এসআই আলমগীরের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নেমে দুদক কর্মকর্তা ঘুষ নিয়েছেন বলে অভিযোগ করে সংবাদ সম্মেলন করেন আলমগীরের খালাতো বোন দাবি করা বগুড়ার রহমাননগরের রুমাইয়া শিরিন। গতকাল রোববার বগুড়া প্রেসক্লাবে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রতিনিধি বগুড়া: বগুড়া জেলা পুলিশের গোয়েন্দাে শাখার সাবেক উপপরিদর্শক (এসআই) আলমগীর হোসেনের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানে নেমে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কর্মকর্তা সুদীপ কুমার চৌধুরী ঘুষ নিয়েছেন বলে অভিযোগ করে সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছে। আজ রোববার বগুড়া প্রেসক্লাবে এ সংবাদ সম্মেলন করেন আলমগীর হোসেনের খালাতো বোন দাবি করা বগুড়া শহরের রহমাননগর এলাকার বাসিন্দা রুমাইয়া শিরিন। সুদীপ কুমার বর্তমানে দুদক কুড়িগ্রাম জেলা কার্যালয়ের উপসহকারী পরিচালক।

 এসআই আলমগীরের গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার শৈলীসবলা গ্রামে।

দুদক বগুড়া সমন্বিত কার্যালয় সূত্র জানায়, ২০২১ সালের ২৪ জানুয়ারি ৩৯ লাখ ১৩ হাজার ৮৭৭ টাকা জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে এসআই আলমগীর হোসেনের বিরুদ্ধে দুদকের বগুড়া সমন্বিত কার্যালয়ের তৎকালীন উপসহকারী পরিচালক সুদীপ কুমার চৌধুরী মামলাটি করেন। মামলার পর থেকে আলমগীর হোসেন বরখাস্ত আছেন।

ওই মামলায় ৪ এপ্রিল এসআই আলমগীর হোসেনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিলের অনুমোদন দিয়েছে দুদক। দুদকের বগুড়ার আইনজীবী আবুল কালাম আজাদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

রুমাইয়া শিরিন সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আলমগীর ১৯৯৭ সালের ২৪ এপ্রিল ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) দাঙ্গা দমন বিভাগে কনস্টেবল পদে যোগ দেন। ২০১৩ সালের ২১ জুলাই পদোন্নতির পর তিনি বগুড়ার শাজাহানপুর থানায় এসআই হিসেবে বদলি হন। ২০১৫ সালের অক্টোবর তিনি বগুড়া জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) এসআই পদে যোগ দেন। এরপর ২০১৯ সালে দুদক বগুড়া সমন্বিত কার্যালয়ের ওই সময়কার অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা রবীন্দ্র নাথ চাকী কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ তুলে এসআই আলমগীর হোসেনকে সম্পদ বিবরণী দাখিলের নোটিশ দেন। ওই বছরের ২৪ নভেম্বর তিনি নোটিশ গ্রহণ করেন। ২০২০ সালের ১৩ জানুয়ারি তিনি সম্পদ বিবরণী দাখিল করেন। সেখানে স্থাবর ও অস্থাবর মিলে ৭২ লাখ ৫১ হাজার ৭৮ টাকার সম্পদ অর্জনের হিসাব দেন। এরপর ২০২০ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি অনুসন্ধানে তৎকালীন দুদকের উপসহকারী পরিচালক সুদীপ কুমার চৌধুরী। একই বছরের ২৮ অক্টোবর কামাল উদ্দিন নামের এক আইনজীবীর মাধ্যমে এসআই আলমগীরের কাছে সাত লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন সুদীপ কুমার। টাকা না দিলে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর ভয় দেখান তিনি। বাধ্য হয়ে আইনজীবীর মাধ্যমে ৫ লাখ ৮০ হাজার টাকা ঘুষ দেওয়া হয়। বাকি টাকা না পেয়ে দুদকে মামলা করেন সুদীপ কুমার।

তবে ঘুষ চাওয়ার দাবি ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন দুদকের কুড়িগ্রাম কার্যালয়ে কর্মরত উপসহকারী পরিচালক সুদীপ কুমার চৌধুরী। তিনি বলেন, প্রাথমিক তদন্তে অবৈধ সম্পদ অর্জনের সুনির্দিষ্ট তথ্য পেয়ে এসআই আলমগীরের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। অন্য একজন কর্মকর্তা তদন্ত শেষে আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়ায় মামলাটি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। নিজেকে বাঁচাতে এখন মামলায় অভিযুক্ত আলমগীর নানা মিথ্যা গল্প ফেঁদে রক্ষার কৌশল নিয়েছেন।

সুদীপ কুমার চৌধুরী আরও বলেন, দুদকে দাখিল করা সম্পদ যাচাই ও অনুসন্ধানে নেমে দেখা যায়, এসআই আলমগীর ১৯৯৭ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ২২ বছরে পারিবারিক ব্যয় নির্বাহে খরচ করেছেন ১১ লাখ ৬৫ হাজার ৫০০ টাকা। এতে তাঁর মোট সম্পদের পরিমাণ দেখানো হয় ৮৪ লাখ ১৬ হাজার ৫৭৮ টাকা। তাঁর বৈধ আয় ৪৫ লাখ ২ হাজার ৭০১ টাকা। জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ সম্পদ অর্জনের পরিমাণ ৩৯ লাখ ১৩ হাজার ৮৭৭ টাকা। অবৈধ সম্পদ অর্জনের মাধ্যমে তিনি দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪–এর ৭ (১) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।