টাঙ্গুয়ার হাওরে পর্যটকবাহী হাউসবোট চলাচল, নানা অভিযোগ

টাঙ্গুয়ার হাওরে পর্যটকবাহী হাউসবোট | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রতিনিধি সুনামগঞ্জ: টাঙ্গুয়ার হাওরে নিয়ন্ত্রণহীনভাবে চলছে পর্যটকবাহী হাউসবোট। তরুণ-তরুণীরাই এ হাউসবোটগুলোর প্রধান গ্রাহক। এ ছাড়া হাউসবোটগুলোতে মাদক সহজলভ্য হওয়ায় বিশেষ শ্রেণির পর্যটকের কাছে এসব হাউসবোটে ঘুরে বেড়ানোর আগ্রহ বেড়েছে। এসব কারণে প্যাকেজের নামে অস্বাভাবিক ভাড়া ধার্য করেন হাউসবোটের মালিক ও ট্যুর অপারেটররা। ফলে ইচ্ছা থাকলেও হাউসবোটে হাওর ঘুরে দেখার আগ্রহ হারান প্রকৃত পর্যটকরা।

হাওরে স্টিলবডি নৌকায় ভাড়া নির্ধারণে প্রশাসনের নীতিমালা থাকলেও হাউসবোটের নীতিমালা নেই। স্টিলবডি নৌকায় দিনের মধ্যে ঘুরে এলে আট হাজার টাকা ও রাতযাপনে দ্বিগুণ নেওয়া হয়। কিন্তু কাঠের তৈরি হাউসবোটে ভাড়া নির্ধারণে কোনো নীতিমালা নেই। এ জন্য হাওরে আসা পর্যটকরা ভোক্তা অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

জানা গেছে, বেশিরভাগ হাউসবোটের মালিক হাওরপাড়ের বাসিন্দা নন। বহিরাগত মালিকরা বিলাসবহুল হাউসবোট তৈরি করে প্যাকেজ ট্যুর পরিচালনা অথবা ট্যুর অপারেটরদের কাছে ভাড়া দেন। ট্যুর অপারেটররা অনলাইনে বিজ্ঞাপন দেন। এ জন্য পর্যটকদের কাছে আলাদা প্যাকেজ অফার করেন এবং পর্যটক সংগ্রহ করেন। এগুলো দিন দিন জনপ্রিয় হওয়ায় হাওরে হাউসবোটের উপস্থিতিও ক্রমেই বাড়ছে। কয়েক বছর ধরে টাঙ্গুয়ার হাওরে ৬০টির মতো হাউসবোট থাকলেও নতুন করে প্রায় ২০০ হাউসবোট তৈরির কাজ চলছে।

টাঙ্গুয়ার হাওরপাড়ের আনন্দনগর গ্রামের বাসিন্দা নজির হোসেন বলেন, একটি হাউসবোট প্রতি প্যাকেজে অন্তত ২০ জন ট্যুরিস্ট নিয়ে টাঙ্গুয়ার হাওরে ভ্রমণে আসে। এতে জনপ্রতি সাড়ে ছয় হাজার টাকা করে খরচ নেয়। ২০ জনের কাছ থেকে টাকা আদায় করে অন্তত ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা। এর মধ্যে পর্যটকদের সারাদিনে পাঁচবার খাওয়াতে খরচ হয় জনপ্রতি এক হাজার টাকা। নৌকা ভাড়াসহ খরচ হয় ৩০ হাজার টাকা। কিন্তু প্রশাসনিকভাবে কোনো নিয়ন্ত্রণ না থাকায় ট্যুর অপারেটররা প্রতি যাত্রায় অস্বাভাবিক মুনাফা করে থাকেন। পর্যটন মৌসুম ও টানা সরকারি ছুটি থাকলে পর্যটকের থেকে ইচ্ছামতো ভাড়া আদায় করা হয়।

পর্যটক গাইড সোহানুর রহমান সোহাগ বলেন, স্থানীয় নৌকাগুলো যেভাবে ভাড়া ও চলাচলে প্রশাসনের নীতিমালা অনুসরণ করে, সেভাবে হাউসবোটগুলোও নিয়ন্ত্রণে আনা জরুরি।

রতনশ্রী গ্রামের শওকত হাসান বলেন, হাউসবোট প্রচলন হওয়ার আগে টাঙ্গুয়ার হাওরে একসঙ্গে স্বামী-স্ত্রী ছাড়া কাউকে ঘুরতে আসতে দেখা যেত না। প্রশাসনের কোনো নিয়ন্ত্রণ না থাকায় হাউসবোটে হাওরাঞ্চলে বেড়াতে আসার নামে তরুণ-তরুণীরা একান্তে সময় কাটাতে আসেন। এ ছাড়া এগুলো মাদকসেবীদেরও আখড়া হয়ে উঠেছে। এমন কোনো হাউসবোট নেই যেখানে মাদক পাওয়া যাবে না।

সুনামগঞ্জ জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ কার্যালয়ের সহকারী উপপরিচালক আল আমিন বলেন, পর্যটকের টাঙ্গুয়ার হাওর ভ্রমণে নৌকা অথবা হাউসবোটের ভাড়া নির্ধারণ করবে স্থানীয় প্রশাসন। সে ক্ষেত্রে প্রশাসনের নির্ধারিত ভাড়ার অতিরিক্ত নিয়ে থাকলে তা ভোক্তা অধিকারের আওতায় এনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ইউএনও সুপ্রভাত চাকমা বলেন, অনেকেই তাঁর কাছে এসব বিষয়ে অভিযোগ দিয়েছেন। হাউসবোটগুলোর ভাড়া নির্ধারণ ও চলাচল নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য শিগগিরই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।