পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার করমজা চতুরহাটে কৃষক আইয়ুব আলীর আনা কাঁচা মরিচের দাম বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ব্যাপারীরা ৩৫০ টাকা ও পাকা মরিচের দাম ১৫০ টাকা বলেন। কিন্তু তখন বিক্রি না করায় বেলা একটার দিকে কাঁচা মরিচের দাম ৩০০ ও পাকা মরিচের দাম ১০০ টাকায় নেমে আসে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রতিনিধি বেড়া: সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার ঘোড়াতলা গ্রামের বাসিন্দা, কাঁচা মরিচের ব্যবসায়ী হেদায়েদুল ইসলাম মরিচ কিনতে রোববার সকালে এসেছিলেন পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার করমজা চতুরহাটে। সকালে তিনি ৫০০ টাকা কেজি দরে প্রায় ১০ কেজি কাঁচা মরিচ কেনেন। কিন্তু সকাল ১০টার পর থেকেই ওই হাটে মরিচের দাম কমতে শুরু করে। বেলা একটার দিকে তিনি একই হাট থেকে ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা কেজি দরে আরও ২৫ কেজি মরিচ কেনেন; অর্থাৎ মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে একই হাটে প্রতি কেজিতে ২০০ টাকার বেশি দাম কমে যায়।

হেদায়েতুল ইসলাম  বলেন, ‘কাঁচামালের বাজার এমনই। সব মিলায়া আজ প্রায় ৩৫ কেজি কাঁচা মরিচ কিনল্যাম। এই মরিচ সিরাজগঞ্জের আড়তে পাইকারি দামে বেচব। সকালে যে মরিচ ৫০০ টাকা কেজি দরে কিনল্যাম, এখন (বেলা একটা) সেই মরিচই ২৮০ থেকে ৩০০ টাকায় কিনতেছি। আড়তে এই মরিচ ৪০০ টাকা কেজি দরে বেচার আশা করতেছি। জানি না কত দামে বেচপ্যার পারব। তবে মরিচের দাম এখন কমার দিকে।’

দেশে মরিচ উৎপাদনের অন্যতম এলাকা পাবনার সাঁথিয়া উপজেলা। তবে বেড়া উপজেলাতেও বেশ ভালো মরিচের আবাদ হয়। মরিচের উৎপাদনের এই এলাকাতে গত শুক্র ও গতকাল শনিবার খুচরা বাজারে ৬০০ টাকা কেজি দরে কাঁচা মরিচ বিক্রি হয়। পাইকারি হাটে কৃষকেরা ব্যাপারীদের কাছে মরিচ বিক্রি করেন ৪৫০ থেকে ৫৫০ টাকা কেজি দরে। তবে আজ দাম কমেছে। পাইকারি বাজারে, বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলের সবজি বিক্রির অন্যতম হাট সাঁথিয়ার করমজা চতুরহাটে আজ দুপুরের দিকে কাঁচা মরিচ ৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে।

কৃষক, মরিচ ব্যবসায়ী সবারই ভাষ্য, কাঁচা মরিচের দাম যে রেকর্ড ছুঁয়েছিল, তা থেকে দাম এখন কমছে। আগামী কয়েক দিনে দাম আরও কমার সম্ভাবনা আছে বলে তাঁরা জানান।

এদিকে সাঁথিয়া ও বেড়া উপজেলার খুচরা কাঁচা বাজারেও মরিচের দাম আজ কিছুটা কমেছে। ২৫০ গ্রাম মরিচ ১৫০ টাকা দরে বিক্রি হলেও আজ তা ১১০ থেকে ১৪০ টাকা দামে বিক্রি হতে দেখা যায়।

বেড়া পৌর বাজারের সবজি বিক্রেতা মো. সেরাই বলেন, ‘সকালে করমজা চতুর হাটের থ্যা ৪৭০ টাকা কেজি দরে মরিচ কিন্যা ৬০০ টাকা কেজি দরে কিছু মরিচ বেচছি। শুনতেছি পাইকারি হাটে নাকি প্রতি কেজির দাম ৩০০ টাকায় নামিছে। এখন ১১০ থেকে ১২০ টাকা পোয়াতেও (২৫০ গ্রাম) তেমন কেউ মরিচ কিনব্যার (৪৪০ থেকে ৪৮০ টাকা কেজি) চাতেছে না।’

আজ দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সাঁথিয়ার করমজা চতুরহাটে গিয়ে দেখা যায়, ২৫ থেকে ৩০ জন কৃষক মরিচ নিয়ে এসে বিক্রির জন্য অপেক্ষায় রয়েছেন। কিন্তু সেই তুলনায় ব্যাপারী বা ক্রেতার সংখ্যা তেমন নেই।

সাঁথিয়ার শহীদনগর গ্রামের আইয়ুব আলী বলেন, ‘জমির থ্যা চার কেজি কাঁচা মরিচ ও দুই কেজি পাকা মরিচ আনিছি। ঘণ্টা দেড়েক আগে কাঁচা মরিচের দাম ব্যাপারীরা ৩৫০ টাকা কেজি কইছিল। কিন্তু এখন ৩০০ টাকাও বলতেছে না। আর পাকা মরিচের দাম ১৫০ টাকা কেজি বলছিল। অথচ এখন ১০০ টাকা কেজি বলতেছে।’

সাঁথিয়ার কাশিনাথপুর গ্রামের আবুল কালাম বলেন, ‘দুই বিঘা জমিতে মরিচের আবাদ করিছি। আজ জমির থ্যা মোটে সাত কেজি মরিচ পাইছি। হাটে এই মরিচের দাম ৩০০ টাকা (প্রতি কেজি) বলতেছে। এবার জমিতে ফলন একেবারেই নাই। তাই বেশি দামে মরিচ বেইচ্যাও আমাগরে লোকসান।’

করমজা চতুরহাটের ইছামতী কাঁচামালের আড়তের ব্যবস্থাপক আবু সাঈদ বলেন, আজকের হাটে সকালে মরিচের জোগান কম ছিল, কিন্তু ব্যাপারী বেশি ছিল। তাই ওই সময় ৫০০ টাকা কেজি দরেও মরিচ বিক্রি হয়েছে। পরে জোগান বাড়লেও সে তুলনায় হাটে ব্যাপারী ছিল না। তাই মরিচের দাম ৩০০ টাকায় নেমে আসে। মরিচের দাম এখন পড়তির দিকে বলে তাঁর ধারণা।

সাঁথিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সঞ্জীব কুমার গোস্বামী বলেন, সাঁথিয়ায় এবার ২ হাজার ৯৪ হেক্টর জমিতে কাঁচা মরিচের আবাদ হয়েছে। খরার কারণে এবার ফলন কিছুটা কম হয়েছে। তবে গাছে ফুল আসতে শুরু করেছে। তাই আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে মরিচের ফলন যেমন বাড়তে থাকবে, তেমনি দামও কমতে থাকবে।