মাধপুর গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত বটতলায় প্রয়াত শামসুর রহমান শরীফ ডিলুসহ অন্যরা | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
প্রতিনিধি ঈশ্বরদী: ২৯ মার্চ ১৯৭১ ঈশ্বরদীর ঐতিহাসিক মাধপুর দিবস। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ শুরুর দিকে একাত্তরের এই দিনে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর 'অপারেশন সার্চলাইট' সম্পুর্ণ বন্ধ করে দিয়েছিলো মুক্তিকামী মানুষ।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ অপারেশন সার্চলাইটের আওতায় ছিলো তিনটি জেলা। চট্টগ্রাম, কুষ্টিয়া, পাবনা। ২৯ মার্চ বাংলাদেশের মধ্যে ঈশ্বরদীর মাধপুরে পাকিস্তানি সৈন্য নিহত হয়েছিলো বিপ্লবী জনতার আক্রমণ ও সম্মুখযুদ্ধ। সেদিন পাক হানাদারের সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধে শহীদ হয়েছিল ১৭ জন মুক্তিযোদ্ধা এবং ৫০ জন নিরীহ গ্রামবাসী।
পাবনা-৪ আসনের সংসদ সদস্য, ভাষাসৈনিক, বীর মুক্তিযোদ্ধা, সাবেক ভূমিমন্ত্রী ও পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রয়াত শামসুর রহমান শরীফ ডিলুর নেতৃত্বে পাবনা সদর ও ঈশ্বরদী মুক্তিযোদ্ধা সংসদের আয়োজনে মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ পরিবার এবং মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের নিয়ে প্রতি বছরের ২৯ মার্চ মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশের আয়োজন হতো।
তৎকালীন পাবনা এ্যাডওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের এজিএস ও উত্তরবঙ্গের প্রখ্যাত শ্রমিকনেতা মোহাম্মদ মোহাম্মদ রশীদূল্লাহ জানান, ২৯ মার্চ পাকবাহিনীর একটি সাজোয়া বহর পাবনা থেকে মাধপুর কাঁচা রাস্তা ধরে ঈশ্বরদীর দিকে যাওয়ার পথে সাহাপুরে স্থানীয় গ্রামবাসী, যার কাছে যা আছে, তাই নিয়ে জড়ো হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধাদের বাধার,সম্মুখীন হয়ে পাকবাহিনী গাড়ি বহর থেকে বৃষ্টির মত গুলি ছুঁড়তে থাকে। ওইদিন মূলত কোনো কমান্ড ও নেতৃত্ব ছাড়াই শুধুমাত্র দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে প্রায় খালিহাতে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল তৎকালিক ঈশ্বরদী সরকারী কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি হাবিবুর রহমান রাজুসহ অনেকে। পরে প্রয়াত ভাষাসৈনিক ও মুক্তিযোদ্ধা শামসুর রহমান শরীফ ডিলুর নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধা ও গ্রামবাসীর প্রতিরোধের মুখে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী অক্ষত অবস্থায় কেউ ফিরে যেতে পারেনি।
সেদিন পাক হানাদার বাহিনীর সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধে যারা শহীদ হয়েছিলেন হীদ হাবিবুর রহমান রাজু, আব্দুর রাজ্জাক, ওহিদুর রহমান, আব্দুল গফুর, নুরুল ইসলাম, আলী আহম্মদ, নবাব আলী, হামির উদ্দিন ও ফরমান সরদারসহ ১৭ জন মুক্তিযোদ্ধা ও ৫০ জন গ্রামবাসী।
মহান স্বাধীনতার পর থেকে মাধপুর দিবসে সকাল থেকে দুপুর ঈশ্বরদীর মুক্তিযোদ্ধাদের মিলনমেলায় পরিনত হতো মাধপুর বটতলা।