রোববার ১৪ মে সব পৌরসভায় ই-পেমেন্ট চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

নাজনীন আখতার: জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধনের জন্য ফি পরিশোধে ই-পেমেন্ট চালু হয়েছে। নতুন আবেদন ও সংশোধনের জন্য অনলাইনে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে এ ফি দেওয়া যাবে। তবে সরেজমিনে দেখা যায়, ই-পেমেন্ট করতে গিয়ে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছেন কোনো কোনো আবেদনকারী।

রেজিস্ট্রার জেনারেল, জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন কার্যালয় থেকে জানা গেছে, গত ৪ এপ্রিল মেহেরপুর জেলার মেহেরপুর পৌরসভা এবং সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার মাধাইনগর ইউনিয়ন পরিষদে প্রথমবার পাইলট আকারে ই-পেমেন্ট শুরু হয়। পরে টাঙ্গাইল সদর উপজেলার পোড়াবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদ, সিলেট সিটি করপোরেশন ও ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডে ই-পেমেন্ট চালু হয়। ২৬ এপ্রিল ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের দুটি অঞ্চলে (৩ ও ৫) ই–পেমেন্ট চালু হয়। পরে দেশের অন্যান্য সিটি করপোরেশনেও এটি চালুর নির্দেশনা দেওয়া হয়। এদিকে আজ রোববার সব পৌরসভায় ই-পেমেন্ট চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। দেশে মোট ১২টি সিটি করপোরেশন ও ৩২৮টি পৌরসভা (কার্যকর) রয়েছে।

ই-পেমেন্টে সমস্যা দেখা দেয়
আজ রাজধানীর কারওয়ান বাজারে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের অঞ্চল-৫–এ গিয়ে দেখা যায়, সেখানে নতুন আবেদনের ক্ষেত্রে ই-পেমেন্ট নেওয়া হলেও সংশোধনের ক্ষেত্রে আগের মতো নগদ অর্থ নেওয়া হচ্ছে। জাশুয়া হক (৩৯) নামের এক ব্যক্তি ২ মে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের অঞ্চল-৫–এ জন্মনিবন্ধনে নাম সংশোধনের আবেদন করেছিলেন। তাঁর নাম বাংলায় ‘জসিম হক’ লেখা হয়েছে। তবে আবেদন করতে গিয়ে তিনি সংশোধনের জন্য ৫০ টাকা ‘ই–পেমেন্ট’ করতে পারছিলেন না। ই-পেমেন্টের ঘরে ক্লিক করলে তাঁর মুঠোফোন নম্বরটি সঠিক নয় বলে জানানো হয় এবং লিংকে গিয়ে মুঠোফোন নম্বর পরিবর্তন করতে বলা হয়। মুঠোফোন নম্বর পরিবর্তন করতে নির্ধারিত লিংকে ক্লিক করলে তাঁর জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর চাওয়া হয়। তবে তাঁর জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকায় তিনি মুঠোফোন নম্বরও পরিবর্তন করতে পারছিলেন না এবং টাকাও পরিশোধ করতে পারছিলেন না। বেশ কয়েক দিন অঞ্চল-৫ কার্যালয়ে ঘোরাঘুরি করলেও নিবন্ধনসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা কোনো সমাধান তাঁকে দিতে পারেননি। পরে আজ অঞ্চল-৫ থেকে ফোন করে নগদ অর্থ দিয়ে আবেদন জমা দিতে বলা হয়। জাশুয়া হকের হয়ে আজ এক ব্যক্তি (নাম প্রকাশ করতে চাননি) ৫০ টাকা পরিশোধ করে আবেদন জমা দেন। ওই ব্যক্তি  জানান, তিনি এই কয় দিনে অনেক ব্যক্তিকে পেয়েছেন, যাঁরা ই-পেমেন্ট করতে না পেরে ঘোরাঘুরি করছেন।

জানা গেছে, ই-পেমেন্ট করতে অসুবিধা দেখা দেওয়ায় গত বৃহস্পতিবার সেখানে জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধনের আবেদন নেওয়া ও সংশোধন বন্ধ ছিল।

অঞ্চল-৫–এর সহকারী স্বাস্থ্য কর্মকর্তা এস এম ওয়াসিমুল ইসলাম বলেন, নতুন আবেদনের ক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে না। ২০২১ সালের আগে যাঁদের জন্মনিবন্ধন, তাঁদের যেকোনো সংশোধনের ক্ষেত্রে সমস্যাটি দেখা দিয়েছে। এ কারণে সংশোধনের জন্য নগদ অর্থ নেওয়া হয়েছে। তবে সমস্যাটির সমাধানের জন্য জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর চাওয়ার ব্যবস্থাটি তুলে দিয়েছে রেজিস্ট্রার জেনারেল, জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন কার্যালয়। এখন থেকে ই-পেমেন্টে সমস্যা হবে না বলে আশা করা যায়। তাঁর মতে, এই পদক্ষেপের কারণে দালালদের মাধ্যমে অতিরিক্ত টাকা দিয়ে নিবন্ধন করা বন্ধ হবে।

আবেদন জমা নেওয়ার লাইনে গিয়ে দেখা যায়, গুলশান থেকে সাধন কুমার নামের এক ব্যক্তি এসেছেন তাঁর সহকর্মীর বাংলা নাম সংশোধনের জন্য। তিনি বলেন, তিনিও নগদ অর্থ দিয়ে সংশোধনের জন্য আবেদন করেছেন। ই-পেমেন্ট করতে পারেননি।

তবে মোহাম্মদপুর থেকে আসা মো. বাচ্চু মিয়া নামের আরেক ব্যক্তি জানান, তিনি তাঁর ৯ বছরের সন্তানের জন্মনিবন্ধনের জন্য নতুন আবেদন জমা দিয়েছেন। এলাকার যে দোকান থেকে আবেদন করেছেন, সেখান থেকেই ই-পেমেন্ট করে দিয়েছে। ভ্যাট, ফটোকপিসহ তাঁর কাছ থেকে ৭০ টাকা নেওয়া হয়েছে।

ওই কার্যালয়ে আজ জন্মনিবন্ধনের ৫০টি নতুন আবেদন ও ১২টি সংশোধনের আবেদন নেওয়া হয়েছে। মৃত্যুনিবন্ধনের কোনো আবেদন আসেনি।

‘যখন যে সমস্যা আসছে, সমাধান করা হচ্ছে’
ই-পেমেন্ট প্রসঙ্গে রেজিস্ট্রার জেনারেল, জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন মো. রাশেদুল হাসান বলেন, জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন এবং সংশোধনের ফি ই-পেমেন্ট পাইলট আকারে করাই হয়েছে কী কী সমস্যা উঠে আসে, তা দেখার জন্য। যখন যে সমস্যা আসছে, সেগুলো সমাধান করা হচ্ছে। আজ সব পৌরসভায় ই-পেমেন্ট শুরুর জন্য নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে। সেসব জায়গা থেকেও কী কী সমস্যা আসে, তা দেখা হবে। কোনো সমস্যা না পেলে ধাপে ধাপে ইউনিয়ন পরিষদে এটি শুরু হতে পারে। অনেক বেশি সমস্যা এলে সেগুলো সামলানোর জন্য লোকবল আছে কি না, তা দেখে অগ্রসর হতে হবে। 

ই-পেমেন্ট করার সময় ‘মুঠোফোন নম্বর ভুল’ উল্লেখ করে বার্তা আসার বিষয়ে রেজিস্ট্রার জেনারেল জানান, এসব ক্ষেত্রে দেখা গেছে, আবেদনকারী হয়তো অন্য কারও বা উদ্যোক্তার মুঠোফোন নম্বর দিয়ে জন্মনিবন্ধনের আবেদন করেছিলেন। যিনি আবেদন করেছিলেন, তাঁর হাতে এখন ওই মুঠোফোন নম্বরটি নেই। ফলে সংশোধনের জন্য ক্লিক করলে ওই নম্বরে ওটিপি (ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড) পাঠালে কোনো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। এ সমস্যা দেখা দেওয়ায় মুঠোফোন নম্বর সংশোধন করার জন্য ক্লিক করলে জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর চাওয়ার বাধ্যবাধকতা তুলে দেওয়া হয়েছে। এর পরিবর্তে বৃহস্পতিবার থেকে জন্মনিবন্ধন নম্বর চাওয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

মুঠোফোন নম্বর সংশোধন করার জন্য ক্লিক করলে জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর চাওয়ার বাধ্যবাধকতা তুলে দেওয়া হয়েছে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন