িত্বই বেশি।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সাবেক সচিব আলী ইমাম মজুমদার বলেন, দুই দলের কোনো পক্ষ থেকেই আলোচনার কোনো উদ্যোগ নেই। তৃতীয় কোনো পক্ষেরও কোনো উদ্যোগের কথা শোনা যাচ্ছে না।
আলী ইমাম মজুমদার মনে করেন, আলোচনার কোনো উদ্যোগ যেখানে নেই। একে অপরকে চাপে ফেলার চেষ্টায় ব্যস্ত দুই দল। ফলে পরিস্থিতি সংঘাতের দিকে যাচ্ছে। এতে জনমনে অস্বস্তি ও অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হচ্ছে।