ওয়াশিংটন ডিসির রিজ-কার্লটন হোটেলে প্রবাসী বাংলাদেশিদের দেওয়া নাগরিক সংবর্ধনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা | ছবি: বাসস

বাসস, ওয়াশিংটন ডিসি: স্বাধীনতাবিরোধী, খুনি ও অগ্নিসন্ত্রাসীরা যাতে আর কখনোই ক্ষমতায় ফিরতে না পারে, সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসির রিজ-কার্লটন হোটেলের হলরুমে গতকাল মঙ্গলবার প্রবাসী বাংলাদেশিদের দেওয়া এক নাগরিক সংবর্ধনায় শেখ হাসিনা এই আহ্বান জানান।

শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট বর্তমান সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে ২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত তথাকথিত আন্দোলনের নামে বহু মানুষকে পুড়িয়ে মেরেছে। রাস্তার পাশের হাজার হাজার গাছ উজাড় করেছে। এই চক্র দেশকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গিয়েছিল। সেখানে আওয়ামী লীগ সরকার গত ১৪ বছরে দেশের সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। দেশকে উন্নয়নের মহাসড়কে তুলেছে।বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হবে। তাঁরা এই স্বপ্ন বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেন, তাঁরা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়েছেন। বিএনপি-জামায়াত জোট ডিজিটাল বাংলাদেশের সুবিধা ব্যবহার করে তাঁদেরই বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। এসব অপপ্রচারে কান না দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

লাখো মানুষের রক্তের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীনতা পেয়েছে, এ কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, সবাইকে মাথা উঁচু করে যথাযথ মর্যাদার সঙ্গে বিশ্বে চলতে হবে।

বাংলাদেশের সামগ্রিক আর্থসামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিতে বর্তমান সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, সরকার অবকাঠামো, স্বাস্থ্যসেবা, বাসস্থান, শিক্ষা ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ প্রতিটি খাতের উন্নয়ন নিশ্চিত করেছে।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে বলেই আমরা এটা করতে পেরেছি।’

শেখ হাসিনা আরও বলেন, আওয়ামী লীগ একটি গণমুখী দল। জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য দলটি গঠিত হয়েছে। আওয়ামী লীগ সব সময়ই জনগণের কল্যাণে কাজ করে। আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় আসে, তখনই জনগণের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়। আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় আসে, তখনই দেশের উন্নয়ন হয়। তাঁরা বাংলাদেশকে একটি উন্নয়নশীল দেশে পরিণত করেছেন। দেশকে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে তাঁরা বদ্ধপরিকর।

দেশের উন্নয়নে প্রবাসীদের অবদানের কথা উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা। হুন্ডির পরিবর্তে বৈধ মাধ্যমে দেশে রেমিট্যান্স পাঠানোর আহ্বান জানান তিনি। কারণ, সরকার যথাযথ প্রক্রিয়ায় রেমিট্যান্স পাঠানোকে উৎসাহিত করতে ২ দশমিক ৫ শতাংশ প্রণোদনা ঘোষণা করেছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, করোনা মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক সংকটের পরও সরকারের সময়োপযোগী পদক্ষেপের কারণে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখা সম্ভব হয়েছে। চলমান যুদ্ধের কারণে উন্নতসহ অনেক দেশ সংকটে পড়লেও বহু দেশের তুলনায় বাংলাদেশের অবস্থা এখনো ভালো। বাংলাদেশ যাতে কোনো সংকটে না পড়ে সে জন্য খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে দেশবাসীর প্রতি আবার আহ্বান জানান তিনি।

দেশে দারিদ্র্যের হার ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ ও অতিদারিদ্র্যের হার ৫ দশমিক ৬ শতাংশে নামিয়ে আনার কথা উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, দেশে কোনো চরম দারিদ্র্য থাকবে না। দেশে কেউ গৃহহীন থাকবে না। কারণ, সরকার প্রতিটি গৃহহীন লোককে বিনা মূল্যে আবাসন প্রকল্পের আওতায় আনতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এ লক্ষ্যে আরও ৬০ হাজার ঘর তৈরি হচ্ছে।

নাগরিক সংবর্ধনা মঞ্চে অন্যদের মধ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন উপস্থিত ছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন।