সাভারের আমিনবাজারে পুলিশের সতর্ক অবস্থান। রয়েছে সাঁজোয়া যান, জল কামান। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
নিজস্ব প্রতিবেদক: ঢাকার প্রবেশ মুখগুলোতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কর্মসূচি ঘিরে সতর্ক অবস্থান নিয়েছে বিপুল সংখ্যক পুলিশ। তবে আজ শনিবার সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত দুই দলের নেতা-কর্মীদের উপস্থিতি তেমন ছিল না।
ঢাকার সাভারের আমিনবাজার, ঢাকার আবদুল্লাহপুর, নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড ও কাঁচপুর ব্রিজ এবং কেরানীগঞ্জের কদমতলী এলাকায় এমন অবস্থা দেখা গেছে।
ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশমুখ গাবতলীতে আজ শনিবার বেলা ১১টা থেকে পাঁচ ঘণ্টার ‘অবস্থান’ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা রয়েছে বিএনপির। সে অনুযায়ী, বিকেল ৪টা পর্যন্ত এই কর্মসূচি পালনের কথা। অপর দিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগী সংগঠনগুলো আজ ঢাকায় ‘সতর্ক অবস্থানে’ থাকবে। ঢাকার প্রবেশমুখ গুলোতেও নেতা-কর্মীদের ‘সতর্ক পাহারা’ থাকবে।
আমিনবাজার
দুটি রাজনৈতিক দলের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি উপলক্ষে আজ সকাল ১০টা পর্যন্ত সাভারের আমিনবাজার এলাকায় কোনো দলের নেতা-কর্মীদের অবস্থান দেখা যায়নি। তবে সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। সকাল থেকে আমিনবাজার ২০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের সামনে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের ঢাকাগামী লেনের পাশে ঢাকা জেলা পুলিশ ও গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যরা অবস্থান নেন। সড়কের পাশে রাখা হয়েছে একটি সাদা রঙের সাঁজোয়া যান। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা অবস্থান পরিবর্তন করে ঢাকার দিকে একটু এগিয়ে আমিনবাজারে মীরপুর মফিদ-ই-আম উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন। এ সময় এখানে আনা হয় জল কামান। তবে গত কয়েক দিনের মতো আজ আমিনবাজারে কোনো যাত্রীবাহী পরিবহনে তল্লাশি করতে দেখা যায়নি।
ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস ও ট্রাফিক উত্তর বিভাগ) আবদুল্লাহহিল কাফী বলেন, যে কর্মসূচির ঘোষণা এসেছে, সেটিতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অনুমোদন নেই। আমিনবাজার ও গাবতলী ঢাকার প্রবেশমুখ, এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি সড়ক। এখানে অবৈধ কর্মসূচি পালনের কোনো সুযোগ নেই। কেউ যেন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে না পারে, সে জন্য ৭ প্লাটুন পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। প্রয়োজন হলে আরও বাড়ানো হবে।
আজ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের ঢাকাগামী লেন ধরে আমিনবাজার ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও একই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রকিব আহমেদ এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ভাকুর্তা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান লিয়াকত হোসেনের নেতৃত্বে দুটি মিছিল গাবতলীর দিকে যায়। এ সময় তাদের বিএনপি ও জামায়াতবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দিতে দেখা যায়।
আবদুল্লাহপুর
আবদুল্লাহপুর মোড়ে গতকাল শুক্রবারের তুলনায় আজ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য সংখ্যা বেড়েছে। মোড়ের ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের মাথায় অবস্থান করছে অসংখ্য পুলিশ। যানবাহন তল্লাশির পাশাপাশি সাধারণ পথচারীদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে তাঁরা। তবে এখানে এখনো পর্যন্ত আওয়ামী লীগের কাউকে দেখা যায়নি।
ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-আশুলিয়া সড়ক এসে যুক্ত হয়েছে আবদুল্লাহপুর মোড়ে। এর মধ্যে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক ধরে গাজীপুর, নরসিংদী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, বৃহত্তর ময়মনসিংহের বিভিন্ন জেলাসহ আশপাশের এলাকা থেকে ঢাকায় প্রবেশ করেন মানুষ। ঢাকা-আশুলিয়া সড়ক হয়ে টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ, সিরাজগঞ্জসহ রাজশাহী বিভাগের একাধিক জেলার লোকজন রাজধানীতে প্রবেশ করেন।
আজ সকাল ১০টার দিকে সরেজমিনে দেখা যায়, গত কয়েক দিনের তুলনায় এখানে পুলিশের সংখ্যা বেড়েছে। আবদুল্লাহপুর মোড়ে সড়ক ও সড়কের পাশে অবস্থান করছেন প্রায় ৫০ থেকে ৬০ জন পুলিশ সদস্য। কোনো যাত্রীবাহী বাস, প্রাইভেট কার, মোটরসাইকেল বা কোনো পথচারীকে সন্দেহ হলে গতিরোধ করে তল্লাশি চালানো হচ্ছে।
গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা থেকে ঢাকার বিমানবন্দরের দিকে যাচ্ছিলেন আকরাম হোসেন। বাসে উঠে পুলিশ তাঁর পুরো ব্যাগ তল্লাশি করেন। তিনি বলেন, ‘আমার ব্যাগে কিছু কাপড়-চোপড় ছাড়া আর কিছু নেই। আমি তাদের (পুলিশ) বলেছি। তাও সন্দেহবশত পুরো ব্যাগ তল্লাশি করেছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কিছুই পায়নি। অযথাই হয়রানি।’
সাইনবোর্ড
নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ উপজেলার সাইনবোর্ড এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে সকাল থেকে বিপুলসংখ্যক পুলিশ ও গোয়েন্দা পুলিশের সদস্য মোতায়েন আছে। সেখানে পুলিশের একটি জলকামান আছে। তবে সেখানে বিএনপি বা আওয়ামী লীগের কোনো নেতা-কর্মীকে দেখা যায়নি। পুলিশ কোনো গাড়িতে তল্লাশিও চালাচ্ছে না। যান চলাচল স্বাভাবিক আছে।
কাঁচপুর ব্রিজ
নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর সেতুর পূর্ব পাশে ঢাকামুখী লেনে বিপুলসংখ্যক পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা আছে। পাশে কাঁচপুর মোড়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও কাঁচপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেনের নেতৃত্বে শতাধিক নেতা-কর্মীকে একটি মিছিল করতে দেখা গেছে। মিছিলটি পুলিশের সামনে দিয়েই গেছে। আশপাশের বিভিন্ন গলিতে বিএনপির দুই-একজন নেতা-কর্মীকে দেখা গেলেও সেভাবে তাদের জড়ো হতে দেখা যায়নি। যান চলাচল স্বাভাবিক আছে।
কদমতলী
কেরানীগঞ্জের কদমতলী এলাকায় বুড়িগঙ্গা দ্বিতীয় সেতুর প্রবেশ মুখে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ শ্রমিক লীগ ও যুব মহিলা লীগসহ বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীরা বিক্ষোভ মিছিলসহ অবস্থান নিয়েছেন। কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও জিনজিরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাকুর হোসেন, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান শাহিন আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক মুজাহিদুল ইসলাম, সহসভাপতি ও আগানগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর শাহ, কেরানীগঞ্জ থানা যুবলীগের সভাপতি মাহমুদ আলম, কলাতিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তাহের আলী, তারানগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন প্রমুখ।