ঈশ্বরদীর অরণকোলা কোরবানির পশুর হাট। বড় গরুর চেয়ে ছোট গরুর ক্রেতাই বেশি | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
প্রতিনিধি ঈশ্বরদী: পাবনার ঈশ্বরদীতে আসন্ন কোরবানির ঈদ কেন্দ্র করে উত্তরাঞ্চলের বৃহত্তম গরু বেচাকেনার অরণকোলা পশুর হাট জমে উঠেছে। সরেজমিন, খামারি ও ব্যাপারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবার হাটে অপেক্ষাকৃত ছোট গরুর চাহিদা বেশি। ফলে এই আকৃতির দামও একটু চড়া। বাইরের ব্যাপারীরা না আসায় বড় গরুর চাহিদা কম। দাম তুলনামূলক কম হওয়ার পরও বড় গরু বিক্রি হচ্ছে কম।
প্রতি সপ্তাহে মঙ্গলবার সকাল থেকে সন্ধ্যা এই পশুর হাট বসে। উপজেলা সদরের অরণকোলা এলাকায় এই হাটের অবস্থান। হাটে গিয়ে দেখা যায়, ক্রেতা-বিক্রেতাদের হাঁকডাকে হাট সরগরম হয়ে উঠেছে। কোরবানির সময় এই হাটে চোরাই পথে ভারতীয় গরু ওঠে। তবে এবারে ভারতীয় এখনো আসেনি। এ বিষয়ে স্বস্তি প্রকাশ করেন কৃষক ও খামারিরা।
হাট পশুর হাটের একদিকে শেড ঘরে খামারিদের বড় বড় গরু রাখা হয়েছে। অন্যদিকে খোলা আকাশের নিচে কৃষকদের ছোট গরু ও মাঝারি আকারের গরু।
বেলা দুইটার সময় পশুর হাটের প্রবেশমুখে একটি ষাঁড়ের দড়ি ধরে কয়েকজনকে টানাটানি করতে দেখা যায়। হাটে বিক্রি করতে আসা প্রান্তিক কৃষকদের কাছ থেকে হাটের বাইরে কম দামে গরু কিনে বেশি দামে বিক্রি করাই তাঁদের পেশা, যাঁরা দালাল নামে পরিচিত। গরুর মালিক ভেড়ামারা গ্রামের নুর আমিন (৩৯)। দালালদের হাত থেকে গরুর দড়ি কেড়ে নিয়ে তিনি বলেন, ‘কোরবানির হাটে বিক্রির জন্য দুটি গরু বাসায় লালন-পালন করেছি। হাটে বিক্রির জন্য একটা এনেছি।
পরের হাটে আরেকটা বিক্রি করব। কিন্তু ট্রাক থেকে গরু নামানোর পর দালাল ঘিরে ধরেছে। আমি ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা দাম চেয়েছি। দালালেরা ৯৫ হাজার টাকা দেওয়ার কথা বলে গরুর দড়ি ধরে টানাটানি শুরু করে দিয়েছেন। দালালের কাছে গরু বিক্রি করব না, লাভ-লোকসান যা-ই হোক না কেন।’
গরু কিনতে আসা ছপিয়াল ব্যাপারী বলেন, ‘অরনকোলা হাটে গরুর দাম তুলনামূলক কম থাকে। এই হাটে গরু কিনে ঢাকার হাটে বিক্রি করি। এতে সামান্য কিছু টাকা লাভ হয়। কিন্তু এবারে ছোট গরুর (ওজন ১০০ কেজি) দাম একটু বেশি। গত বছর যে গরু ৮০ হাজার টাকায় কিনতে পেরেছি, এবারে সেই গরুর দাম চাচ্ছে ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা।’
উপজেলার লক্ষীকুন্ডা ইউনিয়ের কৃষক মোন্নাফ আলী বলেন, ‘সাড়ে তিন মণ ওজনের দুটি ষাঁড় গরু বিক্রি করতে এনেছিলাম। পথেই ৮৫ হাজার টাকা করে বিক্রি করেছি। ছোট গরু কেনার মানসের (মানুষের) অভাব নাই। হাটত আনার আগেই বিক্রি হয়া যায়।’
বাঘা চকরাজাপুর ইউনিয়ন থেকে গরু বিক্রি করতে এসেছেন ব্যাপারী নুরনবী মিয়া। তিনি বলেন, ‘গ্রামে গ্রামে ঘুরে কৃষকদের কাছ থেকে গরু কিনে এই হাটে বিক্রি করি। কিন্তু এবার গ্রামেই বেশি দামে গরু কিনতে হচ্ছে। ছয়টি বড় গরু এনেছিলাম। বড় গরুর ক্রেতা কম। মাত্র দুটি গরু বিক্রি করতে পেরেছি। দূরের ব্যবসায়ীরা এখনো আসেননি।’
অরণকোলা হাটের ইজারাদের অংশীদার মিজানুর রহমান রুনু মন্ডল বলেন, ‘এবার ভারতের গরু আসেনি। দেশি গরুর দাম চড়া।’
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘কোরবানির পশুর যে চাহিদা, সে অনুপাতে যথেষ্ট রয়েছে। তাই দাম সহনশীল রাখতে খামারিদের অনুরোধ করা হচ্ছে। আমাদের একাধিক ভেটেরিনারি টিম হাটে কাজ করছে। আশা করা যায় ঈশ্বরদী কোরবানির পশুর যে পর্যাপ্ততা, তাতে উপজেলার বাইরেও খামারিরা পশু বিক্রি করতে পারবেন।’