যমুনার ভাঙনের কবলে পড়েছে শিমুলতাইড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন। শিমুলতাইড় চর , সোনাতলা উপজেলা, বগুড়া, ২২ জুন | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
প্রতিনিধি বগুড়া: বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার চালুয়াবাড়ী ইউনিয়নের যমুনা নদীর দুর্গম চরে ১৪ বছর আগে ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয় শিমুলতাইড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন। ভবনটি নদীভাঙনের হুমকিতে পড়েছে। এটি রক্ষা করতে পাঁচ হাজার বালুভর্তি জিও ব্যাগ নদীতে ফেলছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। এতে ব্যয় হচ্ছে ২২ লাখের বেশি টাকা।
দরপত্র ছাড়াই গত মঙ্গলবার থেকে পাউবোর তত্ত্বাবধানে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলার কার্যক্রম চলছে। পাউবো বগুড়ার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম এবং নির্বাহী প্রকৌশলী নাজমুল হকের তত্ত্বাবধানে এ কাজ চলছে।
নাজমুল হক বলেন, বিদ্যালয় ভবন রক্ষায় তাৎক্ষণিক ভাঙন প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার অংশ হিসেবে নদীতীরে মোট পাঁচ হাজার বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। প্রতিটি ব্যাগ ফেলতে ব্যয় হচ্ছে ৪৪২ টাকা। সে হিসাবে ৫ হাজার জিও টেক্সট ব্যাগ ফেলতে ঠিকাদারকে বিল গুনতে হবে ২২ লাখ ১০ হাজার টাকা।
বৃহস্পতিবার সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, শিমুলতাউড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ছুঁই ছুঁই যমুনা। ভাঙন থেকে বিদ্যালয় ভবন রক্ষা করতে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলছেন ঠিকাদারের লোকজন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঠিকাদারদের তিনজনই স্থানীয় আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। একজন সারিয়াকান্দি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শওকত আলী। অন্য দুজন হলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি মমতাজুর রহমান এবং সারিয়াকান্দি সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য আবদুল কাফি।
শওকত আলী বলেন, ‘বৃহস্পতিবার পর্যন্ত আমার লোকজন ফেলেছেন দুই হাজার ব্যাগ। প্রতিটি ব্যাগে ৩০০ কেজি বালু আছে। প্রতিটি টেক্সট ব্যাগ ফেলা বাবদ পাউবো থেকে বিল দেওয়ার কথা ৪৪২ টাকা।’
সারিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) সবুজ কুমার বসাক বলেন, শিমুলতাইড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন রক্ষায় দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পাউবোকে অনুরোধ করা হয়েছিল। তারা জিও ব্যাগ ফেলে বিদ্যালয় ভবন রক্ষার চেষ্টা করছে।
সারিয়াকান্দি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা গোলাম কবীর জানান, ১৯০৭ সালে প্রতিষ্ঠিত শিমুলতাইড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। যমুনা নদীর ভাঙনে চার দফা সরানোর পর শিমুলতাইড় চরে ৩৩ শতাংশ জায়গায় বিদ্যালয়টি থিতু হয়। বর্তমানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৪৬ জন। শিক্ষকের পদ আছে সাতটি। কর্মরত আছেন তিনজন।
বিদ্যালয়ে আধা পাকা টিনশেডের দুটি শ্রেণিকক্ষ ভবন এবং একটি দুই কক্ষবিশিষ্ট আরসিসি ভবন আছে। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে প্রায় ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে উপজেলা প্রকৌশল কার্যালয় দুই কক্ষবিশিষ্ট পাকা ভবন নির্মাণ করে। বর্ষা আসতে না আসতেই যমুনার প্রবল ভাঙনে পাকা ভবনটি হুমকির মুখে পড়েছে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শিরিন আকতার বলেন, চার বছর আগেও যমুনা নদী ছিল বিদ্যালয় চত্বর থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে। কয়েক বছর ধরে অব্যাহত ভাঙনে বিদ্যালয়ের দিকে ধেয়ে এসেছে যমুনা। ইতিমধ্যে বিদ্যালয়ের খেলার মাঠ গিলে খেয়েছে এ নদী। এখন পাকা ভবনও হুমকির মুখে। আগে থেকে ভাঙন ঠেকানোর উদ্যোগ না নেওয়ায় এবার বর্ষা আসতে না আসতেই যমুনার ভাঙন বিদ্যালয় মাঠে এসে ঠেকেছে। আর কয়েক হাত ভাঙলেই বিদ্যালয়ের দুই কক্ষবিশিষ্ট শ্রেণিকক্ষ ভবন যমুনায় বিলীন হবে।
চালুয়াবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম বাদশা বলেন, কয়েক দফা ভাঙাগড়ার পর ১৯৮৮ সালের বন্যায় বিদ্যালয় ভবন ভেঙে পড়লে নদী থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে শিমুলতাইড় চরে সরিয়ে নেওয়া হয়। শিমুলতাইড় চরে প্রায় তিন হাজার মানুষের বসবাস ছিল। ছিল নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়, ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র। যমুনার ভাঙনে তিন বছরে প্রায় বিলীন চরটি।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের একটি তথ্য বলছে, উপজেলায় ১৬৮টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৪৪টির অবস্থান যমুনার তীরবর্তী চরাঞ্চলে। যমুনার ভাঙনে ১০ বছরে বিলীন হয়েছে উপজেলার ৩০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন। এতে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে কমপক্ষে আট কোটি টাকা।