প্রতিনিধি সিরাজগঞ্জ: উত্তরবঙ্গের মানুষের ঈদযাত্রায় বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম সংযোগ মহাসড়ক ভোগান্তির কারণ হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এই মহাসড়ক দিয়ে হাটিকুমরুল গোলচত্বর হয়ে ২২টি জেলার যানবাহন চলাচল করে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, বর্তমানে এই মহাসড়কটি চার লেনে উন্নীতকরণ ও সংস্কারকাজ চলমান থাকায় এর অনেক জায়গায় যানবাহন এক লেনে চলাচল করে। এ কারণে মহাসড়কটিতে কখনো কখনো ধীরগতিতে যান চলাচল করছে। এ ছাড়া মহাসড়কে মাঝেমধ্যেই অতিরিক্ত যানবাহনের চাপে সৃষ্টি হয় যানজট, যাত্রীদের পোহাতে হয় ভোগান্তি। ঈদযাত্রায় এই ভোগান্তির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে।
এই মহাসড়ক দিয়ে চলাচল করে এমন যানবাহনের চালক ও যাত্রীরা বলছেন, দ্রুত এই মহাসড়কের সংস্কারকাজ শেষ না করা হলে ঈদযাত্রায় যানবাহনের চাপ বাড়বে। এতে মহাসড়কে তীব্র যানজটের কারণে মানুষ ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ সিরাজগঞ্জ জেলা কার্যালয় সূত্রে জানা যায় বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম সংযোগ মহাসড়কটিতে স্বাভাবিক সময় প্রতিদিন ২০ থেকে ২৫ হাজার যানবাহন চলাচল করলেও ঈদের সময় এর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৪০ থেকে ৫০ হাজারে। এই জেলায় ৯৫ কিলোমিটার জাতীয় মহাসড়ক রয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা থেকে দুইটা পর্যন্ত সিরাজগঞ্জের বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্ট ঘুরে জানা যায়, সাউথ এশিয়া সাব-রিজিওনাল ইকোনমিক কো-অপারেশন (সাসেক)-২ প্রকল্পের আওতায় এলেঙ্গা-রংপুর মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করার কাজ চলছে। এ প্রকল্পের মধ্যে সিরাজগঞ্জের প্রায় ৫০ কিলোমিটার অংশ পড়েছে। বঙ্গবন্ধু সেতু থেকে চান্দাইকোনা পর্যন্ত এ চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পের বেশ কিছু স্থান ঝুঁকিপূর্ণ। সংস্কারকাজ করার ফলে কোনো কোনো স্থানে চার লেনের সড়ক গিয়ে এক লেনে মিলিত হচ্ছে। ফলে সেখানে বাঁক তৈরি হয়ে যানবাহনের স্বাভাবিক গতি ব্যাহত হচ্ছে। এসব স্থানকে ঘিরে ভয়াবহ যানজট সৃষ্টির শঙ্কা রয়েছে। ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম থেকে হাটিকুমরুল হয়ে চান্দাইকোনা পর্যন্ত ৫০ কিলোমিটার মহাসড়কটি।
সিরাজগঞ্জ থেকে ঢাকাগামী অভি পরিবহনের চালক আমিরুল ইসলাম বলেন, কয়েক বছর ধরে ঈদযাত্রায় মানুষকে চরম ভুগিয়েছে এই মহাসড়কের জরাজীর্ণ নলকা সেতু। এবার নলকায় নতুন সেতু নির্মাণ করায় অনেকটাই আশার আলো দেখা দিয়েছে। তবে বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম গোলচত্বর থেকে চান্দাইকোনা মহাসড়কটি চার লেনে উন্নীতকরণের কাজ চলমান থাকায় এবারও ঈদযাত্রায় কিছুটা ভোগান্তি হতে পারে।
বগুড়া থেকে ঢাকাগামী হানিফ পরিবহনের যাত্রী বিল্লাল হোসেন বলেন, ঢাকা থেকে সিরাজগঞ্জে আসতে স্বাভাবিক অবস্থায় এক ঘণ্টার কম সময় লাগলেও মহাসড়কে নির্মাণকাজ চলমান থাকায় এখন ৩০ মিনিট সময় বেশি লাগছে। ঈদের আগেই বগুড়া থেকে ঢাকা যেতে এই মহাসড়কে যানবাহনের ধীরগতি সৃষ্টি হচ্ছে। ঈদের সময় আরও অতিরিক্ত যানবাহন এই মহাসড়কে ভয়াবহ যানজট সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা রয়েই গেছে।
এরই মধ্যে পুলিশ বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম সংযোগ মহাসড়ক ১৪টি স্থান ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। সেগুলো হলো সয়দাবাদ, মুলিবাড়ী, কড্ডার মোড়, ঝাঐল উড়ালসড়ক, শহীদনগর, কোনাবাড়ী, নলকা, পাঁচলিয়া, হাটিকুমরুল গোলচত্বর, হাটিকুমরুল ইউনিয়ন কার্যালয়ের সামনে, রয়হাটি জোড়া সেতু , কামারপাড়া উড়ালসড়ক, ভুইয়াগাতী ও চান্দাইকোনা।
মহাসড়কটির উন্নয়ন ও সংস্কারকাজের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হেগো-মীর আকতার জেভির প্রকল্প ব্যবস্থাপক এখলাস উদ্দিন বলেন, ‘ইতিমধ্যে মহাসড়কের ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলো চিহ্নিত করে দ্রুত সংস্কার করা হচ্ছে। আমরা আশা করছি, আগামী ২০ রমজানের মধ্যে কাজ শেষ হবে। এ ছাড়া যানজট রোধে এই মহাসড়কে নবনির্মিত পাঁচটি উড়ালসড়ক ঈদের আগেই খুলে দেওয়া হবে। আশা করা যাচ্ছে, তখন এ সড়কে আর যানজট হবে না।
এ বিষয়ে সওজ সিরাজগঞ্জ কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী দিদারুল আলম বলেন, ‘ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে মহাসড়কের দুই লেন থেকে চার লেনে উন্নীতকরণের চলমান কাজের ফলে সড়কের যে অসংগতি সৃষ্টি হয়েছে, আমরা তা দ্রুত ঠিক করে দিচ্ছি। সেই সাথে ঈদের সময় যদি মহাসড়কে পর্যাপ্তসংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয় এবং সওজের জেলার অভ্যন্তরীণ সড়কগুলোতে নিয়ম ভেঙে যানবাহন ঢুকতে না দেওয়া হয়, তবে এই মহাসড়কে কোনো যানজটের সৃষ্টি হবে না।’
হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বদরুল কবির বলেন, দুই লেনে এই মহাসড়কটিতে প্রতিদিন যে পরিমাণ যানবাহন চলাচল করে, তাতে এখানে চার লেন মহাসড়ক থাকা বিশেষ প্রয়োজন। যে কারণে এই মহাসড়কটিতে চার লেনে উন্নীতকরণের কাজ চলতে থাকায় কোনো কোনো জায়গায় সড়ক সংকুচিত হয়ে এক লেন হয়ে গেছে। কোথাও কোথাও খানাখন্দ রয়েছে। যে কারণে ঈদের সময় অতিরিক্ত যানবাহনের চাপে যানজট সৃষ্টি হতে পারে।
হাইওয়ে পুলিশের (বগুড়া উপবিভাগ) পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান বলেন, এবার ঈদযাত্রায় হাটিকুমরুল-বনপাড়া ও হাটিকুমরুল-পাবনা মহাসড়কে কোনো সমস্যা হবে না। বঙ্গবন্ধু সেতু থেকে হাটিকুমরুল গোলচত্বর হয়ে চান্দাইকোনা পর্যন্ত মহাসড়কে চার লেনে উন্নীত করার কাজ চলছে। যে কারণে এখানে কিছু সমস্যা আছে। তবে এই মহাসড়কে মানুষের ঈদযাত্রা যাতে ঝামেলাহীন হয়, সেই লক্ষ্যে আমরা সাসেক কর্মকর্তাদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেছি। তাঁরা আমাদের আশ্বস্ত করেছেন। এর পরও আমরা ধারণা করছি এই মহাসড়কের ঝাঐল উড়ালসড়ক ও কামারপাড়া উড়ালসড়কটিতে কিছুটা সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। তবে মহাসড়কটিতে চার লেনে উন্নীতকরণের কাজে বেশ অগ্রগতি হওয়ায় গত বছরের তুলনায় ঈদযাত্রা এবার অনেকটা নির্বিঘ্ন হবে।
সিরাজগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার আরিফুর রহমান বলেন, উত্তরবঙ্গের
মানুষের ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে মহাসড়কে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় হাইওয়ে পুলিশের
পাশাপাশি এবারও জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা
হবে। আগামী ২৫ রমজান থেকে এই উদ্যোগ কার্যকর করা হবে।