দক্ষিণাঞ্চলগামী অনেক যাত্রীদের কেবিনের টিকিটের জন্য ঘোরাঘুরি করতে দেখা গেছে। আজ রোববার দুপুরে সদরঘাট টার্মিনালে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
প্রতিনিধি কেরানীগঞ্জ:পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে আগামী মঙ্গলবার থেকে ঢাকা নদীবন্দর সদরঘাট টার্মিনাল থেকে বিশেষ লঞ্চ চলাচল শুরু করবে। দক্ষিণাঞ্চলের ৪১টি রুটে চলাচলের জন্যে ইতিমধ্যে ১৮০টি লঞ্চ প্রস্তুত রয়েছে। তবে নদীপথে চলাচলকারী ৪১টি নৌরুটের শতাধিক লঞ্চের প্রায় সব কেবিনই বুকিং হয়ে গেছে বলে জানা গেছে।
বিআইডব্লিউটিএর নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের ঢাকা নদীবন্দর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৮ এপ্রিল থেকে বিশেষ লঞ্চ চলাচল সার্ভিস শুরু হয়ে সেটি চলবে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত। শতাধিক বেসরকারি লঞ্চের প্রায় ১০ হাজার প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির কেবিনের অগ্রিম টিকিট ইতিমধ্যে বুকিং হয়ে গেছে। এ ছাড়া ঈদকে সামনে রেখে টার্মিনাল এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা বাড়ানোর প্রস্তুতি চলছে।
আজ রোববার সরেজমিন দেখা গেছে, সদরঘাট টার্মিনালে দক্ষিণাঞ্চলগামী অনেক যাত্রী কেবিনের টিকিটের জন্য এক লঞ্চ থেকে আরেক লঞ্চে হন্যে হয়ে ঘুরছেন। রাজধানীর যাত্রাবাড়ি থেকে আসা আফজাল হোসেন বলেন, ‘২০ এপ্রিল পটুয়াখালী যাব। তাই সুন্দরবন লঞ্চের অগ্রিম টিকিট বুকিং দিতে এসেছি। কিন্তু লঞ্চের টিকিট কাউন্টার পুরো ফাঁকা। পরে লঞ্চের এক কর্মচারী জানাল সব টিকিট বুকিং শেষ। যাত্রীদের এভাবে হয়রানি করা উচিত নয়।’
রাজধানীর নতুন বাজার থেকে আসা রোজিনা বেগমও টিকিট না পেয়ে হতাশ। তিনি বলেন, ‘এই প্রচণ্ড গরমে রোজা রেখে টিকিট নিতে এসেছি। খুব কষ্ট হওয়া সত্ত্বেও আশা নিয়ে এসেছিলাম। কিন্তু টিকিট পেলাম না। মালিকপক্ষ নাকি টিকিট বুকিং নিয়েছে। তাই আফসোস নিয়ে বাসায় ফিরে যাচ্ছি।’
জানতে চাইলে মিক শিপিং লাইনসের টিকিট কাউন্টারের কর্মকর্তা মশিউর রহমান বলেন, ২০ এপ্রিল পর্যন্ত বরগুনা রুটে চলাচলকারী রাজারহাট, অথৈ, পূবালী ও শাহরুখ লঞ্চে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির কেবিনের টিকিট বুকিং হয়ে গেছে। ২১ এপ্রিল থেকে বিশেষ লঞ্চ সার্ভিসের ক্ষেত্রে নির্ধারিত সময়ের ‘আগে আসলে আগে পাবেন’ ভিত্তিতে টিকিট বিক্রি করা হবে।
বিআইডব্লিউটিএর নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের যুগ্ম পরিচালক কবির হোসেন বলেন, সুষ্ঠু ও নিরাপদ যাত্রীসেবা দেওয়ার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার থেকে ঢাকা নদীবন্দর সদরঘাট টার্মিনাল থেকে বিশেষ লঞ্চ চলাচল শুরু করবে। ইতিমধ্যে ১৮০টি লঞ্চ প্রস্তুত রয়েছে। তবে কোনো অবস্থাতেই লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী বহন করা যাবে না। যেসব লঞ্চ আইন ও নির্দেশনা অমান্য করবে, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল সংস্থার ঢাকা নদীবন্দরের আহ্বায়ক মামুন অর রশিদ বলেন, যাঁরা লঞ্চের নিয়মিত যাত্রী, তাঁরা আগে থেকে যোগাযোগ করে টিকিট বুকিং দিয়ে রাখেন। তবে পদ্মা সেতুর কারণে টার্মিনালে এবারের ঈদে আগের মতো যাত্রীদের চাপ পড়বে না বলে মনে করেন তিনি। তবে যাত্রী বহনের জন্য পর্যাপ্ত লঞ্চ প্রস্তুত রয়েছে।
এদিকে আজ দুপুরে সদরঘাট টার্মিনালের নিরাপত্তাব্যবস্থা পরিদর্শন করেছেন নৌ পুলিশের অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) শফিকুল ইসলাম। পরিদর্শন শেষে তিনি বলেন, যাত্রীদের নিরাপত্তায় ও যাত্রী হয়রানি রোধে সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। কারও বিরুদ্ধে যাত্রী হয়রানির অভিযোগের সত্যতা পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ছাড়া আগামীকাল সোমবার থেকে সদরঘাট এলাকায় নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হবে। বুড়িগঙ্গা নদী ও টার্মিনালের পন্টুন এলাকায় নৌ পুলিশের একাধিক দল টহল দিবে।