জীবন সুরক্ষাকারী সহায়তা দেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত তহবিল সংগ্রহ করাকে অগ্রাধিকার দেবে জাতিসংঘের আবাসিক দল | ফাইল ছবি
পদ্মা ট্রিবিউন ডেস্ক: করোনা মহামারি, ইউক্রেন যুদ্ধ, উন্নয়ন ও মানবিক সহায়তা পাওয়ার প্রতিযোগিতা এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্রমবর্ধমান সংকট সত্ত্বেও ২০২৩ সালে অর্থনীতিকে স্থিতিশীল ও শক্তিশালী করে তোলার পথ খুঁজবে বাংলাদেশ। চলতি বছর বাংলাদেশকে কয়েকটি বড় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে।
এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশকে সহযোগিতা করবে জাতিসংঘ। গতকাল মঙ্গলবার জাতিসংঘের দেওয়া বার্ষিক প্রতিবেদনে (‘ইউএন কান্ট্রি টিম রেজাল্টস রিপোর্ট ২০২২) এসব কথা বলা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতকি মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) দেওয়া ঋণের শর্তানুযায়ী অর্থনৈতিক সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়ন এবং আগামী নির্বাচনের জন্যও প্রস্তুতি নেবে বাংলাদেশ। একই সময়ে বাংলাদেশ ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশে উত্তরণের পথে হাঁটবে। দেশের টেকসই উন্নয়নজনিত অগ্রগতির গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক অর্জনের ব্যাপারে একটি কৌশল নিয়ে কাজ করবে।
সরকারের এসব অগ্রাধিকারের ক্ষেত্রগুলোর আলোকে বাংলাদেশে নিযুক্ত জাতিসংঘের আবাসিক দলও সহায়তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি ক্ষেত্র নির্ধারণ করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৩ সালের মার্চে দোহায় স্বল্পোন্নত দেশগুলো নিয়ে জাতিসংঘের পঞ্চম সম্মেলন হয়েছে। এ সম্মেলনের পর সরকার এখন বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের প্রক্রিয়াকে মসৃণ করতে কাজ করবে। কোথায় কোথায় পরিবর্তন আনতে হবে তা নিয়ে বেসরকারি খাত, নাগরিক সমাজ ও উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে নিবিড় আলোচনার ভিত্তিতে প্রক্রিয়াটি চালানো হবে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৩ সালে বাংলাদেশ সরকারকে দেশের মানুষের জীবন যাপনের ব্যয়জনিত চরম সংকট মোকাবিলা করতে হবে। জীবন যাপনের ব্যয় বেড়ে যাওয়ার কারণে লাখ লাখ মানুষের প্রয়োজনমাফিক খাদ্য ও জ্বালানি সংস্থান করতে হবে। তাই ২০২৩ সালে মানুষের জন্য জীবন যাপনের ব্যয় নির্বাহে সহায়তা ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই হবে জাতিসংঘের আবাসিক দলের অন্যতম অগ্রাধিকারের জায়গা।
এ ছাড়া পরিবারগুলোর আর্থিক সক্ষমতা বাড়ানো, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বাজারের সংযোগ তৈরির মধ্য দিয়ে তাদের জন্য টেকসই জীবিকা নিশ্চিত করার চলমান উদ্যোগও অব্যাহত থাকবে। বাংলাদেশের বিশাল অনানুষ্ঠানিক খাতকে আংশিকভাবে আনুষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার প্রচেষ্টাও চলবে।
এ ছাড়া সরকারি খাদ্য বিতরণ ব্যবস্থার উন্নয়ন, অসহায় মানুষদের সহযোগিতাকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরও দক্ষ করে তোলা এবং অসহায় মানুষদের সহযোগিতা করার মতো পদক্ষেপ নেওয়া হবে। পাশাপাশি পুষ্টিগত নিরাপত্তাকে সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থায় পরিণত করার বিদ্যমান উদ্যোগগুলো বজায় থাকবে।
স্কুল থেকে ঝরে পড়া শিশুদের শিক্ষা নিশ্চিত করতে সহায়তা দিয়ে যাবে জাতিসংঘের আবাসিক দল। লৈঙ্গিক সমতা ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা প্রতিরোধের বিষয়টিকে প্রাধান্য দিয়ে কাজ করে যাবে আবাসিক দল। আচরণগত পরিবর্তনের ওপর বিশেষ জোর দেওয়া হবে।
আরও সমন্বিত কর্মসূচির মধ্য দিয়ে জলবায়ুসংক্রান্ত কাজগুলো জোরদার করবে জাতিসংঘের আবাসিক দল। এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য সরকার ও উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে জাতিসংঘের আবাসিক দল নিবিড়ভাবে কাজ করবে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের পরিস্থিতি অবনতির মধ্য দিয়ে ২০২৩ সালটি শুরু হয়েছে। কক্সবাজারে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের জন্য তহবিল ঘাটতি দেখা দিয়েছে।
১৭ শতাংশ খাদ্য সরবরাহ কমে গেছে। এ ছাড়া ভয়াবহ এক অগ্নিকাণ্ডে ২ হাজার ৮০০–এর বেশি আশ্রয়কেন্দ্র ক্ষতিগ্রস্ত কিংবা ধ্বংস হয়ে গেছে। প্রায় ১৬ হাজার মানুষ এর জন্য ভুক্তভোগী হচ্ছেন। বিপুল মানবিক সহায়তার চাহিদার কথা মাথায় রেখে মানবিক সহায়তা সংস্থাগুলো শরণার্থীদের জন্য সহায়তা অব্যাহত রাখবে।
জীবন সুরক্ষাকারী সহায়তা দেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত তহবিল সংগ্রহ করাকে অগ্রাধিকার দেবে জাতিসংঘের আবাসিক দল (ইউএনসিটি)। পাশাপাশি মিয়ানমারে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ ও স্বেচ্ছা প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করার প্রচেষ্টাও অব্যাহত থাকবে।
২০২২ সাল ছিল চ্যালেঞ্জিং
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২২ সাল বাংলাদেশের জন্য একটি চ্যালেঞ্জিং বছর হিসেবে বিবেচিত ছিল। গত বছর ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব এবং কোভিড-১৯ মহামারিকে কেন্দ্র করে জ্বালানি ও খাদ্য মূল্যের ঊর্ধ্বগতি দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব অব্যাহত আছে। বন্যা হচ্ছে। প্রায় দশ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সহায়তা প্রদান অব্যাহত আছে।
২০২২ সালের চ্যালেঞ্জিং পরিবেশ সত্ত্বেও জাতিসংঘ বেশ কতগুলো ধারাবাহিক উদ্যোগ ও সেবা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বাংলাদেশের জনগণ ও সরকারকে সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে।