রাজশাহী সিটির ওয়ার্ড পরিক্রমা: উন্নয়নকাজ বাড়িয়েছে ভোগান্তি

আগে এই খাল দিয়ে পদ্মা নদীর পানি প্রবাহিত হতো। এখন সেটি নালায় পরিণত হয়েছে। গত মঙ্গলবার রাজশাহী নগরের মোহনপুর এলাকায় | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রতিনিধি রাজশাহী: চৌদ্দপায় ফায়ার সার্ভিস মোড়ের পাশের খাল দিয়ে দক্ষিণ থেকে উত্তর দিক দিয়ে একসময় পদ্মার পানির প্রবাহ থাকত। পদ্মা নদী থেকে পানি উত্তর দিকে প্রবাহিত হয়ে সোজা গিয়ে পড়ত পবা উপজেলার ফলিয়ার বিলে। এতে পানি জমে থাকত না। কিন্তু বর্তমানে পানির প্রবাহ নেই বললেই চলে। খাল হয়ে গেছে ছোট নালা।

এ সম্পর্কে রাজশাহী নগরের মোহনপুর এলাকার বাসিন্দা রহিদুল ইসলাম বলেন, এই নালায় কোমর সমান কাদা। কাদা পরিষ্কার করা হয় না। এ কারণে পানির প্রবাহ বন্ধ। এলাকার মানুষ মশার অত্যাচারে অতিষ্ঠ। এবার মশার ওষুধও ছিটাতে দেখা যায়নি।

এই এলাকা রাজশাহী সিটি করপোরেশনের ৩০ নম্বর ওয়ার্ডে। আয়তনের দিক দিয়ে এটাই সবচেয়ে বড় ওয়ার্ড। এখানে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, ধান, গম, আখ, ফলসহ বিভিন্ন গবেষণা ইনস্টিটিউট অবস্থিত। ১৫ হাজার ১৯৮ ভোটারের এই ওয়ার্ডে সর্বত্র চলছে উন্নয়নকাজ। কয়েক বছর ধরে বাড়ছে মশারও উৎপাত। চলতি বছর তা সহ্যের সীমা ছাড়িয়েছে। নির্বাচন কমিশনের তফসিল অনুযায়ী, আগামী ২১ জুন রাজশাহী সিটিতে নির্বাচন। এই ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে প্রার্থী হওয়ার তোড়জোড় করছেন অনেকেই। অনেকে সাঁটিয়েছেন পোস্টার।

৩০ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কের বেশির ভাগ অংশ পড়েছে। নগরের বিনোদপুর থেকে কাটাখালী পৌরসভার আগ পর্যন্ত প্রায় দুই বছর থেকে কাজ চলছে। নানা জটিলতায় কাজ শেষ করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। এই রাস্তাগুলো ভোগান্তিতে পরিণত হয়েছে। নগরের চৌদ্দপায় বিহাস থেকে একটি বাইপাস রাস্তা চলে গেছে নগরের শাহ মখদুম থানাধীন ‘আলিম লাম মিম’ ভাটা এলাকায়। বাইপাসের এই রাস্তার একটা বড় অংশও পড়েছে এই ওয়ার্ডে। এই রাস্তার ফলে এই এলাকায় জমির দাম হুহু করে বেড়েছে। তবে গত বছরে উন্নয়নকাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। নগরের চৌদ্দপায় ফায়ার সার্ভিসের দক্ষিণ পাশে পদ্মা নদী পর্যন্ত একটি নালার কাজ চলছে।

এর কাজ উত্তর অংশেও চলবে। এই নালা দিয়ে একসময় পদ্মার পানি বারনই নদীতে গিয়ে পড়ত। এখন এটি সংস্কারের অভাবে পানিপ্রবাহ বিভিন্ন জায়গায় বন্ধ হয়ে আছে।

নালাটি সংস্কারের কাজের পাশাপাশি পাশ দিয়ে একটি বড় সড়ক করা হচ্ছে। তবে নালার প্রস্থ খুব বেশি নয়। এ ছাড়া ওয়ার্ডে প্রায় প্রতিটি সড়কের পাশ দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে জলাবদ্ধতা নিরসনে নালা। সামনে বর্ষাকালে বোঝা যাবে জলাবদ্ধতা হয় কি না।

তফসিল অনুযায়ী ২৩ মে পর্যন্ত মনোনয়ন ফরম জমা দেওয়া যাবে। বাছাই ২৫ মে এবং ১ জুনের মধ্যে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করা যাবে। এই ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর শহিদুল ইসলাম (পিন্টু)। তিনি মতিহার থানা আওয়ামী লীগের সদস্য।

এবারও তিনি কাউন্সিলর পদে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচন করতে আগ্রাহী। একই থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দিন, সাবেক কাউন্সিলর ও জামায়াত নেতা আবদুস সামাদ, সাবেক ওয়ার্ড ছাত্রদলের সভাপতি ও বিএনপি কর্মী আবু সাদাত মো. সায়েম (মিলন) প্রার্থী হতে চাইছেন। এর মধ্যে মিলন ইতিমধ্যে ওয়ার্ডের বিভিন্ন জায়গায় ফেস্টুন সাঁটিয়েছেন। এর মধ্যে জামায়াত নেতা আবদুস সামাদ এক মাস ধরে কারাগারে আছেন।

স্থানীয় ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এই ওয়ার্ডের কাউন্সিল পদে দুই শক্তিশালী প্রার্থী জামায়াত নেতা আবদুস সামাদ ও বর্তমান কাউন্সিলর শহিদুল ইসলাম।

কারাগারে থাকায় তাঁর সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে আবদুস সালামের বাড়িতে গিয়ে কথা হয় তাঁর স্ত্রী হাফিজা খাতুনের সঙ্গে। তিনি বলেন, এই প্রহসনের নির্বাচন করে শুধু জানমালের ক্ষতি। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই তাঁকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। জনপ্রিয়তার কারণেই তাঁকে বারবার গ্রেপ্তার করা হয়। কারাগার থেকে বের হয়ে পরিবেশ–পরিস্থিতি দেখে নির্বাচনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।

অন্যদিকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী মো. আলাউদ্দিন বলেন, ‘আমি নির্বাচন করতে চাই। আশা করছি, মতিহার থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আমি দলীয় মনোনয়ন পাব।’

ওয়ার্ড ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও বিএনপি কর্মী আবু সাদাত মো. সায়েম বলেন, স্থানীয় ইমেজেই তিনি নির্বাচন করতে চান। তরুণেরাও তাঁকে চাইছেন। সবাই পরিবর্তন চাইছেন।