বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের মধ্যে শিক্ষাসামগ্রী বিতরণ করেন জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ। শুক্রবার বিকেলে রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার নন্দনগাছী গ্রামে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
প্রতিনিধি রাজশাহী: বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু আরাফাত (১০)। সে জানে তার একটি বিদ্যালয় আছে। বিদ্যালয়ের নিজস্ব পোশাক আছে। এই পোশাক পরে বিদ্যালয়ে আসতে পারলেই সে খুশি। শুক্রবার বিকেলে তাকে আরও বেশি খুশি দেখাচ্ছিল। কারণ, বিদ্যালয়ে তার বাবাও এসেছে। সে বাবার কোলে বসে ছিল। তাঁর বাবা মাসুদ রানা চায়ের দোকানি।
এদিকে অতিথিরা এসেছেন আরাফাতের জন্য উপহারসামগ্রী নিয়ে। ওই বিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে শিশুদের চিত্তবিনোদনের উপকরণ স্থাপন করে রাজশাহীর জেলা প্রশাসক আনুষ্ঠানিকভাবে এটিকে ‘নন্দনকানন’ হিসেবে উদ্বোধন করেন।
রাজশাহীর চারঘাট উপজেলায় নন্দনগাছী প্রতিবন্ধী বিদ্যানিকেতনটি হচ্ছে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের আনন্দের ভুবন। উপজেলার নন্দনগাছী ইউনিয়নের ২৮টি গ্রাম থেকে শিশুরা এই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। যারা হেঁটে আসতে পারে না, তাদের জন্য রয়েছে গাড়ি। তারা এই বিদ্যালয়ে মা ও শিশু, প্রাক্-প্রাথমিক, প্রাথমিক এবং বৃত্তিমূলক শ্রেণিতে পড়াশোনা করে।
এই বিদ্যালয়ের পড়ার জন্য কোনো খরচ দিতে হয় না। সমাজসেবা অধিদপ্তরের নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান ‘অর্পণ ফাউন্ডেশন’ ২০১৬ সাল থেকে প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করে আসছে। বিদ্যালয়ের মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২০৫। শিক্ষক রয়েছেন ২০ জন এবং এই শিশুদের পরিচর্যার জন্য আরও ১৭ জন কর্মচারী রয়েছেন। উপজেলায় বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের পড়াশোনা জন্য এটি একমাত্র প্রতিষ্ঠান।
চারঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোহরাব হোসেন এখন এই প্রতিষ্ঠানের সভাপতি। শুক্রবার বিকেলে শিক্ষার্থীদের জন্য চিত্তবিনোদনের ব্যবস্থা স্থাপন, স্বাস্থ্যসেবা ক্যাম্প ও স্কুল ব্যাগ বিতরণ করতে এসেছিলেন রাজশাহীর জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন চারঘাট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফকরুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ইউএনও সোহরাব হোসেন।
এ উপলক্ষে শিশুদের সঙ্গে তাদের অভিভাবকেরাও এসেছিলেন। বাচ্চারা কী অবস্থায় আছে, তাদের স্বাস্থ্যগত সমস্যা দেখার জন্য স্বাস্থ্য ক্যাম্প করা হয়। সেবা দেন চারঘাট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দুজন চিকিৎসক। শিশুদের বিনোদনের জন্য দুটি স্লিপার, দোলনা ও ঢেঁকি স্থাপন করা হয়। জেলা প্রশাসক আনুষ্ঠানিকভাবে এই ক্যাম্পাস ‘নন্দনকানন’–এর উদ্বোধন করেন।
শিশুদের সঙ্গে আসা মায়েদের উদ্দেশে জেলা প্রশাসক বলেন, ‘মায়েরা কখনোই বিরক্ত হন না। কেউ হয়তো মনে করছেন, সৃষ্টিকর্তা কি পরীক্ষায় ফেলেছেন? আসলে যাদের কোনো সন্তান নেই, তিনি না পাওয়ার জন্য আক্ষেপ করেন। এই বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন বাচ্চারা একটু অভিমানী হয়। হয়তো তারা যেভাবে চায়, আমরা সেটি বুঝতে পারি না।’ এই শিশুদের প্রতিভার উদাহরণ দিয়ে সবাইকে জেলা প্রশাসক শিশুদের পরিচর্যা করার আহবান জানান। শিশুদের এই প্রতিষ্ঠানের পাশে থাকার আশ্বাস দেন তিনি।