ফুটপাতে পাতলা দইয়ের মাটির হাঁড়ি সাজিয়ে বসেছেন এক বিক্রেতা। শুক্রবার বিকেলে নওগাঁ শহরের তাজের মোড় যমুনা মার্কেটের সামনের ফুটপাতে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
প্রতিনিধি নওগাঁ: ঘরোয়া পরিসরে হোক কিংবা মেহমানদারিতে, ইফতারে টক দইয়ের মাঠা বা ঘোল নওগাঁবাসীর সবচেয়ে প্রিয় অনুষঙ্গ। স্থানীয় ব্যক্তিদের কাছে এ পানীয় পাতলা দই নামে বেশি পরিচিত। খেজুর, শরবত, ছোলা-পেঁয়াজুসহ নানা পদ থাকলেও পাতলা দই না হলে ইফতারি যেন অপূর্ণ থেকে যায়। ইফতারের সময় পাতলা দই খাওয়ার এ প্রচলন চলে আসছে যুগ যুগ ধরে। পদটিকে স্থানীয় ঐতিহ্য বলে ধরে নেওয়া হয়।
সারা দিন রোজা রেখে দিন শেষে এক গ্লাস পাতলা দই বা ঘোল তৃষ্ণার্ত রোজাদারদের প্রশান্তির তৃপ্তি এনে দেয়। বিশেষ করে স্বাস্থ্যসচেতন রোজাদারদের পছন্দের শীর্ষে থাকে পাতলা দই নামে এ পানীয়। এবার চৈত্র মাসে রোজা হওয়ায় শুক্রবার রমজান মাসের প্রথম দিনেই নওগাঁ শহরের ফুটপাত থেকে শুরু করে শহরের অভিজাত রেস্টুরেন্ট ও প্রসিদ্ধ দইয়ের দোকানগুলোতে ক্রেতাদের ভিড় লক্ষ করা গেছে। দুপুরের পর থেকেই মাটির হাঁড়ির পসরা সাজিয়ে ফুটপাত ও দোকানে পাতলা দই বিক্রি করতে দেখা যায় বিক্রেতাদের।
ক্রেতারা বলছেন, গতবারের চেয়ে হাঁড়িপ্রতি এবার ২০ থেকে ৩০ টাকা বেশি নিচ্ছেন বিক্রেতারা। অন্যদিকে বিক্রেতাদের দাবি, দুধ ও চিনির দাম বেশি হওয়ায় পাতলা দই তৈরি করতে খরচ বেশি পড়ায় দাম বাড়াতে বাধ্য হয়েছেন তাঁরা। শহরের ব্রিজের মোড়, তাজের মোড়, সরিষাহাটির মাড়ে, গোস্তহাটির মোড়, দয়ালের মোড়ের ফুটপাত ও প্রসিদ্ধ দই-মিষ্টির দোকান ছাড়াও শহরের অলিগলিতে ফেরি করে পাতলা দই বিক্রি করতে দেখা যায়।
শহরের ব্রিজের মোড়ে অবস্থিত নওগাঁর প্রসিদ্ধ দই-মিষ্টির দোকান হিসেবে পরিচিত নওগাঁ মিষ্টান্ন ভান্ডারে জুমার নামাজের পর পাতলা দই কিনতে ক্রেতাদের প্রচণ্ড ভিড় লক্ষ করা যায়। দোকানটিতে প্রতি হাঁড়ি (আনুমানিক ৫০০ গ্রাম) পাতলা দই ১৪০ টাকা দরে বিক্রি করতে দেখা যায়। আর ফুটপাতে দইওয়ালারা প্রতি হাঁড়ি দই ১২০ থেকে ১৩০ টাকায় বিক্রি করছেন। ২৫০ গ্রামের ছোট হাঁড়ি ৭০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
নওগাঁ মিষ্টান্ন ভান্ডারের স্বত্বাধিকারী মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘দইয়ের প্রধান উপকরণ হচ্ছে দুধ ও চিনি। এই দুই উপকরণের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় আমরাও বেশি দামে দই বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছি।’
ফুটপাত থেকে পাতলা দই কিনছেন ক্রেতারা। শুক্রবার বিকেলে নওগাঁ শহরের ব্রিজের মোড় এলাকায় |
জুমার নামাজ শেষে দই কিনে বাড়ি ফিরছিলেন শহরের উকিলপাড়া এলাকার বাসিন্দা কলেজশিক্ষক বেলায়েত হোসেন। তিনি বলেন, ‘ফুটপাত থেকে পাতলা দইয়ের একটা বড় হাঁড়ি কিনলাম ১২০ টাকায়। গত বছরের তুলনায় এবার ২০ টাকা দাম বেড়েছে। ইফতারিতে একটু প্রশান্তি পাওয়ার জন্য পাতলা দইয়ের বিকল্প আর কিছু হয় না। পুরো রমজান মাসজুড়েই পরিবারের সদস্যদের নিয়ে পাতলা দই খেয়ে থাকি। তৃষ্ণা মেটানোর পাশাপাশি এই দই শরীরের জন্যও ভালো।’
এ বিষয়ে নওগাঁ সিভিল সার্জন কার্যালয়ের মেডিকেল অফিসার আশীষ কুমার সরকার বলেন, পাতলা দই বলি আর ঘোল কিংবা মাঠা—যুগ যুগ ধরে মানুষ এ পানীয় পান করে আসছে। দুধের ননি থেকে মাখন আলাদা করে ফেলার পর যে চর্বি ছাড়া জলীয় অংশ রয়ে যায়, তা-ই আসলে ঘোল বা মাঠা। এটি অত্যন্ত পুষ্টিগুণসম্পন্ন একটি পানীয়। এই দইয়ে ক্যালসিয়াম, আয়রন, ভিটামিন, উপকারী ব্যাকটেরিয়া থাকে, যা শরীরের বিভিন্ন উপকারে আসে। এ ছাড়া উচ্চ রক্তচাপ, কোলেস্টেরল ও ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। হজমে সহায়তা করে। রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, ত্বক ভালো রাখে। পাকস্থলীর সমস্যা কমায়। ক্লান্তি অবসন্নতা কমিয়ে মনে প্রশান্তি আনে, মেজাজ ফুরফুরে রাখে।