কৃষি বিভাগের পরামর্শে মনিরুল তাঁর জমিতে ছয়টি মৌবাক্স বসিয়েছেন  | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রতিনিধি রাজশাহী: এক মাসের মাথায় সব গাছে ফুল এসেছিল। কিন্তু সেই ফুল থেকে আর ফল হয়নি। রাজশাহীর চাষি মনিরুল ইসলাম এক হাজার তরমুজগাছ লাগিয়েছেন। এতে তাঁর খরচ হয়েছে প্রায় ৭০ হাজার টাকা। এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছিলেন মনিরুল।

পরে কৃষি বিভাগের পরামর্শে মনিরুল ২১ হাজার টাকায় ছয়টি মৌবাক্স কিনে এনে জমিতে বসান। কয়েক দিনের মধ্যেই মনিরুলের কাছে মনে হলো মৌবাক্সগুলো যেন জাদুর বাক্স। এগুলো বসানোর পরে একটি ফুলও নষ্ট হয়নি। ফুল আর ফলে তাঁর গাছ ভরে গেছে। মৌমাছির মাধ্যমে কৃত্রিম পরাগায়নে এই ফলন পেয়েছেন মনিরুল।

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার ধামিলা গ্রামে মনিরুলের বাড়ি। এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার পর মনিরুল আর পড়াশোনা করেননি। কৃষিকাজ শুরু করেছেন। তিনি গ্রামের ৫০ শতাংশ জমি ইজারা নিয়ে কৃষিকাজ করছেন। ২০২৯ সাল পর্যন্ত তাঁর ইজারার মেয়াদ আছে।

এই জমিতে তিনি এবার এক হাজার ‘ব্ল্যাক বেরি’ জাতের তরমুজগাছ লাগিয়েছেন। এই জাতের তরমুজ আকারে ছোট হয়। ওজন তিন থেকে চার কেজির মধ্যে থাকে। মাচাপদ্ধতিতে এই চাষ করতে তাঁর ৭০ হাজার টাকা খরচ হয়ে গেছে।

মনিরুল বলেন, হিসাব অনুযায়ী গাছে এক মাসের মাথায় ফুল আসার কথা। কিন্তু ফুল আসার কিছুদির পরই ঝরে যায়। ফলে পরিণত হয় না। এই সমস্যার কথা শুনে গোদাগাড়ী উপজেলার ঈশ্বরীপুর ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা অতনু সরকার তরমুজখেত দেখতে আসেন। পরে কৃষি কর্মকর্তা তাঁকে ছয়টি মৌবাক্স কিনে তরমুজখেতে রাখার পরামর্শ দেন। এই বাক্স রাখার পর থেকে আর ফুল নষ্ট হয়নি।

মৌবাক্স বসানোর পর একটি ফুলও নষ্ট হয়নি। ফুল আর ফলে সবগুলো গাছ ভরে গেছে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

বুধবার মনিরুলের জমিতে গিয়ে দেখা যায়, মনিরুল মৌবাক্সের পরিচর্যা করছেন। এর মধ্যে যেসব তরমুজ একটু বড় হয়েছে, সেটি সুতার জালে ভরে মাচার সঙ্গে বেঁধে দেওয়ার কাজ করছেন। মনিরুল জানালেন, বাক্স রাখার পর ২৮ দিন পার হয়েছে। এরই মধ্যে মাচা ভরে ছোট ছোট তরমুজ ঝুলছে। আর এক মাসের মধ্যে তরমুজগুলো ওঠানো যাবে।

মনিরুল ইসলাম হিসাব কষে বললেন, যদি গড়ে তাঁর একটি গাছে অন্তত তিন কেজি ওজনের দুটি করে তরমুজ ধরে, তাহলে এই জমি থেকে প্রায় এক লাখ টাকা মুনাফা হবে। এটা তাঁর তিন মাসের ফসল। মৌবাক্স রাখার পরে যে পরিমাণ তরমুজ টিকে আছে, তাতে মনে হচ্ছে প্রতিটি গাছে দুটির বেশি তরমুজ থাকবে।

জানতে চাইলে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা অতনু সরকার বলেন, মনিরুলের জমিতে গিয়ে তাঁর মনে হয়েছে প্রাকৃতিকভাবে যে পরাগায়ন হওয়ার কথা, সেটি হচ্ছে না। অন্যান্য ফসলের ক্ষেত্রে মৌমাছিকে কৃত্রিম পরাগায়নে ব্যবহার করে ভালো ফল পাওয়া গেছে। সেই অভিজ্ঞতা থেকে তিনি খেতের পাশে মৌবাক্স রাখার পরামর্শ দিয়েছিলেন। তাতেই কাজ হয়েছে। এখন গাছে গাছে এত ফল এসেছে। এগুলো থাকলে চাষিকে আর ফিরে তাকাতে হবে না।

এই পদ্ধতি বেশ লাভজনক উল্লেখ করে অতনু সরকার বলেন, এক মাস পরে যে সময় এই তরমুজ উঠবে, তখন বাজারে এই মৌসুমের তরমুজ শেষ হয়ে যাবে। আবার আম পাকাও শুরু হবে না। সেই সময় এই চাষি তরমুজের ভালো দাম পাবেন। এদিকে ওই চাষির মৌবাক্স কিনতে যে খরচ হয়েছে, তা মধু বিক্রি করেই পেয়ে যাবেন। প্রতি মাসে একটি বাক্স থেকে এক কেজি করে মধু পাবেন। আবাদ শেষে তাঁর বাক্সগুলো থেকে যাবে। অথবা বিক্রি করলে একই দামে বিক্রি করতে পারবেন।