বগুড়ায় বিএনপির সঙ্গে সংঘর্ষে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়লে ইয়াকুবিয়া বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের অর্ধশতাধিক ছাত্রী অসুস্থ হয়ে পড়ে। মঙ্গলবার বিকেলে বগুড়ার ২৫০ শয্যা বিশিষ্ঠ মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রতিনিধি বগুড়া: বগুড়ায় বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষ চলাকালে পুলিশের ছোড়া কাঁদানে গ্যাসের শেল ও শটগানের গুলির শব্দে আতঙ্ক ও শ্বাসকষ্টে শহরের ইয়াকুবিয়া বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের অর্ধশতাধিক ছাত্রী অসুস্থ হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে ৩৩ জনকে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট সরকারি মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে অবজারভেশন ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। প্রায় চার ঘণ্টা চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণে থাকার পর বিকেলের দিকে ছাত্রীরা হাসপাতাল ছেড়েছে।

সরকার পতনের এক দফা দাবিতে আজ মঙ্গলবার দুপুরে বিএনপির পদযাত্রা কর্মসূচিতে বাধা দেওয়া নিয়ে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের সূত্রপাত। বেলা পৌনে একটার দিকে বগুড়া শহরের ইয়াকুবিয়া বালিকা উচ্চবিদ্যালয় মোড়ে বিএনপি নেতা-কর্মীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ মুহুর্মুহু কাঁদানে গ্যাসের শেল, শটগানের গুলি ও রাবার বুলেট ছোড়ে। পুলিশের গুলি ও হামলায় অন্তত ২০০ নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন বলে বিএনপি দাবি করেছে। এর মধ্যে ৭০ জন গুলিবিদ্ধ। অন্যদিকে পুলিশের দাবি, বিএনপির হামলায় ৬ থেকে ১১ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।

ইয়াকুবিয়া বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বিদ্যালয়ে পাঠদান কার্যক্রম চলছিল। হঠাৎ মুহুর্মুহু গুলির বিকট শব্দ। শিক্ষার্থীরা কৌতূহলবশত জানালা দিয়ে বাইরের পরিস্থিতি দেখার চেষ্টা করলে পুলিশের ছোড়া কাঁদানে গ্যাসের শেল এসে জানালার কাছে পড়ে। কাঁদানে গ্যাসের ধোঁয়ার কুণ্ডলী জানালা দিয়ে শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ করে। এতে ছাত্রীদের শ্বাসকষ্ট শুরু হয়।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহাদত হোসেন বলেন, কাঁদানে গ্যাসের ধোঁয়ায় শ্বাসকষ্ট ও আতঙ্কে অর্ধশত ছাত্রী অসুস্থ হয়ে পড়ে। এর মধ্যে ৩৩ জনকে মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের অবজারভেশন ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। বাকি শিক্ষার্থীদের পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। প্রায় চার ঘণ্টা পর্যবেক্ষণে রাখার পর বিকেল পাঁচটার দিকে ছাত্রীদের হাসপাতাল থেকে ছাড়া হয়।

অসুস্থ শিক্ষার্থীদের কয়েকজন বলে, তাদের কারও চোখ জ্বালাপোড়া করেছে, কারও শ্বাসকষ্ট হয়েছে।

মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) মো. শফিক আমিন কাজল বলেন, ‘পুলিশের ছোড়া কাঁদানে গ্যাসের ধোঁয়ায় অসুস্থ অর্ধশত শিক্ষার্থীর মধ্যে প্রথমে ৩৩ জনকে অবজারভেশন ওয়ার্ডে রাখা হয়। কিছুটা সুস্থতা বোধ করলে বিকেলে সবাইকে রিলিজ করে দেওয়া হয়।’

এদিকে অসুস্থ শিক্ষার্থীদের দেখতে হাসপাতালে যান জেলা বিএনপির সভাপতি ও বগুড়া পৌরসভার মেয়র রেজাউল করিম বাদশা এবং বগুড়া-৬ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রাগেবুল আহসান।

বগুড়া জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আজগর তালুকদার অভিযোগ করেন, এক দফা দাবিতে বিএনপির পদযাত্রা কর্মসূচি পূর্বঘোষিত। আগেই কর্মসূচির রুট পরিকল্পনা পুলিশকে দেওয়া হয়েছিল। কর্মসূচি ভন্ডুল করতে আওয়ামী লীগ শহরে শান্তি সমাবেশের নামে পাল্টা কর্মসূচি দেয়। আওয়ামী লীগের ইন্ধনে বিনা উসকানিতে পুলিশ বিএনপির নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা চালিয়েছে। নেতা-কর্মীদের ওপর কাঁদানে গ্যাসের শেল ও গুলি ছুড়েছে।

সন্ধ্যায় জেলা বিএনপি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে জেলা বিএনপির সভাপতি ও বগুড়া পৌর মেয়র রেজাউল করিম দাবি করেন, আজকের কর্মসূচি ঘিরে পুলিশের হামলায় তাঁদের অন্তত ২০০ নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। এর মধ্যে ৭০ জন গুলিবিদ্ধ।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বগুড়ার পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী বলেন, বিএনপির উচ্ছৃঙ্খল নেতা-কর্মীরা বিনা উসকানিতে পুলিশের ওপর হামলা করেছেন। পুলিশ জানমাল রক্ষার্থে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাঁদানে গ্যাসের শেল ও রাবার বুলেট ছুড়ে নেতা-কর্মীদের ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছে। পুলিশের ছোড়া কাঁদানে গ্যাসের ধোঁয়ায় পাশের একটি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অসুস্থ হওয়ার বিষয়টি অনাকাঙ্ক্ষিত ও অনিচ্ছাকৃত।

পুলিশ সুপার আরও বলেন, শহরের সাতমাথায় আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয় থাকায় এবং দলটির শান্তি সমাবেশ কর্মসূচি ঘোষণা করায় বিএনপির পদযাত্রা সাতমাথা অতিক্রম করতে চাইলে দুই দলের মধ্যে বড় ধরনের সংঘাতের আশঙ্কা ছিল। এ কারণে এক দিন আগেই বিএনপির নেতা-কর্মীরা পুলিশকে কথা দিয়েছিলেন, সংঘাত এড়াতে তাঁরা সাতমাথা এড়িয়ে পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করবেন। কিন্তু বনানীর দিক থেকে আসা বিএনপির নেতা-কর্মীরা মিছিল নিয়ে সাতমাথা অতিক্রম করে দলীয় কার্যালয়ে যেতে চেয়েছিলেন। সংঘাত এড়াতে পুলিশ তাঁদের সাতমাথার দিকে যেতে বাধা দেয়। এতে পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও হামলা করা হয়। পুলিশ ধৈর্যের সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছে। আত্মরক্ষার জন্য পরে কাঁদানে গ্যাসের শেল ও রাবার বুলেট ছুড়েছে।

পুলিশ সুপার বলেন, পদযাত্রা কর্মসূচির নামে বিএনপির নেতা-কর্মীরা পুলিশের ওপর হামলা চালিয়ে একজন পরিদর্শকসহ ১১ জনকে আহত করেছেন। সদর পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা হয়েছে। পুলিশকে লক্ষ্য করে ককটেল হামলা করা হয়েছে। স্কুলবাস ভাঙচুর করা হয়েছে। এসব ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে আলাদা মামলার প্রস্তুতি চলছে।