বাবার কাছে টাকা পান, শিকলে বেঁধে কিশোর ছেলেকে নির্যাতনের অভিযোগ

নির্যাতনের শিকার শাওনের পাশে বসে কাঁদছেন তার মা আরজিনা বেগম। শুক্রবার বিকেলে গুরুদাসপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রতিনিধি গুরুদাসপুর: নাটোরের গুরুদাসপুরে বাবার কাছে পাওনা টাকা আদায় করতে তাঁর কিশোর ছেলেকে শিকলে বেঁধে নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। আজ শুক্রবার উপজেলার ধারাবারিষা ইউনিয়নের চলনালি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

নির্যাতনের শিকার কিশোরের নাম শাওন ইসলাম (১৩)। সে উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের বেড়গঙ্গরামপুর গ্রামের কাবিল হোসেনের ছেলে।

অভিযুক্ত মুন্নাফ হোসেন উপজেলার ধারাবারিষা ইউনিয়নের উচলনালি গ্রামের একজন কৃষক। নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকর করে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, জমি ইজারার টাকা পরিশোধ না করে টালবাহানা করছিলেন কাবিল হোসেন। আজ সকালে বাগান থেকে পেয়ারা সংগ্রহ করতে এলে তাঁর ছেলেকে আটকে রাখা হয়েছিল। তবে নির্যাতন করা হয়নি।

আজ বেলা দুইটার দিকে পুলিশের সহায়তায় শাওনকে উদ্ধার করে গুরুদাসপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক শামীমা আফরোজ প্রথম আলোকে বলেন, শাওনের বাঁ পায়ে জখম রয়েছে। তাঁর চিকিৎসা চলছে।

এ ঘটনায় মুন্নাফ হোসেনের বিরুদ্ধে গুরুদাসপুর থানায় একটি অভিযোগ দিয়েছেন শাওনের মা আরজিনা বেগম। অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে গুরুদাসপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুল মতিন বলেন, এ ঘটনায় তদন্ত করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

মুন্নাফ হোসেনের পাঁচ বিঘা জমি বছর চুক্তিতে লিজ নিয়ে সেখানে পেয়ারাবাগান করেন কাবিল হোসেন। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শাওন প্রথম আলোকে বলে, আজ সকালে ওই বাগান থেকে পেয়ারা সংগ্রহ করতে যায় সে। এ সময় তাঁকে জোর করে বাড়িতে ধরে নিয়ে যান মুন্নাফ ও তাঁর ভাতিজারা। এরপর বাঁ পায়ে শিকল বেঁধে তাকে চড়থাপ্পড় ও কিল–ঘুষি মারতে থাকেন তাঁরা। এভাবে সকাল সাতটা থেকে পুলিশ আসার আগপর্যন্ত (বেলা দুইটা) বেঁধে রেখে একটু পরপর নির্যাতন করা হয় তাকে।

ছেলের নির্যাতনকারীদের বিচার দাবি করে শাওনের মা আরজিনা বেগম বলেন, আজ বেলা ১১টার দিকে মুঠোফোনে খবর পেয়ে ছেলেকে উদ্ধারের জন্য মুন্নাফের বাড়িতে যান তিনি। কিন্তু তাঁর সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেন মুন্নাফ ও তাঁর ভাতিজারা। নিরুপায় হয়ে থানায় গিয়ে অভিযোগ দেন তিনি। পরে বেলা দুইটার দিকে পুলিশের সহায়তায় ছেলেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

মুন্নাফ হোসেনের কাছ থেকে ১৭ হাজার টাকা বছর চুক্তিতে পাঁচ বিঘা জমি পাঁচ বছরের জন্য লিজ নিয়েছিলেন জানিয়ে শাওনের বাবা কাবিল হোসেন মুঠোফোনে বলেন, দুই বছর ফলন বিপর্যয় হয়। এ কারণে এক বছরের টাকা পরিশোধে বিলম্ব হয়েছে। বকেয়া টাকা পেতে তাঁর ছেলেকে আটকে রেখে শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হয়েছে।