প্রতিনিধি রাজশাহী: বাড়ির পাশে দুর্গাদহ মাঠ। সেখানে করলার মাচা ভাঙার কাজ চলছে। একবেলা কাজ করলে ২৫০ টাকা পাওয়া যায়। এসএসসির ফলপ্রার্থী সাগর আহমেদ গিয়েছিল সেই কাজে। বেলা ১১টার দিকে মা হাফিজা বেগম গিয়ে খবর দিলেন, পরীক্ষার ফল বেরিয়েছে। কিন্তু দুপুর পর্যন্ত মাঠে না থাকলে পুরো টাকা পাওয়া যাবে না।
তাই নিজের পরীক্ষা ফলাফল জানার কৌতূহল দমন করে কাজ শেষ করে দুপুরে বাড়ি ফেরে সে। পরে চাচাতো ভাইয়ের মুঠোফোনে ফলাফল দেখে জানতে পারে, সাগর সব বিষয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছে।
সাগর আহমেদের বাড়ি রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার হাটকানপাড়া গ্রামে। বাবা সোহেল রানা একজন দিনমজুর। পাশাপাশি স্থানীয় বাজারে গুড় কেনাবেচা করেন। সাগর বাবার কাজে সহযোগিতার পাশাপাশি বাবার সঙ্গে মাঠে কাজেও যায়। এবার হাটকানপড়া উচ্চবিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগ নিয়ে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছিল সে।
ছেলের ভালো ফলের ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে বাবা সোহেল রানা বলেন, তিনি গরিব মানুষ। ঠিকমতো ছেলের পড়াশোনার খরচ দিতে পারেন না। এ জন্য ছেলেকেও তাঁর সঙ্গে মাঠে কাজ করতে হয়। ভালো পড়াশোনা করে বলে স্কুলের শিক্ষকেরা তাকে যত্ন করেন। জিপিএ-৫ কেমন ফলাফল তিনি জানেন না। তবে সবাই বলছে, তাঁর ছেলে ভালো ফল করেছে। এটা শুনেই তাঁর খুব ভালো লাগছে।
হাটকানপাড়া উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আহসান হাবিব বলেন, তাঁর বিদ্যালয় থেকে ২০ জন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে। তাঁদের মধ্যে সাগরকে নিয়ে তিনি গর্বিত। খুবই অভাবী পরিবারের ছেলে। বাবার কাজে সহযোগিতা করে, বাবার সঙ্গে মাঠে কাজও করে। এভাবেই পড়াশোনা করে সে সর্বোচ্চ ভালো ফল করেছে। তিনি বলেন, ‘ছেলেটি পড়াশোনায় ভালো। ব্যক্তিগতভাবে আর্থিক সহযোগিতা করতে না পারলেও বিদ্যালয় থেকে যতটুকু ছাড় দেওয়া সম্ভব, সেটি করেছি। সব সময় ছেলেটির খোঁজখবর রাখার চেষ্টা করি।’
ফলের প্রতিক্রিয়ায় সাগর বলে, ‘মা যখন গিয়ে খবর দিলেন, পরীক্ষার ফল বেরিয়েছে, তখনই ছুটে বাড়িতে আসতে ইচ্ছে করছিল। কিন্তু ধৈর্য ধরতে হয়েছে। দিনের কাজের পুরো টাকাটা পাওয়া যেত না।’ সাগর বলে, সে বিজ্ঞান বিভাগ নিয়ে পড়াশোনা করেছে। বিজ্ঞানে তার আগ্রহ আছে। শহরের ভালো কোনো কলেজে ভর্তি হতে পারলে সে ভালো ফল ধরে রাখতে পারবে। কিন্তু তাদের যে আর্থিক অবস্থা, তা দিয়ে ভালো কলেজে ভর্তি হওয়া সম্ভব নয়। কারও সহযোগিতা না পেলে বিজ্ঞান বিভাগ নিয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া কঠিন হবে।