পুলিশের সাজোয়া যানের ওপর বিএনপি সমর্থকেরা লাঠিসোটা নিয়ে হামলা করে। মাতুয়াইল, ঢাকা | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
নিজস্ব প্রতিবেদক: ঢাকার ধোলাইখাল, উত্তরা ও মাতুয়াইলে পুলিশ ও বিএনপি নেতা-কর্মীদের মধ্যে ধাওয়া, পাল্টা ধাওয়া এবং সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। বেলা ১টায় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত মাতুয়াইলে সংঘর্ষ চলছিল।
পুলিশ বিএনপির নেতা-কর্মীদের অবস্থান কর্মসূচি থেকে সরিয়ে দিতে চাইলে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে কয়েক জন আহত হয়েছেন বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। আহতের মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় রয়েছেন।
সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশমুখে আজ বেলা ১১টা থেকে পাঁচ ঘণ্টার ‘অবস্থান’ কর্মসূচি পালন করছে বিএনপি। বিকেল ৪টা পর্যন্ত এই কর্মসূচি চলার কথা।
প্রতিটি জায়গায় বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদক ও ফটো সাংবাদিকেরা রয়েছেন। তাঁরা জানিয়েছেন, গাবতলী, উত্তরা, নয়াবাজার ও শনির আখড়া এলাকায় এই অবস্থান কর্মসূচির আগে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ও পুলিশ সেখানে অবস্থান নেয়। বেলা ১১টার পর থেকে বিএনপির নেতা-কর্মীরা জড়ো হতে থাকেন।
ধোলাইখালে সংঘর্ষ
বিএনপি সমর্থকদের লক্ষ্য করে পুলিশের অবস্থান। ধোলাইখাল, ঢাকা | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
পুরান ঢাকার ধোলাইখালে বেলা ১১টার পরে কয়েকশ বিএনপির নেতা-কর্মী লাঠিতে জাতীয় পতাকা বেঁধে সড়কের একপাশে অবস্থান নেন। তাঁরা সরকারবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছিলেন।
বিএনপির এই কর্মসূচি পালনের কথা ছিল পুরান ঢাকার নয়াবাজারে। তবে সেখানে আজ সকাল থেকে অবস্থান নেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। পাশাপাশি বিপুলসংখ্যক পুলিশ সদস্যও সেখানে মোতায়েন করা হয়।
বিএনপির নেতা-কর্মীরা নয়াবাজার থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে ধোলাইখাল এলাকায় অবস্থান নেন। সেখানেই পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
সরেজমিনে দেখা যায়, ধোলাইখালে সকাল সাড়ে ১১টার দিকে পুলিশ বিএনপির নেতা-কর্মীদের ধাওয়া দিয়ে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। প্রথমে পুলিশের ধাওয়ায় বিএনপির নেতা-কর্মীরা পিছিয়ে যায়। পরে বিএনপির নেতা-কর্মীরা সংঘটিত হয়ে পুলিশকে ধাওয়া দেয়।
ঘটনাস্থলে ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, ঢাকা বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালামসহ নেতারা ছিলেন। তাঁরা নেতা-কর্মীদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেছিলেন। তবে তা সম্ভব হয়নি।
ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় আহত হন। পুলিশ তাঁকে একটি দোকানের ভেতরে নিয়ে যায়। পরে তাঁকে একটি পুলিশ ভ্যানে করে সরিয়ে নেওয়া হয়।
সর্বশেষ বেলা সাড়ে ১২টার দিকে ধোলাইখালে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সরিয়ে দেয় পুলিশ।
উত্তরায় সংঘর্ষ
বিএনপি নেতাকর্মীদের উপর কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে পুলিশ। উত্তরা, ঢাকা | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
ঢাকার উত্তরায়ও পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষ হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, সকাল ১১টার কিছু পরে বিএনপির কিছু নেতা-কর্মী উত্তরার বিএনএস সেন্টারের কাছে জড়ো হয়। তাদের পুলিশ সরে যাওয়ার জন্য বলে। কিছুক্ষণ পরে বিএনপির আরও নেতা-কর্মী সেখানে যান।
একপর্যায়ে তাঁরা রাস্তার মাঝখানে অবস্থান নিয়ে বক্তব্য দেওয়া শুরু করেন। তখন তিনটি বিস্ফোরণের শব্দ হয়। তারপর পুলিশ কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে এবং ধাওয়া দিয়ে বিএনপির নেতা-কর্মীদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে।
বিএনপির নেতা-কর্মীরা পিছু হটে উত্তরার ৭ নম্বর সেক্টরের বিভিন্ন গলিতে অবস্থান নেন। সেখান থেকে তাঁরা পুলিশের দিকে ইটপাটকেল ছোড়া শুরু করেন। কিছুক্ষণ পর আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা গিয়ে বিএনপি নেতা-কর্মীদের ধাওয়া দেয়।
বেলা ১টায় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত পরিস্থিতি শান্ত। পুলিশ বিএনএস সেন্টারের সামনে অবস্থান করছিল।
পুলিশ দাবি করেছে, যে তিনটি বিস্ফোরণের শব্দ হয়েছে সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ার কারণে। এদিকে যমুনা টেলিভিশনের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক শরীফুল ইসলাম খান ঘটনাস্থলে আহত হন। একটি স্প্রিন্টার তাঁর গাঁয়ে আঘাত করে।
যুগান্তরের স্টাফ রিপোর্টার তারিকুল ইসলাম বলেছেন, ভিডিও করার কারণে পুলিশ তাঁর মুঠোফোন নিয়ে গেছে।
মাতুয়াইলে কাঁদানে গ্যাস
ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে বিএনপি সমর্থকেরা। মাতুয়াইল, ঢাকা | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
সকালে ১১টার পরে মাতুয়াইল মাতৃ সদন হাসপাতালের সামনের সড়কে বিএনপির কয়েকশ নেতা-কর্মী লাঠিসোঁটা নিয়ে অবস্থান নেন ৷ পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেট ছুড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে ৷ জলকামান থেকে পানি ছুড়তেও দেখা গেছে। দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া চলছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, বেলা পৌনে ১টায় পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষ চলছিল। সেখানে একটি বাসে আগুন দেওয়া হয়েছে।
গাবতলীতে আমান আটক
বিএনপির এক কর্মীকে লাঠি দিয়ে পেটাচ্ছে আওয়ামী লীগের সমর্থকেরা। গাবতলী, ঢাকা | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন
গাবতলীতে আজ বেলা ১০টার দিকে খালেক পরিবহনের বাস কাউন্টারের সামনে বিএনপির কিছু নেতা-কর্মী জড়ো হন। তখন যুবলীগ-ছাত্রলীগের কর্মীরা তাঁদের কয়েকজনকে ধরে পুলিশে দেয়। পুলিশও কয়েক জনকে ধরে। তাদের মাইক কেড়ে নেওয়া হয়।
এর কিছুক্ষণ পর ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমানের নেতৃত্বে বিএনপির নেতা-কর্মীরা সড়কের একপাশে অবস্থান নেন। কাছাকাছি দূরত্বে হানিফ বালুর মাঠের কাছে অস্থায়ী মঞ্চ করে অবস্থান নেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা।
সকাল ১১টার কিছু পরে আমানউল্লাহ আমানকে সরে যেতে বলে পুলিশ। সেখানে উপস্থিত ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) নাজমুল ফিরোজ তাঁকে (আমান) বলেন, ‘আপনাদের এখানে অবস্থানের অনুমতি নেই। পাঁচ মিনিট সময় দেওয়া হলো আপনারা চলে যান।’
আমানউল্লাহ বলেন, ‘আমি কোথাও যাচ্ছি না।’ এরপর পুলিশ সদস্যরা দুবার তাঁকে পুলিশের গাড়িতে তোলার চেষ্টা করেন। এরপর পুলিশ ধাক্কা দিয়ে আমানউল্লাহ আমানসহ বিএনপির নেতা-কর্মীদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে।
এক দল বিএনপি কর্মীকে লাঠিসোটা নিয়ে ধাওয়া দিচ্ছে আওয়ামী লীগের সমর্থকেরা। গাবতলী, ঢাকা | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
একপর্যায়ে মাজার রোডের নাবিল পরিবহনের সামনের সড়কে আমানউল্লাহ আমান শুয়ে পরেন। পুলিশ তাঁকে সরানোর চেষ্টা করে। পরে সেখান থেকে আমানউল্লাহকে একটি পুলিশ ভ্যানে তোলা হয়।
বেলা ১২টার দিকে বিএনপি নেতা-কর্মীদের একটি দল বেড়িবাঁধের দিক থেকে মিছিল নিয়ে আসলে সরকারি দলের কর্মীরা তাদের ধাওয়া দেয়। এ সময় পুলিশ কয়েক জনকে আটক করে।