বগুড়ার শহীদ চান্দু স্টেডিয়াম থেকে মালামাল সরিয়ে নেওয়া হয়েছে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রতিনিধি বগুড়া: ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিম ২০২০ সালের আগস্টে শ্রীলঙ্কা সফরকে সামনে রেখে বগুড়ার শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামের সবুজ ঘাসে পা রেখেছিলেন ব্যক্তিগত অনুশীলনে ঘাম ঝরাতে। টানা দুই ঘণ্টা অনুশীলন শেষে নিজের ভেন্যু হিসেবে পরিচিত শহীদ চান্দু স্টেডিয়াম নিয়ে ফেসবুকে আবেগঘন এক স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন। সেখানে মুশফিক লিখেছিলেন, শহীদ চান্দু স্টেডিয়াম দেশের সেরা টার্ফ উইকেট।

শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামে নিয়মিত অনুশীলন করেন জাতীয় নারী ক্রিকেট দলের রিতু মনি, খাদিজাতুল কুবরা, শারমিন সুলতানা, জাতীয় দলের শফিউল ইসলাম, তাওহিদ হৃদয় এবং অনূর্ধ্ব-১৯ দলের বিশ্বকাপজয়ী তানজিদ তামিম।

মুশফিকুর রহিমের দেশসেরা সেই টার্ফ উইকেটের মাঠ শহীদ চান্দু স্টেডিয়াম এখন ভালো নেই। এ মাঠ থেকে বিসিবি ক্রিকেট ভেন্যু বাতিল এবং জনবল প্রত্যাহারের সপ্তাহ ঘুরতে না ঘুরতেই মাঠটি বেহাল হয়ে পড়েছে। পরিচর্যা না থাকায় ‘পিচ’ নষ্ট হতে চলেছে।

মাঠে যে প্রিমিয়ার লিগ খেলা নিয়ে বিসিবির সঙ্গে জেলা ক্রীড়া সংস্থার বিরোধ প্রকাশ্য হয়ে পড়েছে, সেই প্রিমিয়ার লিগ খেলতে আসা নবীন ক্রিকেটাররা এক সপ্তাহ যেতে না যেতে মাঠের দশা দেখে হতাশ। নবীন খেলোয়াড়দের ভাষ্য, পরিচর্যার অভাবে দেশসেরা পিচ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এতে শুধু মাঠ থাকবে, কিন্তু সেখানে ক্রিকেট অনুশীলন সম্ভব হবে না।

অন্যদিকে খেলোয়াড় ও ক্রীড়া সংগঠকেরা বগুড়ার ক্রিকেট সম্ভাবনা বাঁচাতে বিসিবিকে ভেন্যু বাতিলের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন।

শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামে প্রিমিয়ার লিগে মঙ্গলবার মুখোমুখি হয়েছিল জাতীয় দলের ক্রিকেটার শফিউল ইসলামের নিউ মুন স্টার ক্লাব ও সূত্রাপুর স্পোর্টিং ক্লাব। শফিউল ইসলাম বলেন, ‘সব ক্রিকেটারই বলেন, শহীদ চান্দুর মতো স্টেডিয়াম আর নেই। এ মাঠে সব খেলোয়াড় খেলতে চান। আমি চাই মাঠে খেলা হোক, বগুড়ায় আগে যে রকম পরিবেশ ছিল, তা ফিরে আসুক। তাহলে বগুড়া থেকে আরও ভালো ক্রিকেটার তৈরি হবে। স্টেডিয়াম থাকলে নতুনদের মনে সাহস আসে। ভালো ভালো খেলোয়াড় যখন আসে, তাঁদের খেলা দেখে নতুনেরা অনুপ্রাণিত হয়।’

নিউ মুন স্টারের নবীন ক্রিকেটার রাফিউল ইসলাম বলেন, বিসিবি স্টেডিয়াম থেকে তাদের জনবল প্রত্যাহার করেছে। মাঠ পরিচর্যার আনুষঙ্গিক সরঞ্জাম বগুড়া থেকে সব ঢাকায় নিয়ে গেছে। এখন মাঠ পরিচর্যার লোক নেই। এ মাঠের পিচ দেশসেরা। অথচ পরিচর্যার অভাবে মাত্র এক সপ্তাহে পিচ নষ্ট হওয়ার পথে। কয়েক দিন আগে প্রিমিয়ার লিগ শুরুর দিকে এ মাঠে ৫০ ওভারে ৩০০ রান তুলেছেন খেলোয়াড়েরা। এখন ৫০ ওভারে ১৫০ রান তুলতে হিমশিম অবস্থা।

নিউ মুন স্টার ক্লাবের পেস বোলার সৌরভ হাসান বলেন, ‘বিসিবি এত দিন এ মাঠ পরিচর্যা করেছে। এ মাঠে জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের নিয়ে নানা ম্যাচ আয়োজন করেছে। তারকা ক্রিকেটারদের খেলা দেখতাম, অনুপ্রাণিত হতাম, তাঁরাও নবীনদের নানা পরামর্শ দিতেন।’

বগুড়া জেলা দলের ক্রিকেটার আবির হোসেন বলেন, বগুড়া ক্রিকেটের উর্বর ভূমি। এ স্টেডিয়ামে অনুশীলন করেই জাতীয় দল, জাতীয় নারী দলে ছয়জন ছাড়াও বয়সভিত্তিক দলে ডজনখানেক ক্রিকেটার খেলছেন। পাইপলাইনে আছে আরও ডজনখানেক ছেলেমেয়ে। স্টেডিয়াম থেকে ভেন্যু প্রত্যাহার করা মানেই বগুড়ার ক্রিকেটের অপার সম্ভাবনাকে গলা টিপে হত্যা করা।

নবীন ক্রিকেটার ফারুক হোসেন বলেন, তারকা ক্রিকেটার তৈরি জন্য প্রিমিয়ার লিগের মতো ক্লাবভিত্তিক খেলা আয়োজনের মাধ্যমে জেলা ক্রীড়া সংস্থা ক্রিকেটে হাতেখড়ি দেয়। কিন্তু ক্রিকেটে বিশ্ববিদ্যালয় পর্বের ভূমিকা পালন করে বিসিবি। বিসিবি ছাড়া তারকা ক্রিকেটার তৈরি সম্ভব নয়। ক্রিকেটের স্বার্থে, বগুড়ার ক্রিকেট সম্ভাবনার স্বার্থেই বিসিবির সঙ্গে জেলা ক্রীড়া সংস্থার দূরত্ব মিটমাট করে ফেলা দরকার।

বগুড়া জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাবেক সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম বলেন, জাতীয় নারী দলের ক্রিকেটার রিতু মণি প্রতিদিন সকালবেলা প্রায় ২৫ কিলোমিটার পথ সাইকেল ও স্কুটি চালিয়ে সারিয়াকান্দি থেকে শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামে এসে অনুশীলন করে তারকা হয়েছেন। শারমিন সুলতানা অনুশীলনের জন্য এখনো গাবতলী থেকে এখানে এসে নিয়মিত অনুশীলন করেন। এ স্টেডিয়াম অনুশীলন করেই আজকের তাওহিদ হৃদয় ও তানজিদ তামিম।

অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে দেশের জন্য জয়ের শিরোপা এনেছে। শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামের কারণেই বগুড়া ক্রিকেটে এত সাফল্য অর্জন করেছে। দেশের স্বার্থে, ক্রিকেটের স্বার্থেই যেকোনো মূল্যে বিসিবির সঙ্গে জেলা ক্রীড়া সংস্থার ঝামেলা মিটমাট করে ফেলা দরকার।

বগুড়া জেলা ক্রীড়া সংস্থার সঙ্গে দ্বন্দ্বের জেরে ২ মার্চ শহীদ চান্দু স্টেডিয়াম থেকে মালামাল, জনবল প্রত্যাহারসহ ভেন্যু বাতিলের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে স্টেডিয়ামের মূল মালিক জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের (এনএসসি) কাছে স্টেডিয়ামটি হস্তান্তরের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে চিঠি দেয় বিসিবি। এনএসসি সচিব বরাবর পাঠানো বিসিবির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিন চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এ সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। ওই দিনই শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামে কর্মরত বিসিবির ১৭ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বগুড়া থেকে প্রত্যাহার করে মিরপুরে বিসিবির কার্যালয়ে রিপোর্ট করতে বলা হয়। স্টেডিয়ামে থাকা রোলার, সুপার সপার, পিচ কাভারসহ মাঠ ও খেলার যাবতীয় সরঞ্জাম এবং ড্রেসিংরুমের আসবাব ঢাকায় নিয়ে গেছে বিসিবি।