পাবনার ঈশ্বরদীতে অত্যাধিক তাপমাত্রার কারণে গাছে লিচু ফেটে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এতে লিচুর ফলন কম হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সম্প্রতি ঈশ্বরদী উপজেলার জয়নগর এলাকায় | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
প্রতিনিধি ঈশ্বরদী: চলতি মৌসুমে লিচুর ফুল ছিল ৬০ শতাংশ। বৈরী আবহাওয়ায় ফুল থেকে গুটি হতেই কিছু ঝরে গেছে। বাগানে এরপরও যে লিচু আছে, তা বিক্রি করে লাভের আশা করছিলেন চাষিরা। কেবল মোজাফ্ফর জাতের দেশি লিচু বাজারে দিতে শুরু করেছেন তাঁরা। সপ্তাহ খানেকের মধ্যে বাজারজাত করার কথা সুস্বাদু বোম্বাই লিচু। এমন সময়ে তীব্র তাপপ্রবাহে গাছেই ফেটে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে ফল। এ কারণে চলতি মৌসুমে আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন দেশের অন্যতম লিচু উৎপাদনকারী এলাকা পাবনার ঈশ্বরদীর চাষিরা।
ঈশ্বরদী আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, প্রায় প্রতিদিন বেলা ১১টার পর থেকে তাপমাত্রা ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস অতিক্রম করছে। দুপুরের পর তাপমাত্রা উঠছে ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি পর্যন্ত। এর আগে তাপমাত্রা ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস অতিক্রম করেছিল।
কৃষি বিভাগ ও স্থানীয় চাষিদের ভাষ্য, মৌসুমের শুরু থেকে দিনে প্রচণ্ড দাবদাহ ও রাতে ঠান্ডা আবহাওয়া ছিল। এতে লিচুর ফলন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অন্যদিকে বৃষ্টি না হওয়ায় ফুল থেকে গুটি বের হওয়ার সময় কিছু ঝরে গেছে। এর পর থেকে চলছে টানা তাপপ্রবাহ। ফলে পাকার আগেই গাছে লিচু ফেটে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে থাকলে লিচুর জন্য ক্ষতিকর বলে জানিয়েছেন ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মিতা সরকার। তিনি বলেন, ‘চলতি মৌসুমে অতিরিক্ত তাপমাত্রা ছিল। অন্যদিকে বৃষ্টিপাত কম হয়েছে। এ কারণে লিচুর ক্ষতি হয়েছে। তবে লিচু ফাটা রোধে কোনো ওষুধ স্প্রে করা যাবে না। আমরা চাষিদের লিচু গাছে পানি স্প্রে করার পরামর্শ দিচ্ছি। এতে লিচু ফাটা কিছুটা রোধ হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলার ৯ উপজেলায় এবার ৪ হাজার ৭১১ হেক্টর জমিতে লিচুর আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে শুধু ঈশ্বরদীতেই লিচু চাষ হয়েছে ৩ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে। জেলায় লিচু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ৩১ হাজার মেট্রিক টন। তবে এবার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা যাবে না বলে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
পাবনা-পাকশী সড়ক দিয়ে ঈশ্বরদী উপজেলায় ঢুকতেই দুই দিকে যত দূর চোখ যায় লিচুর বাগান। বৃহস্পতিবার সকালে ওই এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, টুকটুকে লাল লিচুতে রঙিন হতে শুরু করেছে বাগানগুলো। দূর থেকে দৃশ্যটি সুন্দর লাগলেও কাছে গেলে দেখা যাচ্ছে অন্য চিত্র। পাকার আগেই গাছে গাছে থোকায় থোকায় লিচু ফেটে আছে।
চাষিরা জানিয়েছেন, এবার মৌসুমের শুরু থেকে তাঁরা লিচু নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন। এমনিতেই লিচুর মুকুল ছিল অর্ধেক। এখন বৈরী আবহাওয়ায় তাঁরা ক্ষতির মুখে পড়েছেন। লিচু আকারেও ছোট হয়েছে, রোদের তীব্রতায় কালো হয়ে ফেটেও যাচ্ছে। এ কারণে পুরোপুরি পাকার আগেই অনেকে লিচু পেড়ে বাজারজাত করছেন। বর্তমান ঈশ্বরদীর বাজারে মোজাফ্ফর জাতের ১০০ দেশি লিচু ৩০০–৩৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
গত বছর বাগানের যেসব গাছে ১২ থেকে ১৫ হাজার পর্যন্ত লিচু পেয়েছিলেন, এবার সেসব গাছে ৭ থেকে ৮ হাজারের বেশি লিচু মিলছে না বলে জানিয়েছেন উপজেলার সলিমপুর গ্রামের লিচুচাষি ডাবলু মোল্লা। তিনি বলেন, ইতিমধ্যে তাঁরা দেশি লিচু বাজারজাত শুরু করেছেন। সপ্তাহ খানেকের মধ্যে বোম্বাই লিচু বাজারজাতের উপযোগী হবে। এর মধ্যে লিচু ফেটে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বলে তাঁরা দুশ্চিন্তায় আছেন।
| ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
জয়নগর শিমুলতলা বাজার থেকে পাইকারি লিচু কিনে ঢাকায় সরবরাহ করেন ব্যবসায়ী সোহেল হোসেন। তিনি বলেন, লিচুর সঙ্গে শুধু চাষি নয়, বহু ব্যবসায়ীর ভাগ্য জড়িত আছে। অনেকে ফুল থেকে কুঁড়ি বের হওয়ার সময় লিচুর বাগান কিনেছেন। এখন শেষ সময়ে এসে লিচু ফেটে নষ্ট হওয়ায় তাঁরাও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। চাহিদা অনুযায়ী লিচু সরবরাহ ব্যাহত হলে দামেও এর প্রভাব পড়বে।