ঈদের দিনে পবিত্র আল-আকসা মসজিদে ফিলিস্তিনিদের জমায়েত | ফাইল ছবি: রয়টার্স |
আল-জাজিরা: পবিত্র রমজান মাস শেষের পথে। দেশে দেশে শুরু হয়েছে ঈদুল ফিতরের প্রস্তুতি। রোজার মাসের সংযম পালন শেষে ঈদের খুশিতে মেতে উঠবেন সবাই।
এখন অপেক্ষা চাঁদ দেখার। শাওয়াল মাসের নতুন চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ঈদের উৎসব শুরু হবে বিশ্বে। তবে সেটা নির্ভর করছে আপনি বিশ্বের কোন অংশে অবস্থান করছেন, সেটার ওপর।
চান্দ্রমাস ২৯ কিংবা ৩০ দিনে হয়। তাই মুসলিমদের ঈদের আগের সন্ধ্যায় চাঁদ দেখার জন্য অপেক্ষায় থাকতে হয়। খালি চোখে চাঁদ দেখার পরই তাঁরা জানতে পারেন পরের দিন ঈদ উদ্যাপিত হবে।
যেসব দেশে গত ২৩ মার্চ থেকে রোজা শুরু হয়েছে, সেসব দেশের মানুষেরা আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পশ্চিম আকাশে শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখার চেষ্টা করবেন। দেখা গেলে, আগামীকাল শুক্রবার এসব দেশে ঈদ উদ্যাপিত হবে। আর চাঁদ দেখা না গেলে আরেক দিন বেশি রোজা রাখবেন মুসল্লিরা। সে ক্ষেত্রে ৩০ রোজা পূর্ণ হবে সেসব দেশে। ৩০ রোজা হলে সে ক্ষেত্রে ঈদ হবে আগামী শনিবার।
চাঁদ দেখা গেলে টেলিভিশন ও রেডিওতে ঘোষণা করা হয়। মসজিদের মাইকেও মুসলিমদের উদ্দেশে জানিয়ে দেওয়া হয় চাঁদ দেখতে পাওয়ার খবর। অনেক জায়গায় সাইরেন বাজিয়ে জানান দেওয়া হয় ঈদের বার্তা।
যুক্তরাজ্যের এইচ এম নটিক্যাল অ্যালমানাক দপ্তর জানিয়েছে, আজ গ্রিনিচ মান সময় ৪টা ১৩ মিনিট থেকে নতুন চাঁদ দৃশ্যমান হতে পারে। তবে তা কিছু নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে শুধু উত্তর আমেরিকার আকাশ থেকে দেখা যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
তাই বিশ্বের বেশির ভাগ মানুষের উচিত হবে, আগামীকাল সন্ধ্যার পর শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখার জন্য খালি চোখে পশ্চিম আকাশে নজর রাখা। তবে দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলো, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ডসহ দক্ষিণ গোলার্ধের কিছু দেশের মানুষ আগামীকাল সন্ধ্যায় চাঁদের দেখা না–ও পেতে পারেন। এসব দেশে এর পরদিন অর্থাৎ আগামী রোববার ঈদ উদ্যাপিত হতে পারে।'
যেখানে যেমন উৎসব
সাধারণত মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোয় ঈদ উপলক্ষে তিন দিনের সরকারি ছুটি থাকে। তবে দেশভেদে ছুটির দিনের সংখ্যায় তারতম্য দেখা যায়। ঈদের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয় ঈদের নামাজের মধ্য দিয়ে। সাধারণত ঈদের দিন সকালে এই নামাজ অনুষ্ঠিত হয়।
দেশে দেশে ঈদগাহে খোলা আকাশের নিচে হাজারো মানুষ সমবেত হন। বেশির ভাগ মানুষের পরনে থাকে ঈদের নতুন জামা। মনে উৎসবের আমেজ। ঈদগাহে সমবেত হয়ে একসঙ্গে তাঁরা নামাজ আদায় করেন। দেশ, জাতি ও সম্প্রদায়ের জন্য দোয়া করেন। ‘আল্লাহু আকবর’ বলে খোদার প্রশংসা করেন। নামাজের পর কোলাকুলি করেন।
অনেক দেশে ঈদের নামাজের আগে মিষ্টি খাওয়ার রেওয়াজ আছে। অনেকে ‘মামউল’ খান। এটা বিস্কুটে খেজুরের পুর ভরা একধরনের মিষ্টান্ন। এরপর ঈদের উৎসব শুরু হয়ে যায়। লোকজন ঘুরে ঘুরে আত্মীয়স্বজন, বন্ধু, প্রতিবেশীদের সঙ্গে দেখা করেন। গল্পগুজব করেন। খাওয়াদাওয়া করেন। ঘুরতে যান।
ঈদের দিন সকালে কিংবা আগের রাতেই ঘরে ঘরে মিষ্টান্ন তৈরি করে রাখা হয়। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোয় খেজুরের পুর ভরা সুজির কুকিজ মামউল বানানো হয়। অনেক জায়গায় ঐতিহ্যবাহী এই মিষ্টান্নে বাদাম কিংবা চিনি দিয়েও পুর দেওয়া হয়। ভারতীয় উপমহাদেশে ঈদ উপলক্ষে বানানো হয় সেমাই, পুডিংসহ নানা মিষ্টান্ন। বাদাম, কিশমিশ দিয়ে তা সাজানো হয়।
তুরস্ক ও আশপাশের দেশগুলোয় বানানো হয় বাকলাভা নামের একধরনের বিশেষ মিষ্টান্ন। পাতলা পেস্ট্রির সঙ্গে পেস্তা বাদাম, কমলার রস মিশিয়ে তা বানানো হয়।
নাইজেরিয়ায় বানানো হয় আমালা। এটা একধরনের স্যুপ। বসনিয়া ও হার্জেগোভিনায় তুফাহিজা নামের একধরনের মিষ্টান্ন ঈদের অংশ হয়ে গেছে। আখরোট বা আপেল সিরাপ দিয়ে এটা বানানো হয়।
মরক্কোর মানুষেরা ঈদের দিন বাস্তিলা নামের একটি খাবার খান। কবুতর কিংবা মুরগির মাংস দিয়ে খাবারটি বানানো হয়। সাধারণত এক বা দুই দিন আগে মাংস ম্যারিনেট করে রাখা হয়। পরে তা পাতলা স্তরে মোড়ানো হয়, এরপর তা ভাজা হয়।
ঈদের শুভেচ্ছা
অনেক দেশে ঈদের দিন পরিবারের সদস্যদের নিয়ে অনেকে কবরস্থানে যান। নিকটজনদের কবর জিয়ারত করেন। ঈদ উপলক্ষে অনেক জায়গায় পুরো শহর সাজানো হয়। আলোকসজ্জায় মুড়ে দেওয়া হয় গুরুত্বপূর্ণ নানা স্থাপনা।
ঐতিহ্য ও উদ্যাপন ভিন্ন ভিন্ন হলেও বিশ্বজুড়ে ঈদের শুভেচ্ছা জানানোর বার্তার অর্থ প্রায় অভিন্ন। তা হলো—ঈদ মোবারক। তবে ভাষাভেদে এটার উচ্চারণ ভিন্ন হয়।