দ্বিতীয় দিনের মতো নওগাঁ-বগুড়া-ঢাকা রুটে বাস চলাচল বন্ধ, ভোগান্তি

নওগাঁ শহরের ঢাকা বাসস্ট্যান্ডে অধিকাংশ পরিবহনের বাস কাউন্টারগুলো বন্ধ আছে। বৃহস্পতিবার সকালে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন 

প্রতিনিধি নওগাঁ: নতুন বাস নামানোকে কেন্দ্র করে দুই জেলার বাসমালিকদের দ্বন্দ্বে দ্বিতীয় দিনের মতো নওগাঁ-বগুড়া রুটে সব ধরনের বাস চলাচল বন্ধ আছে। কোনো ঘোষণা ছাড়াই বুধবার সকাল থেকে এ রুটে সরাসরি বাস চলাচল বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছেন যাত্রীরা।

নওগাঁ ও বগুড়া বাস মালিক গ্রুপ সূত্রে জানা গেছে, নওগাঁ বাস মালিক গ্রুপের নওগাঁ-ঢাকা ও নওগাঁ-চট্টগ্রাম রুটে বরেন্দ্র এক্সপ্রেস নামের নতুন তিনটি শীতাতপনিয়ন্ত্রিত (এসি) বাস নামানোকে কেন্দ্র করে নওগাঁ ও বগুড়া জেলা বাস মালিক গ্রুপের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। এ দ্বন্দ্বের জেরে নওগাঁ জেলার বাসমালিকদের আন্তজেলা ও দূরপাল্লার সব ধরনের বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছেন বগুড়ার বাসমালিকেরা। এর প্রতিবাদে নওগাঁর বাসমালিকেরাও নওগাঁ-বগুড়া রুটে সব ধরনের বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছেন। এতে বগুড়ার বাসমালিকদের বাস নওগাঁর পরিবর্তে বগুড়ার সান্তাহার পর্যন্ত চলাচল করছে। অন্যদিকে নওগাঁ এবং দেশের অন্যান্য জেলার বাসমালিকদের কিছু বাস বগুড়ার পরিবর্তে নাটোর হয়ে ঢাকা ও চট্টগ্রাম রুটে চলাচল করছে।

এদিকে দুই জেলার মালিকদের দ্বন্দ্বে নওগাঁ-বগুড়া রুটে বাস চলাচল বন্ধ থাকায় দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা। ছোট ছোট যানে কেউ কেউ চার কিলোমিটার দূরে বগুড়ার সান্তাহার গিয়ে বাস ধরছেন। আবার অতিরিক্ত পথ অতিক্রম করে ভাঙাচোরা নওগাঁ-নাটোর রুট হয়ে দূরের গন্তব্যে যাত্রা করছেন অনেক যাত্রী।

আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে নওগাঁ শহরের পার-নওগাঁ এলাকায় ঢাকা বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে দেখা যায়, হানিফ, একতা, বরেন্দ্র এক্সপ্রেসসহ ১০ থেকে ১২টি পরিবহনের বাস কাউন্টার ছাড়া অধিকাংশ পরিবহনের বাস কাউন্টারগুলো বন্ধ আছে। তবে বাসস্ট্যান্ডে খুব বেশি বাস না থাকলেও সেখানে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও ইজিবাইক দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। বাসস্ট্যান্ডে বাস না পেয়ে অনেক যাত্রী অটোরিকশা কিংবা ইজিবাইকে করে বগুড়ার সান্তাহারে যাচ্ছেন।

স্কুলশিক্ষক আবু কালাম আজাদ বলেন, ‘ঢাকায় শিক্ষা অফিসে জরুরি একটা কাজ আছে। আজকেই ঢাকা যেতে হবে। কিন্তু তড়িঘড়ি করে বাসস্ট্যান্ডে এসে দেখি অধিকাংশ পরিবহনের বাস এখান থেকে চলছে না। যে কয়েকটি পরিবহনের বাস কাউন্টার খোলা আছে, সেগুলোতে খোঁজ নিয়ে টিকিট পেলাম না। এখান বাস না পেয়ে সান্তাহারে গিয়ে ট্রেনের টিকিট পেলে ট্রেনে যাব। তা না হলে সান্তাহার থেকে অন্য কোনো বাসে ঢাকায় পৌঁছাতে হবে।’

এসপি পরিবহনের কাউন্টারের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন ফরিদুল করিম নামের চট্টগ্রামগামী এক যাত্রী। কোথায় যাবেন জানতে চাইলে অনেক ক্ষুব্ধ হয়ে ফরিদুল করিম বলেন, ‘আরে ভাই, আর যাওয়া। তিন দিন আগে চট্টগ্রাম যাওয়ার জন্য এসপি পরিবহনের বাসের টিকিট কাটছিলাম। আজকে বাস ছাড়ার আগে এসে দেখি কাউন্টার বন্ধ। এখান থেকে চার কিলোমিটার দূরে সান্তাহার গিয়ে নাকি এখন বাসে উঠতে হবে। বাসমালিকদের দ্বন্দ্বে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে আমাদের। অথচ তারা টাকা ঠিকই নিচ্ছে।’

বাস চলাচল বন্ধের বিষয়ে জানতে চাইলে নওগাঁ জেলা বাস মালিক গ্রুপের সভাপতি শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘বগুড়ার বাসমালিকদের অত্যাচারে আমরা অতিষ্ঠ। তাঁদের জেলার ওপর দিয়ে আমাদের যেতে হয় বলে তাঁদের অনেক অন্যায় আবদার আমাদের মেনে চলতে হয়। ঈদের আগে বরেন্দ্র এক্সপ্রেস পরিবহন নামে নওগাঁ জেলা বাস মালিক গ্রুপের তিনটি এসি বাস নওগাঁ-ঢাকা ও নওগাঁ-চট্টগ্রাম রুটে আমরা ছাড়ি। কিন্তু মঙ্গলবার হঠাৎ বগুড়ার বাসমালিকদের লোকজন আমাদের বাস আটকে দেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বগুড়া বাসমালিকেরা আমাদের বলেন, নওগাঁ-ঢাকা ও নওগাঁ-চট্টগ্রাম রুটে নতুন কোনো এসি বাস তাঁরা চলাচল করতে দেবেন না। এর প্রতিবাদে আমরাও নওগাঁ থেকে বগুড়ার মালিকদের বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছি। এ বিষয়ে একটা সুষ্ঠু সমাধান না হওয়া পর্যন্ত নওগাঁ-বগুড়া রুটে সরাসরি বাস চলাচল বন্ধ থাকবে।’

জেলা প্রশাসক খালিদ মেহেদী হাসান বলেন, ‘নওগাঁ-বগুড়া রুটে সরাসরি বাস চলাচল বন্ধের বিষয়টি জানার পর আমরা বাসমালিকদের সঙ্গে কথা বলেছি। এ সমস্যার একটা সুষ্ঠু সমাধানের জন্য প্রশাসন চেষ্টা করছে। আশা করছি, খুব শিগগির আবার বাস চলাচল শুরু হবে।’