হোলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার ৭ বছর: হামলা করতে জোটবদ্ধ হচ্ছে জঙ্গি সংগঠন

হোলি আর্টিজান বেকারিতে ২০১৬ সালের ১ জুলাই জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটেছিল | ফাইল ছবি

শাহরিয়ার হাসান, ঢাকা: দীর্ঘদিন নিশ্চুপ জঙ্গি সংগঠনগুলো এবার জোট বেঁধে হামলার ছক কষছে। এর অংশ হিসেবে তারা সদস্য সংগ্রহ করছে। এই সদস্যদের প্রশিক্ষণ দিয়ে হামলার পরিকল্পনা জঙ্গিদের। ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সিটিটিসি বলছে, হামলার মতো একক সক্ষমতা না থাকায় জঙ্গি সংগঠনগুলো জোটবদ্ধ হচ্ছে। এর মধ্যে নিষিদ্ধঘোষিত আনসার আল ইসলাম ও জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি) সম্প্রতি এক প্ল্যাটফর্মে এসেছে। আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের যেকোনো সময় বড় হামলার পরিকল্পনা নিয়ে সংগঠন দুটি সদস্য সংগ্রহে তৎপরতা বাড়িয়েছে। অনলাইনেও এই কার্যক্রম চলছে। তবে জঙ্গিদের রুখতে পরিকল্পনাও করেছেন সিটিটিসির কর্মকর্তারা।

সিটিটিসির কর্মকর্তারা বলছেন, গুলশানে হোলি আর্টিজানে হামলাসহ বেশ কয়েকটি হত্যাকাণ্ড ঘটানো জঙ্গি সংগঠন নব্য জেএমবির কার্যক্রম থেমে গেছে। সংগঠনের আমির মেহেদি জন তুরস্কে গ্রেপ্তার হওয়ার পর সংগঠনটি নেতৃত্বহীন হয়ে পড়েছে। তাদের ঘুরে দাঁড়ানোর শক্তি নেই।

হোলি আর্টিজান বেকারিতে নৃশংস জঙ্গি হামলা হয়েছিল ২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে। ওই হামলায় নিহত হয়েছিলেন দুই পুলিশ কর্মকর্তাসহ ২২ জন। যাঁদের বেশির ভাগই ছিলেন বিদেশি নাগরিক। সকালে সেনাবাহিনীর অভিযানে নিহত হয় পাঁচ জঙ্গি। ওই হামলার পর জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অভিযানে নামে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বিভিন্ন অভিযানে নিহত হয় বেশ কয়েকজন জঙ্গি। হোলি আর্টিজানে হামলার মামলায় ২০১৯ সালে ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনাল সাত জঙ্গিকে মৃত্যুদণ্ড ও এক আসামিকে খালাস দেন। ওই সাত জঙ্গির ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ডাদেশ অনুমোদন) ও আপিলের শুনানি হাইকোর্টে গত মে মাসে শুরু হয়েছে। ১৪ জুনও শুনানি হয়েছে।

পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র বলছে, ২০০১ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত জঙ্গিবাদ সম্পৃক্ত ১ হাজার ৯৪৫টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় ৯ হাজার ৭২ জনকে আসামি করা হয়। ডিএমপির সিটিটিসি বিভাগ বলছে, তারা চলতি বছরই ৬৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।  

অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (সিটিটিসি) মো. আসাদুজ্জামান বলেন, জঙ্গিরা নানামুখী তৎপরতা চালালেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একের পর এক অভিযানে তারা কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। তাদের সব কার্যক্রমও নজরদারিতে রাখা সম্ভব হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, পুরোনো জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলাম ও জেএমবি আবার হামলা করে অস্তিত্ব জানান দিতে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে। আবার সংগঠন দুটির কিছু প্রবীণ নেতা কারাগার থেকে বেরিয়ে নতুন নামে ছোট ছোট দল গঠন করে কাজ করছে। যুবকদের দলে ভিড়িয়ে সক্রিয় করছে।   

পুলিশের উপকমিশনার (কাউন্টার টেররিজম ইনভেস্টিগেশন বিভাগ) এস এম নাজমুল হক বলেন, রাজনৈতিক অস্থিরতার সময়ে পুলিশ সেদিকে ব্যস্ত হলে সেই সুযোগে এই অপশক্তি মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতি থাকলে এবং আফগানিস্তান, সিরিয়া ও কাশ্মীরে বড় কিছু না হলে দেশে জঙ্গিদের উত্থানের আশঙ্কা নেই।

পুলিশ বলছে, জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধকরণ চলে মূলত অনলাইনে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারি এড়াতে বার্তা, ছবি ও ভিডিও আদান-প্রদানের জন্য জঙ্গিরা অপ্রচলিত ও আধুনিক অ্যাপ ব্যবহার করছে। তবে সেগুলোও পুলিশের নজরে এসেছে। কোনো জঙ্গি সংগঠনের সদস্যই ভাইবার, হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা আদান-প্রদান করে না। তাদের যোগাযোগের বড় মাধ্যম টেলিগ্রাম, সিগন্যাল, টাম টাম, জেল্লো, রকেট, উইকার মি ও প্লাস মেসেঞ্জার। ভিসিএম নামের একটি করপোরেট বার্তা আদান-প্রদান মাধ্যমেরও খোঁজ পেয়েছেন গোয়েন্দারা।

পুলিশের অ্যান্টি টেররিজম ইউনিটের একটি প্রতিবেদন বলছে, দেশে জঙ্গি অর্থায়নের বড় অংশই আসে মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপ থেকে। অবৈধভাবে আসায় ওই অর্থের গতিবিধি নজরে রাখতে পারছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক এস এম রুহুল আমিন বলেন, দেশের ভেতরে-বাইরে দুই জায়গা থেকেই অর্থ আসছে। এগুলো নিয়ে কাজ চলছে। সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে তিনি বলেন, ‘জঙ্গিবাদ নিয়ে কখনো তৃপ্তির ঢেকুর তোলার সুযোগ নেই। আমাদের সব সময় সতর্ক থাকতে হবে।’