গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে স্বর্ণালংঙ্কারসহ দুই লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া দুই ব্যক্তি | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রতিনিধি গাইবান্ধা: গভীর রাত। হঠাৎ কৃষক আবদুল আলিমের (৪৫) কাছে দরবেশ পরিচয়ে ফোন। ফোন ধরতেই অপর পাশ থেকে মধুর কণ্ঠে ভেসে এল, ‘বাবা তোর ভাগ্যে বহু ধনরত্ন দেখা যাচ্ছে। তুই বড় ভাগ্যবান। তুই ছোটবেলা থেকে অনেক পরিশ্রম করছিস। সাত রাজার ধন তোর প্রাপ্য। আল্লাহর নির্দেশে সাত শ জিন সেই ধন পাহারা দিচ্ছে। এই ধনসম্পদ যদি পাইতে চাস, তাহলে তোকে মসজিদে কোরআন শরিফ, জায়নামাজ, টুপি দান করতে হবে।’ এসব কেনার কথা বলে বিকাশে ৩০ হাজার টাকা নিয়েও নেওয়া হয়। এরপর গুপ্ত ধনসম্পদের কথা বলে আরও প্রায় দুই লাখ টাকা মূল্যের সোনার গয়না হাতিয়ে নেয় একটি প্রতারক চক্র। সেই প্রতারক চক্রের দুই সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

শুক্রবার দুপুরে গোবিন্দগঞ্জ থানা চত্বরে এক প্রেস বিফ্রিংয়ে গাইবান্ধার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ইবনে মিজান এসব তথ্য তুলে ধরেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন গাইবান্ধার জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার উদয় কুমার সাহা, গোবিন্দগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইজার উদ্দিন, পরিদর্শক (তদন্ত) বুলবুল ইসলাম, উপপরিদর্শক সুজন কবির ও রাশেদুল ইসলাম।

প্রেস বিফ্রিংয়ে উল্লেখ করা হয়, প্রতারক চক্রের সদস্যরা চলতি মে মাসের প্রথম দিকের কোনো এক দিন বগুড়া জেলার শাহজাহানপুর উপজেলার কাছাহারপাড়া রুপিহার গ্রামের কৃষক আবদুল আলিমের (৪৫) কাছে ফোন করে। তারা নিজেদের দরবেশ পরিচয় দেয়। চক্রের সদস্যরা সাত রাজার ধন পেতে মাটির খালি পাতিলে সাতটি চাল রেখে সাদা কাপড়ে মুড়িয়ে ঘরের গোপন জায়গায় রাখতে বলে। ২৪ ঘণ্টা পর ওই পাতিলে ৭ রাজার ধন পাওয়া যাবে বলে প্রলোভন দেখানো হয়। এদিকে ধনসম্পদ পেতে গেলে বিনিময়ে স্বর্ণালংকার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার ফুলবাড়ী ইউনিয়নের ফুটানি বাজার এলাকার বৈদ্যুতিক খুঁটির নিচে রুমালে বেধে রেখে আসতে বলা হয়।

ধনসম্পদ পেতে আবদুল আলিম ৭ মে প্রায় দুই লাখ টাকা মূল্যের স্বর্ণালংকার ওই বৈদ্যুতিক খুঁটির নিচে রেখে আসেন। পরদিন সকালে আবদুল আলিম নিজের ঘরে রাখা মাটির পাতিল খুলে দেখেন, সাতটি চাল ছাড়া পাতিলে কিছুই নেই।

এ ঘটনায় আবদুল আলিম বৃহস্পতিবার সকালে গোবিন্দগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। পরে গাইবান্ধার পুলিশ সুপার মো. কামাল হোসেনের নির্দেশে প্রযুক্তির ব্যবহার ও বিকাশ নম্বরের সুত্র ধরে অভিযান চালায় পুলিশ। আজ ভোরে প্রতারক চক্রের দুই সক্রিয় সদস্যকে স্বর্ণালংকারসহ গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার মথুরাপুর গ্রামের দুলু মিয়ার ছেলে মোর্শেদুল ইসলাম (৩২) এবং পাশের মালাধার কালীপাড়া গ্রামের রেজবর আলীর ছেলে জাহিদুল ইসলাম (৫০)। তাঁদের কাছ থেকে সোনার চুড়ি, কানের দুল, নগদ আট হাজার টাকা ও প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত তিনটি মুঠোফোন জব্দ করা হয়। এ ঘটনায় গোবিন্দগঞ্জ থানায় মামলা হয়েছে। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত প্রতারক চক্রের অপর সদস্যদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত আছে।