বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি নায়িকা ও পাবনার কন্যা প্রয়াত সুচিত্রা সেনের ৯২তম জন্মবার্ষিকী ছিল আজ বৃহস্পতিবার। এতে নৃত্য পরিবেশন করেন স্থানীয় শিল্পীরা | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
প্রতিনিধি পাবনা: পাবনায় নানা আয়োজনে বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি অভিনেত্রী সুচিত্রা সেনের ৯২তম জন্মদিন উদ্যাপিত হয়েছে। আয়োজনের মধ্যে ছিল শোভাযাত্রা, শ্রদ্ধা নিবেদন, আলোচনা সভা, সংগীত ও নৃত্য পরিবেশন এবং চলচ্চিত্র প্রদর্শন। আজ বৃহস্পতিবার দিনব্যাপী জেলা প্রশাসন ও সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদ এসব অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। পৈতৃক ভিটায় মহানায়িকাকে স্মরণে এসব আয়োজনে অভিভূত তাঁর মেয়ে অভিনেত্রী মুনমুন সেন।
সকালে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে দিনের কর্মসূচি শুরু হয়। শোভাযাত্রাটি শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে হেমসাগর লেনে সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংগ্রহশালায় গিয়ে শেষ হয়। সেখানে সুচিত্রা সেনের ম্যুরালে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন অতিথি ও ভক্তরা। পরে সংগ্রহশালা প্রাঙ্গণে সুচিত্রা সেনের জীবন ও কর্ম নিয়ে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
জেলা প্রশাসক বিশ্বাস রাসেল হোসেনের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নরেশ মধু। অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন পুলিশ সুপার আকবর আলী মুনসী, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রেজাউল রহিম, পাবনা প্রেসক্লাবের সভাপতি এ বি এম ফজলুর রহমান ও সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি চিকিৎসক রাম দুলাল ভৌমিক প্রমুখ।
আলোচনা সভা চলাকালে মুঠোফোনে ভারত থেকে যুক্ত হন সুচিত্রা সেনের কন্যা অভিনেত্রী মুনমুন সেন। তিনি বলেন, ‘পৈতৃক ভিটায় মায়ের জন্মদিন উদ্যাপিত হচ্ছে, এটা আমার জন্য চরম আবেগের ব্যাপার। আমি আবেগে আপ্লুত। মায়ের প্রতি পাবনার মানুষের এই ভালোবাসায় আমি মুগ্ধ, অভিভূত।’
স্বাগত বক্তব্যে নরেশ মধু বলেন, ‘সুচিত্রা সেন তাঁর কর্মে ও গুণে এখন আমাদের কাছে অমর। বিশ্বব্যাপী কোটি ভক্তের হৃদয়ে তিনি। দেশ–বিদেশের বহু মানুষ সুচিত্রা সেনের স্মৃতিবিজড়িত এই পৈতৃক বাড়িটিতে ঘুরতে আসেন। তাই আমরা চাই দ্রুত বাড়িটি সংস্কার করা হোক। সেই সঙ্গে স্মৃতি সংগ্রহশালাটি সমৃদ্ধ করা হোক। যেন দেশ-বিদেশের ভক্তরা এখানে এসে মহানায়িকাকে খুঁজে পান।’
সভাপতির বক্তব্যে বিশ্বাস রাসেল হোসেন বলেন, ‘আমরাও চাই মহানায়িকার বাড়িটি সংরক্ষণ করা হোক। সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়সহ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষেরও এদিকে নজর রয়েছে। আশা করছি, খুব শিগগির বাড়িটি সংস্কার ও সংগ্রহশালাটি সমৃদ্ধ করতে কাজ শুরু হবে।’
আলোচনা সভা শেষে সুচিত্রা সেন অভিনীত চলচ্চিত্রের গান পরিবেশন এবং নৃত্য পরিবেশন করেন স্থানীয় শিল্পীরা। পরে সুচিত্রা সেন অভিনীত ‘হারানো সুর’ চলচ্চিটি প্রদর্শন করা হয়। বিকেল পর্যন্ত দর্শকেরা চলচ্চিত্রটি উপভোগ করেন।
পাবনা জেলা শহরের গোপালপুর মহল্লার হেমসাগর লেনে সুচিত্রা সেনের পৈতৃক বাড়ি। এই বাড়িতে তিনি মা–বাবা ও ভাইবোনের সঙ্গে শৈশব ও কৈশোর কাটিয়েছেন। ১৯৪৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিয়ের পর তিনি স্বামীর সঙ্গে কলকাতায় চলে যান। ১৯৬০ সালে বাবা করুণাময় দাশগুপ্ত বাড়িটি জেলা প্রশাসনের কাছে ভাড়া দিয়ে কলকাতা চলে যান। এরপর বাড়িটি দখল হয়ে যায়। ২০০৯ সাল থেকে পাবনাবাসী বাড়িটি দখলমুক্ত করতে আন্দোলন শুরু করেন। ২০১৪ সালে বাড়িটি দখলমুক্ত হয়। বর্তমানে বাড়িটিতে পাবনা জেলা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংগ্রহশালা করা হয়েছে।