নিজস্ব প্রতিবেদক: নির্বাচনের দিন সাংবাদিকেরা সংবাদ সংগ্রহের ক্ষেত্রে কী করতে পারবেন বা পারবেন না, তা নিয়ে নির্বাচন কমিশনের প্রকাশিত নীতিমালা সুষ্ঠু নির্বাচনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে বলে মনে করছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

টিআইবি বলেছে, নীতিমালায় যেসব ধারা যুক্ত করা হয়েছে, তা গণমাধ্যমকর্মীদের আজ্ঞাবহ সাংবাদিকতায় বাধ্য করার অপচেষ্টা।

আজ বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, নির্বাচন কমিশন বিভিন্ন সময় গণমাধ্যমকে সুষ্ঠু নির্বাচনের ‘চোখ ও কান’ বলে অভিহিত করেছে। সম্প্রতি জারি করা পরিপত্রে এটাই প্রমাণিত হয়েছে, প্রতিষ্ঠানটি শুধু নিজেদের জনপ্রিয় ও গ্রহণযোগ্য করতে এ জাতীয় মুখরোচক মন্তব্য করেছে। মূলত সাংবাদিকদের কার্যক্রম তারা ‘শেকলবদ্ধ’ করে তুলছে।

গতকাল বুধবার ওই নীতিমালা প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন। সেখানে বলা হয়, নির্বাচনের দিন সাংবাদিক ও গণমাধ্যমকর্মীরা মোটরসাইকেল ব্যবহার করতে পারবেন না। ভোটকক্ষের ভেতর থেকে বা ভোট গণনার সময় সরাসরি সম্প্রচার করা যাবে না। নিষেধাজ্ঞা থাকবে ফেসবুক লাইভেও। জাতীয় সংসদ, সিটি করপোরেশন, জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন এবং যেকোনো উপনির্বাচনে এ নীতিমালা প্রযোজ্য হবে।

এই নীতিমালার সমালোচনা করে টিআইবি বলছে, মোটরসাইকেল স্থানীয় পর্যায়ে সংবাদকর্মীদের দায়িত্ব পালনের একটি অপরিহার্য বাহন। এ ছাড়া প্রত্যন্ত অঞ্চলে অনেক কেন্দ্র আছে, যেখানে গাড়ি বা অন্য কোনো যানবাহনে পৌঁছানো সম্ভব নয়। স্থানীয় পর্যায়ে গাড়ি ভাড়া করাও অনেকের পক্ষে সম্ভব নয়। এমন পরিস্থিতিতে নির্বাচনের দিন গণমাধ্যমকর্মীদের মোটরসাইকেল ব্যবহার নিষিদ্ধ করা দুরভিসন্ধিমূলক।

ইফতেখারুজ্জামান প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘১০ মিনিটের বেশি সংবাদকর্মীদের ভোটকক্ষে অবস্থান করতে না পারার যে ধারা রাখা হয়েছে, এর যৌক্তিকতা কী? নির্বাচন কমিশন চিহ্নিত “গোপন বুথের ডাকাতদের” রক্ষায় এই নিয়মের আমদানি কি না—তা স্পষ্ট হওয়া জরুরি।’

এ নীতিমালা বাতিলের দাবি জানিয়ে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, নির্বাচন কমিশন সংবাদকর্মীদের ভোট কাভারেজের (সংবাদ সংগ্রহ) অনুমতি দেওয়ার পর তাঁদের ভোটকক্ষে ঢুকতে কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তার বাড়তি অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা কী, বোধগম্য নয়। তা ছাড়া, বর্তমান প্রেক্ষাপটে যদি কোনো ভোটকক্ষে অনিয়ম হয়, সে ক্ষেত্রে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা কী অনুমতি দেবেন? আর অনুমতি না দিলে নির্বাচনী অনিয়মের ছবি তোলা ও তথ্য সংগ্রহ কী ধরনের বাধার সৃষ্টি হবে, তা নীতিমালা তৈরিতে কমিশনের বিচার্য ছিল বলে বোধগম্য হচ্ছে না।

এ ছাড়া কোন বিবেচনায় ভোটকক্ষ থেকে সরাসরি সম্প্রচার নিষিদ্ধ করা হলো তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে টিআইবি। এর মাধ্যমে কী ধরনের বৈশ্বিক চর্চা নির্বাচন কমিশন অনুকরণের চেষ্টা করছে, সেটিকে কৌতূহলোদ্দীপক বলছে টিআইবি। সংস্থা মনে করছে, নির্বাচন কাভারেজ নিয়ে কমিশনের বিধিনিষেধের তালিকা যত দীর্ঘ হচ্ছে, দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা এবং গণতন্ত্র ততটাই দুর্বল ও ক্ষয়িষ্ণু হয়ে পড়ছে।