জ্যাজ সংগীত পরিবেশন করছেন এক শিল্পী | ছবি: সংগৃহীত

রিয়াদ ইসলাম: দাসত্বের শৃঙ্খলের নিচে যাদের শত শত বছরের সংগীত ও সংস্কৃতির ঐতিহ্য চাপা পড়ে গিয়েছিল, সেসব কৃষ্ণাঙ্গ ও তাঁদের সন্তানেরা উনিশ শতকের শেষ ভাগে এসে জড়ো হলেন নিউ অরলিন্সের রাস্তায়। তাঁরা নতুন এক সংগীতধারার জন্ম দিলেন, যাকে কেবলই নিজেদের বলতে পারেন। যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে কৃষ্ণাঙ্গদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ল এ সংগীতধারা, যাকে আমরা জ্যাজ বলে জানি।

এরও প্রায় অর্ধশতক পর ফ্র্যাঙ্ক সিনাত্রা নামের শতভাগ ইতালীয় এক গায়ক শ্বেতাঙ্গদের জড়িয়ে ফেললেন জ্যাজের জালে। নিজের সম্পূর্ণ শ্বেতাঙ্গবাদক দল নিয়ে তিনি গাইলেন এবং সর্বকালের সেরা জ্যাজশিল্পীদের একজন হয়ে উঠলেন নিজ গুণেই। কিন্তু এই সংগীতধারার সঙ্গে ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক কোনো সম্পর্ক ছিল না তাঁর। গায়কির ধাঁচ আর বাদনে তিনি যুক্ত করেছিলেন পশ্চিমা অনেক অনুষঙ্গ। আর ব্যাপক সমাদর পেয়েছিলেন শ্বেতাঙ্গ শ্রোতাদের কাছে।

ফ্র্যাঙ্ক সিনাত্রা, ১৯৪৩ | ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের সংগীত–ইতিহাসে এমন ঘটনা অহরহই চোখে পড়ে। কৃষ্ণাঙ্গদের ঢঙে গান গেয়ে শ্বেতাঙ্গ শিল্পীরা বিলবোর্ডের শীর্ষ শতকে রাজত্ব করে গেছেন। কৃষ্ণাঙ্গ শিল্পীরা নিজ গোষ্ঠীতে পরিচিতি পেলেও বৃহত্তর শ্রোতৃসমাজের কাছে অচ্ছুত রয়ে গেছেন। আর তাই ‘রক অ্যান্ড রোল’–এর রাজা কেন এলভিস প্রিসলি, চাক বেরি নন—এসব প্রশ্ন ঘুরপাক খেতে থাকে।

কৃষ্ণাঙ্গদের ইতিহাস ও সংস্কৃতি সম্পর্কে না জেনেই তাঁদের সংগীতধারাকে শ্বেতাঙ্গ শ্রোতার কানের উপযোগী করে উপস্থাপন ও জনপ্রিয় করে তোলার এই ঐতিহ্য বেশ পুরোনোই। আর প্রবণতাকে তাত্ত্বিকেরা বলছেন ‘জেন্ট্রিফিকেশন’, বাংলায় যাকে বলা চলে ‘মৃদূকরণ’। ১৯৬৪ সালে ব্রিটিশ সমাজবিদ রুথ গ্লাস এই তত্ত্বের জন্ম দেন। নিজের বই ‘লন্ডন: আসপেক্টস অব চেঞ্জ’–এ গ্লাস লেখেন, ‘এক এক করে, লন্ডনের নিম্নবিত্তদের বাড়িগুলোর দখল নিচ্ছে উচ্চ ও নিম্নমধ্যবিত্তরা…কোন জেলায় এই ‘মৃদূকরণ’ প্রক্রিয়া একবার শুরু হলে মূল বাসিন্দাদের (নিম্নবিত্ত) উৎখাত এবং গোটা জেলার সামাজিক চরিত্র আমূল না পাল্টানো পর্যন্ত থামে না।’ ব্রিটিশ অভিজাত শ্রেণিকে বলা হয় ‘জেন্ট্রি’ আর সেখান থেকেই ‘জেন্ট্রিফিকেশন’ শব্দটি ধার করেন গ্লাস।

এবার আসা যাক ‘মিউজিক্যাল জেন্ট্রিফিকেশন’ বা ‘সাংগীতিক মৃদূকরণ’ প্রসঙ্গে। সহজ করে বললে, সামাজিকভাবে নিচুশ্রেণির মানুষের সংগীতচর্চা ও ঐতিহ্য যখন তাঁদের থেকে সামাজিকভাবে তুলনামূলকভাবে উঁচু বা ক্ষমতাধরেরা দখল করে নেন, তখন তাকে বলে ‘সাংগীতিক মৃদূকরণ’।

বিভিন্ন ম্যাগাজিনে এলভিস প্রিসলি | ছবি: সংগৃহীত