শামসুর রহমান শরীফ | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রতিনিধি ঈশ্বরদী: পাবনা-৪ আসনের সংসদ সদস্য, ভাষাসৈনিক, বীর মুক্তিযোদ্ধা, সাবেক ভূমিমন্ত্রী ও পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামসুর রহমান শরীফ ডিলুর তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী আজ রোববার।

পারিবারিকভাবে ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের উদ্যোগে প্রয়াত এই নেতার মৃত্যুবার্ষিকী পালিত হবে। আজ সকালে স্থানীয় আওয়ামীলীগ ও পরিবারের পক্ষ থেকে লক্ষীকুন্ডা ইউনিয়নের পারিবারিক কবরস্থানে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হবে।

২০২০ সালের ২ এপ্রিল ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন শামসুর রহমান শরীফ ডিলু। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮০ বছর।

শ্রদ্ধা জানানো শেষে দোয়া মোনাজাতেরও আয়োজন করা হয় পরিবারের পক্ষ থেকে। মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে দোয়া, কোরআন খতম, পৌর এলাকার আলীবর্দি সড়ক ও লক্ষীকুন্ডা ইউনিয়নে কুলখানির আয়োজন করা হয়েছে।

১৯৪১ সালের ১২ মার্চ পাবনা সদর উপজেলার হেমায়েতপুর ইউনিয়নের চর শানিরদিয়াঢ় গ্রামে মামার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন শামসুর রহমান শরীফ। তার বাবার বাড়ি ঈশ্বরদী উপজেলার  লক্ষ্মীকুন্ডা গ্রামে।

পাবনা জেলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিক, এডওয়ার্ড কলেজ থেকে মাধ্যমিক করার পর একই কলেজ থেকে ১৯৬২ সালে স্নাতকত্ব করেন শামসুর রহমান শরীফ ডিলু। রাজনীতিতে তার হাতেখড়ি হয় ছেলেবেলাতেই।

ভাষা আন্দোলনের উত্তাল সময়ে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায়  ডিলুকে গ্রেপ্তার হতে হয়েছিল ভাষার দাবিতে মিছিলে যোগ দেওয়ার কারণে।

আইয়ুব খানের মার্শাল ল বিরোধী আন্দোলন, হামিদুর রহমান শিক্ষা কমিশন বিরোধী আন্দোলন, ছয় দফা আন্দোলন, এবং ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানেও তিনি ছিলেন সক্রিয়। এ কারণে কয়েক দফা জেলে যেতে হয় তাকে। একাত্তরের ৭ নম্বর সেক্টর থেকে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন শামসুর রহমান ডিলু।

লক্ষ্মীকুণ্ডা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করার পর তিনি ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে পাবনা-৪ আসন থেকে প্রথমবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর প্রতিটি সংসদ নির্বাচনেই তিনি বিজয়ী হয়েছেন।

২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ টানা দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় গেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাবনার এই সংসদ সদস্যকে ভূমি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেন।

শামসুর রহমান ডিলু প্রথমবার পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন ২০০৪ সালে। পরে ২০১৪ সালে আবারও তাকে ওই দায়িত্ব দেওয়া হয়। মৃত্যু পর্যন্ত তিনি জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দিয়ে গেছেন।

১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নিহত হওয়ার পর দীর্ঘদিন জেলে থাকতে হয়েছে আওয়ামী লীগের এই রাজনীতিবিদকে। তাকে জেল খাটতে হয়েছে সামরিক শাসক এইচএম এরশাদের আমলেও।

বর্ণাঢ্য জীবনে তিনি শুধু ঈশ্বরদী বা আটঘরিয়া নয় পাবনা জেলার মধ্যে সকলের প্রিয় ডিলু ভাই হিসেবে পরিচিত ছিলেন। জাতীয় সংসদে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সদস্য থাকলেও ভাষা সৈনিক কেউই ছিলেন না। তার সময়ে তিনিই ছিলেন একমাত্র ভাষা সৈনিক।