রমনায় বোমা হামলার ২২ বছর: হত্যা মামলাটি এখনো হাইকোর্টে নিষ্পত্তির অপেক্ষায়

২০০১ সালের ১৪ এপ্রিল রমনা বটমূলে বোমা হামলা হয় | ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক: ২২ বছর আগে রমনা বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বোমা হামলা হয়। এ ঘটনায় পৃথক দুটি মামলা হয়। দুটির মধ্যে হত্যা মামলায় ২০১৪ সালে বিচারিক আদালতের রায় হয়। রায়ের ৯ বছর পেরোলেও দ্বিতীয় ধাপে মামলাটি এখনো হাইকোর্টে নিষ্পত্তির অপেক্ষায়।

হত্যা মামলায় আট আসামির ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন) ও আপিল হাইকোর্টের কয়েকটি বেঞ্চের কার্যতালিকায় উঠেছিল। কিন্তু শুনানি শেষ হয়ে মামলাটির নিষ্পত্তি হয়নি।

একই ঘটনায় বিস্ফোরকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে করা মামলাটি এখনো নিম্ন আদালতে বিচারাধীন। ঢাকার সপ্তম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন এ মামলায় ৮৪ জনের মধ্যে ৫৪ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়েছে। মামলায় আগামী ১৭ মে আত্মপক্ষ সমর্থনের শুনানির তারিখ ধার্য রয়েছে।

২০০১ সালের ১৪ এপ্রিল রমনা বটমূলে বোমা হামলা হয়। হামলায় ১০ জন নিহত হন। এ বোমা হামলার ঘটনার ২২ বছর পূর্ণ হচ্ছে আগামীকাল শুক্রবার।

বোমা হামলার ঘটনায় হরকাতুল জিহাদ বাংলাদেশের (হুজি-বি) অন্যতম শীর্ষ নেতা মুফতি আবদুল হান্নানসহ ১৪ জঙ্গিকে আসামি করে রমনা থানায় হত্যা ও বিস্ফোরকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে দুটি মামলা করে পুলিশ।

হত্যা মামলার ১৩ বছরের মাথায় ২০১৪ সালের ২৩ জুন ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ রুহুল আমিন রায় দেন। রায়ে মুফতি হান্নানসহ আটজনের মৃত্যুদণ্ড হয়, ছয়জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড।

বিচারিক আদালতের এ রায়ের পর আসামিদের মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের জন্য রায়সহ নথিপত্র হাইকোর্টে যায়, যা ২০১৪ সালে ডেথ রেফারেন্স মামলা হিসেবে নথিভুক্ত হয়।

হাইকোর্টে মামলা শুনানির পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে পেপারবুক (মামলার বৃত্তান্ত) তৈরি করা হয়। অন্যদিকে কারাগারে থাকা আসামিরা পৃথক আপিল ও জেল আপিল করেন।

সংশ্লিষ্ট আইনজীবীসহ একাধিক সূত্রের তথ্যমতে, পেপারবুক প্রস্তুতসহ আনুষঙ্গিক প্রক্রিয়ার পর ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের আপিল ২০১৬ সালে হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চে প্রথম শুনানির জন্য ওঠে। শুনানি শুরুও হয়। ২০১৭ সালের ৮ আগস্ট মামলাটি কার্যতালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়। একই বছরের ১৪ নভেম্বর হাইকোর্টের অপর একটি দ্বৈত বেঞ্চের কার্যতালিকায় শুনানির জন্য ওঠে মামলাটি। ২০১৯ সালের ২৩ অক্টোবর হাইকোর্টের অপর একটি দ্বৈত বেঞ্চে মামলাটি শুনানির জন্য কার্যতালিকায় ওঠে। এ বেঞ্চ মামলাটি ‘আংশিক শ্রুত হিসেবে গণ্য হবে না’ উল্লেখ করে ২০২১ সালের ২ নভেম্বর ডেথ রেফারেন্স কার্যতালিকা থেকে বাদ দেন।

সবশেষ দ্বৈত বেঞ্চে রাষ্ট্রপক্ষে নিয়োজিত ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শাহীন আহমেদ খান। জানতে চাইলে গত মঙ্গলবার তিনি বলেন, ‘বেঞ্চটির জ্যেষ্ঠ বিচারপতি আপিল বিভাগের নিয়োগ পান। পরে মামলার নথিপত্র প্রধান বিচারপতির দপ্তরে চলে যায়। প্রধান বিচারপতি বেঞ্চে নির্ধারণ করে দিলে শুনানি হওয়ার কথা। অন্য কোনো বেঞ্চে মামলাটি শুনানির জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে কি না, তা জানা নেই।’

তবে আদালতসংশ্লিষ্ট একটি সূত্রের তথ্যমতে, হাইকোর্টের তিনটি বেঞ্চ মামলাটি ফেরত দিয়েছেন। সবশেষ কার্যতালিকা থেকে বাদ দেওয়ার পর মামলার নথিপত্র এখন হাইকোর্টের ডেথ রেফারেন্স শাখায় রয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের চলমান অবকাশ শেষে বেঞ্চ নির্ধারণের জন্য বিষয়টি প্রধান বিচারপতির কাছে উপস্থাপন করা হবে।

বিচারিক আদালতের রায়ে মুফতি হান্নান ছাড়া মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত অপর ব্যক্তিরা হলেন আকবর হোসেন, আরিফ হাসান ওরফে সুমন, সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর ভাই মো. তাজউদ্দিন, জাহাঙ্গীর আলম ওরফে বদর, আবু বকর ওরফে সেলিম হাওলাদার, আবদুল হাই ও শফিকুর রহমান।

২০০৪ সালে সিলেটে গ্রেনেড হামলা মামলায় মুফতি হান্নানের মৃত্যুদণ্ড ২০১৭ সালে কার্যকর হয়। আদালতের নথি অনুযায়ী, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামির মধ্যে তাজউদ্দিন, জাহাঙ্গীর ও আবদুল হাই পলাতক।

বিচারিক আদালতের রায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত ছয় ব্যক্তি হলেন শাহাদাত উল্লা ওরফে জুয়েল, সাব্বির, শেখ ফরিদ, আবদুর রউফ, ইয়াহিয়া ও আবু তাহের।

আসামিপক্ষে নিয়োজিত অন্যতম আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির গত মঙ্গলবার বলেন, ‘হাইকোর্টের তিনটি বেঞ্চে আসামিদের ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানির জন্য কার্যতালিকায় উঠেছিল। তবে কোনো বেঞ্চে শুনানি শেষ হয়নি। তিনটির মধ্যে সবশেষ ২০২১ সালে মামলাটি একটি দ্বৈত বেঞ্চে ছিল। বেঞ্চটির জ্যেষ্ঠ বিচারপতি আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান। পরে বেঞ্চটি পুনর্গঠিত হয়। তারপর আর শুনানি হয়নি। এখন প্রধান বিচারপতি নতুন কোনো বেঞ্চ নির্ধারণ করে দিলে শুনানি শুরু হবে।’