বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান তেদরোস আধানোম গেব্রেয়াসুস আজ এ ঘোষণা দিয়েছেন | ছবি: রয়টার্স

বিবিসি: করোনাভাইরাসের কারণে জারি করা বৈশ্বিক জরুরি অবস্থা প্রত্যাহার করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।  শুক্রবার ডব্লিউএইচওর প্রধান তেদরোস আধানোম গেব্রেয়াসুস এ ঘোষণা দিয়েছেন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এ ঘোষণাকে করোনা মহামারি শেষ হওয়ার পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। ভাইরাসটি নিয়ে ডব্লিউএইচও তাদের সর্বোচ্চ পর্যায়ের সতর্কতা জারির তিন বছরের মাথায় এসে এ ঘোষণা দিল।

সংস্থাটির কর্মকর্তারা বলছেন, ২০২১ সালের জানুয়ারিতে করোনায় মৃত্যু সর্বোচ্চ পর্যায়ে ওঠে। সে সময় বিশ্বে প্রতি সপ্তাহে গড়ে এক লাখের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়। তবে গত ২৪ এপ্রিলে শেষ হওয়া সপ্তাহে মৃত্যু হয় ৩ হাজার ৫০০ জনের কিছু বেশি।

ডব্লিউএইচওর প্রধান বলেন, করোনা মহামারিতে বিশ্বে অন্তত ৭০ লাখ মানুষের প্রাণহানি হয়েছে। তবে মহামারিতে মৃত্যুর প্রকৃত সংখ্যাটা দুই কোটির কাছাকাছি হবে বলেই মনে করেন তিনি। তিনি আরও বলেন, করোনাভাইরাস এখনো উল্লেখযোগ্য একটি ঝুঁকি হিসেবে রয়ে গেছে।

তেদরোস আধানোম গেব্রেয়াসুস বলেন, ‘গতকাল (বৃহস্পতিবার) ডব্লিউএইচওর ইমার্জেন্সি কমিটি ১৫তম বৈঠকে বসেছিল। বৈঠকে আমাকে আন্তর্জাতিক পরিসরে উদ্বেগের জায়গা থেকে জনস্বাস্থ্য জরুরি পরিস্থিতি সমাপ্তির ঘোষণা দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। আমি তাদের সেই পরামর্শ মেনে নিই। সে কারণে আশাবাদের সঙ্গে আমি ঘোষণা করছি যে একটি বৈশ্বিক স্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা হিসেবে কোভিড–১৯–এর ইতি ঘটেছে।’

তবে একই সঙ্গে সতর্ক করে ডব্লিউএইচওর মহাপরিচালক বলেছেন, সর্বোচ্চ পর্যায়ের সতর্কতা তুলে নেওয়ার মানে এই নয় যে বিপদ কেটে গেছে। পরিস্থিতি বদলে গেলে আবার জরুরি অবস্থা জারি করা হতে পারে।

এই ঘোষণার ফলে কোনো দেশ যদি করোনাভাইরাস মোকাবিলায় গৃহীত সুরক্ষামূলক পদক্ষেপ থেকে সরে আসে, এই ভাইরাস মোকাবিলায় গড়ে তোলা ব্যবস্থা ভেঙে ফেলে বা দেশের মানুষের কাছে এই বার্তা দেয় যে করোনাভাইরাস নিয়ে চিন্তার আর কিছু নেই, তাহলে সবচেয়ে খারাপ ঘটনাটি ঘটবে বলে সতর্ক করেছেন তেদরোস আধানম গেব্রেয়াসুস।

করোনাভাইরাস প্রথম শনাক্ত হয় চীনে, ২০১৯ সালের শেষ দিকে। এরপর ২০২০ সালের জানুয়ারিতে ভাইরাসটিকে জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি বিবেচনায় বৈশ্বিক জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে ডব্লিউএইচও।

এই মহামারি মোকাবিলার ক্ষেত্রে করোনার টিকা মোড় ঘুরিয়ে দেওয়ার মতো ভূমিকা রেখেছে। টিকা নেওয়ার কারণে ভাইরাসটিতে সংক্রমিত হয়ে মৃত্যু ও গুরুতর অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকি থেকে সুরক্ষিত হয়েছেন কোটি কোটি মানুষ।

তবে অনেক দেশে যেসব ব্যক্তির টিকা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন, তাঁরা এখনো বাকি রয়েছেন।

ডব্লিউএইচওর স্বাস্থ্যগত জরুরি পরিস্থিতি কর্মসূচির নির্বাহী পরিচালক মাইক রায়ান বলেছেন, জরুরি অবস্থা হয়তো শেষ হয়েছে। কিন্তু ঝুঁকি এখনো রয়ে গেছে। তিনি বলেন, ‘আমরা এখনো মনে করছি, ভাইরাসটি সংক্রমণ ছড়াতেই থাকবে। এটাই মহামারির ইতিহাস।’