প্রতিনিধি পাবনা: পাবনায় এনজিওর কিস্তি দিতে বিলম্বের কারণে অপমানে অ্যাসিড পান করে আত্মহত্যার চেষ্টা করা সেই রোজিনা খাতুন (৪৫) মারা গেছেন। দীর্ঘ প্রায় আড়াই মাস চিকিৎসার পর গতকাল মঙ্গলবার রাতে তিনি মারা যান। আজ বুধবার সকালে তাঁর লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অ্যাসিড পানের কারণে রোজিনা খাতুনের কণ্ঠনালি পুড়ে যায়। এ থেকেই নানা জটিলতা তৈরি হয়েছিল। তাঁকে প্রথমে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এতেও অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় কিছুদিন বাড়িতেই চিকিৎসা চলছিল। এ অবস্থায় গতকাল রাত ১১টার দিকে তিনি মারা যান।
রোজিনার স্বামী আমজাদ হোসেন বলেন, ঘটনার পর এনজিও ‘প্রতিশ্রুতি’র কর্মকর্তারা দু–এক দিন খবর নিয়েছেন। রাজশাহী থেকে ঢাকা পর্যন্ত নেওয়ায় সহযোগিতা করেন। এরপর তাঁরা আর খোঁজ নেয়নি।
আমজাদ হোসেনের অভিযোগ, প্রতিশ্রুতির লোকজন কোনো দিন রোজিনার খোঁজ তো নেনইনি, উল্টো নিজেদের দোষ ঢাকতে প্রতিশ্রতির যে কর্মীর সঙ্গে বিরোধে রোজিনা আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন, তাঁকে চাকরি থেকে বাদ দিয়েছেন। এখন বলছেন, ওই মেয়ে তাঁদের কর্মীই নন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কৃপা সিন্ধু বালা বলেন, ঘটনায় করা মামলার আসামিরা সবাই জামিনে। ওই নারীর মৃত্যুর খবরে তাঁর লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্ত শেষে দুপুরে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, রোজিনা সদরের আরিফপুর মহল্লার আমজাদের স্ত্রী। তিনি ‘প্রতিশ্রুতি’ নামে ওই এনজিওর দোগাছি ইউনিয়নের দোগাছি কার্যালয় থেকে ৪৫ হাজার টাকা ঋণ নেন। সাপ্তাহিক ১ হাজার ৩০০ টাকা হারে ঋণের ২৩ কিস্তি ২৯ হাজার ৯০০ টাকা পরিশোধ করেন। এরপর আর টাকা দিতে পারেননি। গত ১২ জানুয়ারি এনজিওর কর্মীরা তাঁকে বাড়ি থেকে কার্যালয়ে ধরে নিয়ে যান। সেখানে তাঁকে বিভিন্ন হুমকি ও গালাগালি করা হয়। পরে তিনি বাড়িতে ফিরে অ্যাসিড পানে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। এ ঘটনায় রোজিনার ছেলে হৃদয় হোসেন তাঁর মাকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে অপমান ও হুমকি দেওয়ার অভিযোগ তুলে পাঁচজনকে আসামি করে মামলা করেছেন। মামলায় প্রতিশ্রুতির দোগাছি শাখার ব্যবস্থাপক ইয়াহিয়া খান (৪৫) ও মাঠকর্মী শাহীদা খাতুন (৩৫) গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বর্তমানে সবাই জামিনে মুক্ত।
ঘটনায় গত ২৬ জানুয়ারি প্রতিশ্রুতির কর্মকর্তারা জেলা শহরের নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে ঘটনার ব্যাখ্যা দেন। সংবাদ সম্মেলনে প্রতিশ্রুতির সভাপতি আবদুল মতীন খান বলেন, অপমানে নয়, পারিবারিক কলহের কারণেই ওই নারী আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন। প্রতিশ্রুতির দাবি, রোজিনা বিভিন্ন এনজিও এবং মহাজনের কাছ থেকে কয়েক লাখ টাকা ঋণ নিয়ে ছেলেকে বিদেশে পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর ছেলে বিদেশে থাকতে পারেননি। দেশে ফিরে জুয়া খেলে আরও টাকা নষ্ট করেছেন। এতে তাঁদের পরিবারে অশান্তি নেমে এসেছিল।