নিজস্ব প্রতিবেদক: সপ্তম শ্রেণির ‘শিল্প ও সংস্কৃতি’ বইয়ের পৃষ্ঠা-৯–এ থাকা গানটির নবম লাইনটি নেই। এখন সংশোধনীতে সেই লাইন ‘একটু সাদা দিলে’ যুক্ত করা হচ্ছে। সংশোধিত লাইনটি বইয়ের ‘ফিকে হবে সব গাঢ় রং’–এর পর যুক্ত হবে।

এ রকমভাবে নতুন শিক্ষাক্রমের আলোকে তৈরি ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির সব কটি বইয়ের ভুল-অসংগতিগুলোর সংশোধনী পাঠাতে যাচ্ছে এনসিটিবি। ইতিমধ্যে সংশোধনীর খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে। এখন সেটি চূড়ান্ত করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় সংশোধনীগুলোর ‘সফট কপি’ মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মাধ্যমে পাঠানোর পরিকল্পনা করছে এনসিটিবি।

এনসিটিবি সূত্র মতে, সংশোধনী চূড়ান্ত হলে সেগুলোর সফট কপি প্রধান শিক্ষকদের কাছে পাঠানো হবে। আসন্ন পবিত্র ঈদের পর তা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে পাঠানো সম্ভব হবে। প্রধান শিক্ষকেরা সংশোধনীগুলো  বিষয়ভিত্তিক শ্রেণিশিক্ষকের কাছে দিয়ে শ্রেণিকক্ষে পাঠাবেন। তখন শ্রেণিশিক্ষক সংশোধনী অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের বইগুলো সংশোধন করার নির্দেশনা দেবেন।

এনসিটিবির চেয়ারম্যান মো. ফরহাদুল ইসলাম  বলেন, এখন সংশোধনীর কাজ চলছে। শেষ হলেই তা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে পাঠানো হবে।

গত ১ জানুয়ারি থেকে প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম শুরু হয়েছে। পর্যায়ক্রমে আগামী বছর থেকে অন্যান্য শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম শুরু হবে। নতুন শিক্ষাক্রমে পাঠ্যবই বদলে যাচ্ছে। যদিও বিতর্কের মুখে গত ১০ ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির জন্য প্রণীত ‘ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুসন্ধানী পাঠ’ পাঠ্যপুস্তক দুটি প্রত্যাহার করে নেয় এনসিটিবি।

তখন এনসিটিবি জানিয়েছিল, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির ‘ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুশীলনী পাঠ’ এবং ষষ্ঠ শ্রেণির ‘বিজ্ঞান অনুসন্ধানী পাঠ’ বইয়েরও কিছু অধ্যায় সংশোধন করা হবে। কিন্তু পরে সিদ্ধান্ত হয়, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির সব কটি বইয়েরই ভুল-অসংগতিগুলোর সংশোধনী দেওয়া হবে। যদিও শিক্ষাবর্ষের সাড়ে তিন মাস হতে চললেও কাজটি শেষ করতে পারেনি এনসিটিবি।

এনসিটিবির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এবার মূলত বানান ও তথ্যগত ভুলগুলো সংশোধন করা হচ্ছে। তবে আগামী বছরের ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির বই পরিমার্জনে বেশ কিছু পরিবর্তন আনা হবে।

যেসব সংশোধনী আসছে
ষষ্ঠ শ্রেণির বাংলা বইয়ে অন্তত চারটি পৃষ্ঠায় বানানসংক্রান্ত সংশোধনী আনা হচ্ছে। যেমন পৃষ্ঠা–৬–এর এক জায়গায় আছে ‘তুই, “তোরা” তোকে’। সংশোধন অনুযায়ী এটি হবে ‘তুই, “তোর” তোকে’। ৭১ পৃষ্ঠায় বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের বাবার নাম লেখা হয়েছে জহীর মোহাম্মদ আবু আলী সাবের। সংশোধন অনুযায়ী এটি হবে ‘জহীরুদ্দিন মোহাম্মদ আবু আলী হায়দার সাবের’। পৃষ্ঠা ১১৫–তে লেখা আছে ‘হুড়াহুড়ি’, যা হবে ‘কোলাহল’।

ষষ্ঠ শ্রেণির ‘বিজ্ঞান অনুসন্ধানী পাঠ’ বইয়ে অন্তত সাতটি পৃষ্ঠায় সংশোধন করা হচ্ছে। যেমন বইটির পৃষ্ঠা-২০–এর এক জায়গায় বলা আছে, ‘নাইট্রোজেন গ্যাস আগুন নেভানোর কাজে ব্যবহার করা হয়’। এই ভুলটি সংশোধন করে করা হচ্ছে ‘কার্বন ডাই–অক্সাইড গ্যাস আগুন নেভানোর কাজে ব্যবহার করা হয়’। আবার একই বইয়ের ১৪৮ পৃষ্ঠার শেষ লাইনে আছে, এক মাধ্যম থেকে অন্য মাধ্যমে যাওয়ার সময় আলো ঠিক একইভাবে বিপরীত দিকে ‘প্রতিসরিত’ হয়। সংশোধনী হলো ‘প্রতিফলিত’।

ষষ্ঠ শ্রেণির ‘শিল্প ও সংস্কৃতি’ বইয়ে অন্তত পাঁচটি পৃষ্ঠায় ছয়টি বানান সংশোধন করার জন্য খসড়া করা হয়েছে। ষষ্ঠ শ্রেণির ডিজিটাল প্রযুক্তি বইয়ের ৮১, ৮২, ৮৩, ৮৪, ৯৮, ৯৯ ও ১০০ পৃষ্ঠায় থাকা বাংলাদেশের মানচিত্রে ময়মনসিংহ বিভাগটি বাদ পড়েছে। এখন সংশোধনীতে মানচিত্রে ময়মনসিংহ বিভাগটি সঠিক স্থানে বিবেচনা করতে বলা হচ্ছে। গণিত বইয়েও আসছে কিছু সংশোধনী।

সপ্তম শ্রেণির বাংলা বইয়ে সংশোধনী অনেক
সপ্তম শ্রেণির বাংলা বইয়ে অন্তত ২২টি পৃষ্ঠায় কিছু সংশোধনী আনার জন্য খসড়া করেছে এনসিটিবি। যেমন ১৪৫ পৃষ্ঠায় ১ ও ২ নম্বর লাইনে আছে ‘মোরা জানি না কো রাজা রাজ-আইন, মোরা পারি না শাসন-উদূখল!’ সংশোধনীতে এটি বাদ দেওয়া হচ্ছে।

‘ডিজিটাল প্রযুক্তি’ বইয়ের ৯৭ পৃষ্ঠার এক জায়গায় আছে, ‘১৫ আগস্ট ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নৌবহরে একসঙ্গে আক্রমণ করেন মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর-১০-এর নৌ-কমান্ডোরা। তারা কিন্তু একসঙ্গে আক্রমণ করেছিলেন সেই সময় আকাশবাণীতে প্রচার হওয়া একটি গান।’  

সংশোধনীতে এটি হবে ‘সেই সময়ে “আকাশবাণী” নামক একটি রেডিও স্টেশনে প্রচার হওয়া একটি গান শুনে মুক্তিযুদ্ধের নৌ-কমান্ডোরা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নৌবহরে একসঙ্গে আক্রমণ করেন।’

সপ্তম শ্রেণির শিল্প ও সংস্কৃতি বইয়ে অন্তত ১৭টি পৃষ্ঠায় সংশোধনী আসছে। সপ্তম শ্রেণির ‘বিজ্ঞান অনুসন্ধানী পাঠ’ বইয়েও অন্তত চারটি পৃষ্ঠায় সংশোধনী আনার জন্য খসড়া করা হয়েছে। যেমন ১১০ পৃষ্ঠায় গ্লুকোজের সংকেতে কিছু সংশোধন করা হচ্ছে।

এভাবে ষষ্ঠ এবং সপ্তম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে সংশোধনী আনার জন্য খসড়া করেছে এনসিটিবি।