দাবি পূরণ না হলে ১৫ জুন থেকে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের

১১ দফা দাবি আদায়ে ‘প্রতিবন্ধী নাগরিক সমাজ’–এর ব্যানারে আয়োজিত সংহতি সমাবেশ। শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

নিজস্ব প্রতিবেদক: দাবি পূরণ না হলে ১৫ জুন থেকে কঠোর আন্দোলনে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা। আজ শুক্রবার প্রতিবন্ধী নাগরিক সমাজের ব্যানারে রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে ১১ দফা দাবিতে আয়োজিত এক সংহতি সমাবেশ থেকে এ হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়।

সমাবেশ থেকে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ওপর পুলিশের হামলার বিচারের দাবিও জানানো হয়। সমাবেশে সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়, প্রতিবন্ধীরা স্বাক্ষর করতে পারে না বলে বক্তব্য দিয়েছেন তিনি। সে জন্য তাঁর অপসারণও দাবি করা হয়।

সমাবেশে ইশারা ভাষায় বক্তব্য দেন জাতীয় বধির সংস্থার সাধারণ সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস খান। তিনি বলেন, ‘৪ জুনের ঘটনায় সরকার ও পুলিশকে ক্ষমা চাইতে হবে। ১৪ জুনের মধ্যে ১১ দফা দাবি আদায় না হলে আমরা ফের কঠোর আন্দোলনে নামব। আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে।’

সমাবেশে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস। তিনি বলেন, ৪ জুন প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের যৌক্তিক ও ন্যায্য ১১ দফা দাবির প্রতি সমর্থন জানাতে এসেছিলেন। সেদিন পুলিশ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের হুইলচেয়ার ফেলে দিয়েছে, তাঁদের লাথি মেরেছে। এমন নিন্দনীয় ঘটনা আর কিছু হতে পারে না।

প্রতিবন্ধী নাগরিক সমাজ যেসব দাবি তুলেছে, তা কারও দয়া নয়, বরং সাংবিধানিক অধিকার বলে মন্তব্য করেন নগর–পরিকল্পনাবিদ ইকবাল হাবিব। সমাবেশে অংশ নিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রতিবন্ধীদের স্বাবলম্বী করার ব্যবস্থা রাষ্ট্র করবে না কেন? কোন সেই অসুর শক্তি যা প্রধানমন্ত্রীর কাছে তাঁর সন্তানদের (প্রতিবন্ধী) যাওয়ায় বাধা সৃষ্টি করে, প্রতিবন্ধীদের হুইলচেয়ারে লাথি মারে?’

প্রতিবন্ধীদের যে ভাতা দেওয়া হয়, বর্তমান বাজারে সেই ৮৫০ টাকা দিয়ে কী হয়—প্রশ্ন তুলে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, নাগরিকের মর্যাদা প্রতিষ্ঠা, নাগরিককে শিক্ষিত করা ও কর্মসংস্থান গড়ে তোলা রাষ্ট্রের দায়িত্ব।

প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সঙ্গে পুলিশের আচরণের নিন্দা জানান জোনায়েদ সাকি। চলতি বাজেট অধিবেশনে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের দাবি মেনে নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক ফয়জুল হাকিম বলেন, ‘প্রতিবন্ধীদের ১১ দফা দাবি সরকার পূরণ না করলে প্রতিরোধ ও সংগ্রামের পথ বেছে নিতে হবে। তাঁদের এই দাবিগুলো আমাদের সবার। বৈষম্যমূলক, শোষণমূলক ও অপমানের সমাজ আমরা চাই না। বাংলাদেশ কারও জমিদারি নয়।’ দেশের পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠীর জন্য বাজেটে বরাদ্দও দাবি করেন তিনি।

মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক চিকিৎসক হারুন অর রশীদ বলেন, ‘বাজেটের নামে তামাশা হচ্ছে। মানুষের সঙ্গে প্রতারণা চলছে। প্রতিবন্ধীদের দাবি না মানলে, অধিকার না দিতে পারলে সরকারের তো কোনো দরকার নেই। তাদের দাবি পূরণ করুন।’

সমাবেশে সংহতি জানিয়ে প্রয়োজনে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের আইনি সহযোগিতা দেওয়ার আশ্বাস দেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আইনুন নাহার সিদ্দিকা।

প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নিয়ে ‘অপমানজনক’ বক্তব্য দেওয়ায় সমাজকল্যাণমন্ত্রীর দ্রুত অপসারণ দাবি করেন এই আন্দোলনের সংগঠক ইফতেখার মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘বাজেটে প্রতিবন্ধীদের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন না হওয়া এবং আমাদের কিছু দাবিদাওয়া নিয়ে আমরা ৪ জুন শাহবাগে সমবেত হয়েছিলাম। সেখানে পুলিশ নির্মম নির্যাতন চালায়। আমাদের স্মারকলিপি দিতে বলা হয়। আমরা স্মারকলিপি দিতে দিতে ক্লান্ত। বাজেটে প্রতিবন্ধীদের জন্য নতুন পদক্ষেপ নেই। সরকারকে দরিদ্র ও অসহায় মানুষের প্রতি সহানুভূতিশীল হতে হবে।’

সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে বি-স্ক্যান নামের একটি সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সালমা মাহবুব বলেন, ‘আমাদের দাবি পূরণে আমরা সরকারকে ১৪ জুন পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছি। এর মধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষণা না হলে ১৫ জুন থেকে আমরা আরও জোরদার আন্দোলনে যাব।’

সমাবেশে প্রতিবন্ধী অধিকারকর্মী লাকী আক্তার, উজ্জ্বলা বণিক, নাঈমুল ইসলাম, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী গ্র্যাজুয়েট পরিষদের নেতা মাহবুব মোর্শেদ, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সভাপতি সাদেকুল ইসলাম, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অমল ত্রিপুরা, ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি মিতু সরকার প্রমুখ বক্তব্য দেন।

প্রতিবন্ধীদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে প্রতিবন্ধী ব্যক্তির মাসিক ভাতা পাঁচ হাজার টাকা করা, প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর ভাতা দুই হাজার টাকা করা, সরকারি চাকরিতে বিশেষ নীতিমালা, হাজার কোটি টাকার প্রতিবন্ধী উদ্যোক্তা তহবিল গঠন, প্রতিবন্ধী উন্নয়ন অধিদপ্তর কার্যকর, ইশারা ভাষা ইনস্টিটিউট গঠন ও সব সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানে দোভাষী নিশ্চিত, শিক্ষা ও চাকরির নিয়োগে শ্রুতলেখক নীতিমালা প্রণয়ন, প্রতিবন্ধীদের প্রবেশগম্য অবকাঠামো ও গণপরিবহন নিশ্চিতে বরাদ্দ, রাজনৈতিক দলে প্রতিবন্ধীদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত, মন্ত্রণালয়ভিত্তিক সংবেদনশীল বাজেট বরাদ্দ।