‘শান্তিপূর্ণ ও টেকসই ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল প্রতিষ্ঠার অপ্রাতিষ্ঠানিক নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা’ শীর্ষক অধিবেশনে বক্তারা | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
নিজস্ব প্রতিবেদক: ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে বেশ কিছু নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ আছে। চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা না গেলে বাণিজ্যের পাশাপাশি শান্তি ও স্থিতিশীলতা নষ্ট হবে। তাই এ অঞ্চলের দেশগুলোর সমন্বিত ও সহযোগিতামূলক পদক্ষেপ প্রয়োজন।
ষষ্ঠ ভারত মহাসাগরীয় সম্মেলনের এক অধিবেশনে বক্তারা এসব কথা বলেন। শুক্রবার রাজধানীর একটি হোটেলে শুরু দুই দিনব্যাপী এই সম্মেলনের আয়োজক ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশন। সহযোগিতা করছে বাংলাদেশ ও ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
সম্মেলনের প্রথম দিনের চতুর্থ অধিবেশনের বক্তাদের আলোচনায় এসব প্রসঙ্গ উঠে আসে। এই অধিবেশনের আলোচ্য বিষয় ছিল ‘শান্তিপূর্ণ ও টেকসই ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল প্রতিষ্ঠার অপ্রাতিষ্ঠানিক নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা’। মূলত সামরিক নয় এমন উৎস থেকে যেসব সংকট তৈরি হয় সেগুলোকেই বলা হচ্ছে ‘অপ্রাতিষ্ঠানিক নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ’।
এ অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব ওয়ার্ল্ড অ্যাফেয়ার্সের মহাপরিচালক বিজয় ঠাকুর সিং। এতে আলোচক ছিলেন রাশিয়ার দ্য ইনস্টিটিউট অব ওয়ার্ল্ড ইকোনমি অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল রিলেশনসের সেন্টার ফর ইন্দো-প্যাসিফিক রিজিয়নের প্রধান অ্যালেক্সি কুপ্রিয়ানভ, ডালবার্গ গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট অ্যাডভাইজারের গ্লোবাল ক্লাইমেট প্র্যাকটিসবিষয়ক প্রিন্সিপাল ও কো-লিড জগজিৎ সরেন এবং সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য ওয়াসেকা আয়েশা খান।
বক্তারা বলেন, বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে সব পক্ষের জন্য মুক্ত ও উদার ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করা জরুরি। এটা বাস্তবায়ন করা না গেলে ভবিষ্যতে বাণিজ্যের পাশাপাশি এই অঞ্চলের শান্তি ও স্থিতিশীলতা নষ্ট হতে পারে।
অধিবেশনের শুরুতে বিজয় ঠাকুর সিং বলেন, এই অঞ্চলে মানব পাচার, চোরাচালান, জলবায়ু পরিবর্তন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, সমুদ্র সম্পদের ক্ষতিসাধন, সমুদ্রপথে নিরাপদে যোগাযোগ ও সাইবার নিরাপত্তার মতো বেশ কিছু বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এ অঞ্চলের দেশগুলোর সহযোগিতামূলক ও সমন্বিত পদক্ষেপ প্রয়োজন।
জলবায়ু পরিবর্তন এই অঞ্চলের অন্যতম প্রধান সমস্যা উল্লেখ করে বিজয় ঠাকুর সিং বলেন, এর কারণে এ অঞ্চলের বিপুলসংখ্যক মানুষ বাস্তুচ্যুত হচ্ছেন। এ ছাড়া বৈশ্বিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের জন্য সমুদ্রপথ বেশ গুরুত্বপূর্ণ। তাই এই পথটি সবার জন্য উন্মুক্ত ও নিরাপদ রাখাও একটা চ্যালেঞ্জ।
জলবায়ু পরিবর্তনের মতো অভিন্ন বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের দেশগুলোকে একযোগে কাজ করার পরামর্শ দেন অ্যালেক্সি কুপ্রিয়ানভ। তিনি বলেন, তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে সব দেশেই ফসল উৎপাদনে প্রভাব পড়ছে। তাই সবাইকে বিষয়টিতে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করতে হবে।
কুপ্রিয়ানভ আরও বলেন, পরিবেশ সুরক্ষায় সৌরবিদ্যুতের ধারণা কোনো সর্বজনীন সমাধান নয়। বরং সবার জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিতে পারমাণবিক বিদ্যুৎ বেশি উপযোগী হতে পারে।
জগজিৎ সরেন বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন এখন ভূ-অর্থনৈতিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে এ অঞ্চলের দেশগুলোর অর্থনীতি, বিশেষ করে কৃষি খাত সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ জন্য জলবায়ু উপযোগী অর্থনীতি বা ‘ক্লাইমেট স্মার্ট ইকোনমি’ চালুর পরামর্শ দেন তিনি।
সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য ওয়াসেকা আয়েশা খান জানান, ভূ-অবস্থানগত কারণে বাংলাদেশ অনেকগুলো নিরাপত্তা ঝুঁকিতে রয়েছে। রোহিঙ্গাদের জোর করে এ দেশে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। মাদক, অবৈধ অস্ত্র, মানব পাচার, চোরাচালান ইত্যাদি নানা অপরাধে যুক্ত হচ্ছে তারা। ফলে তারা বাংলাদেশের জন্য এখন বড় সমস্যায় পরিণত হয়েছে।
পরিবেশ সুরক্ষা বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ওয়াসেকা আয়েশা খান বলেন, ‘আমাদের দেশে সবচেয়ে বেশি সংখ্যায় পরিবেশবান্ধব কারখানা (গ্রিন ফ্যাক্টরি) রয়েছে। কিন্তু ক্রেতারা কি এ জন্য পণ্যের দাম এক সেন্টও বাড়িয়ে দিচ্ছেন?