আটক | প্রতীকী ছবি

প্রতিনিধি পাবনা: মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান নগদের পরিবেশক মামুনুর রহমানের অধীনে কাজ করতেন ইমরান শেখ (২৪) ও তুহিন হোসেন (২৭)। মামুনুর রহমানের টাকা বিভিন্ন এজেন্ট ও সাব–এজেন্টদের কাছে পৌঁছে দিতেন তাঁরাই। এর মধ্যে সম্প্রতি তাঁরা মামুনুর রহমানের টাকা নিজেরাই ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করেন। এ জন্য ভাড়া করেন কয়েকজন ছিনতাইকারী। পরিকল্পনা অনুযায়ী সেই ছিনতাইকারীরা দিনেদুপুরে অস্ত্রের মুখে ছিনিয়ে নেয় ৫ লাখ ৭০ হাজার টাকা।

গত ১৪ মার্চ ঘটনাটি ঘটে পাবনা জেলা সদরের আতাইকুলার মাধপুর এলাকায়। ঘটনা জানার পর ছিনতাইকারীদের খুঁজতে মাঠে নামে পুলিশ। এরপর জেলা পুলিশের একটি বিশেষ দল কয়েক দিনের তদন্ত ও তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে চক্রটিকে শনাক্ত করেছে। সোমবার রাতে পরিকল্পনাকারী দুই কর্মীসহ আটজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাঁদের গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে ছিনতাইয়ের পেছনের ঘটনা। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের কাছ থেকে একটি পিস্তল, দুটি গুলি ও ছিনতাইয়ের কাজে ব্যবহার করা দুটি মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়।

মঙ্গলবার পাবনা পুলিশ সুপার আকবর আলী মুন্সী নিজ কার্যালয়ের সামনে সংবাদ সম্মেলন করে এসব তথ্য জানান। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা টাকা ছিনাইয়ের কথা স্বীকার করেছেন বলে দাবি করেছেন পুলিশ সুপার।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন জেলা সদরের হিমাইতপুর ইউনিয়নের পাককিয়া গ্রামের মোশারফ হোসেনের ছেলে ইমরান শেখ (২৪), বড় দিকশাইল স্কুলপাড়া গ্রামের তুহিন হোসেন (২৭) এবং ছিনতাই চক্রের সদস্য জেলা সদরের চক পৈলানপুর মহল্লার আহম্মদ উল্লাহর ছেলে শিস ইসলাম (২২), শালগাড়িয়া মহল্লার মো. বানির ছেলে ইয়াছিন আলী (২১), শালগাড়িয়া নিকারীপাড়া মহল্লার আবদুল বারেকের ছেলে রায়হান হোসেন (২১), ইব্রাহীম আলী মুন্সির ছেলে ইমন হোসেন (২৪), রজব আলীর ছেলে তানভীর হোসেন (২১) ও শালগাড়িয়া উত্তর খাপাড়া মহল্লার মাসুম হোসেনের ছেলে রনি হোসেন (২২)।

সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার বলেন, গত ১৪ মার্চ ছিনতাইয়ের ঘটনাটি ঘটার পর মামুনুর রহমান বিষয়টি পুলিশকে জানান। মামুনুর রহমানের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ওই দিন তাঁর দুই কর্মী ইয়াকুব ইসলাম ও তুহিন হোসেন শহরের মার্কেন্টাইল ব্যাংক থেকে ৫ লাখ ৭০ হাজার টাকা নিয়ে আতাইকুলার দিকে যাচ্ছিলেন। পথে দুপুর পৌনে ১২টার দিকে দুটি মোটরসাইকেলে একদল মুখোশধারী ছিনতাইকারী অস্ত্রের মুখে টাকাগুলো ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায়। বিষয়টি জানার পর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মাসুদ আলমের নেতৃত্বে একটি দল গঠন করা হয়। দলটি রাস্তার সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে ও তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার করে চক্রটির কয়েক সদস্যকে শনাক্ত করে। পরে তাঁদের তথ্য অনুযায়ী ছিনতাইয়ের পরিকল্পনাকারী ও সরাসরি ছিনতাইয়ের সঙ্গে যুক্ত আট সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাসুদ আলম বলেন, প্রথমে ইমরান ও তুহিন ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করেন। এ জন্য তাঁরা সহযোগিতা নেন ছিনতাই দলের প্রধান শিস ইসলামের। এরপর তিনজন মিলে ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করেন। ঘটনার দিন পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী তুহিন তাঁর সহকর্মী ইয়াকুবকে সঙ্গে নিয়ে ব্যাংক থেকে টাকা তুলতে যান। তবে ইয়াকুব এই পরিকল্পনার ব্যাপারে জানতেন না। এদিকে ইমরান দূর থেকে যাবতীয় তথ্য ছিনতাইকারী চক্রকে অবগত করছিলেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী তুহিন ও ইয়াকুব টাকা তুলে বের হওয়ার কিছু সময় পর দুটি মোটরসাইকেলে ছয়জন ছিনতাইকারী অস্ত্রের মুখে ৫ লাখ ৭০ হাজার টাকা ছিনিয়ে পালিয়ে যায়।

পুলিশ সুপার আকবর আলী মুন্সী বলেন, গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ছিনতাই ও অস্ত্র আইনে মামলা করা হয়েছে। এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আজ বিকেলে তাঁদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হবে।