ভূমিদস্যুরা টাকা দিয়ে সব ম্যানেজ করে: মেয়র আতিকুল

রাজধানীর মিরপুরের জল্লাদখানা বধ্যভূমিতে আজ রোববার আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে মেয়র আতিকুল ইসলাম | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

নিজস্ব প্রতিবেদক: কিছু করতে গেলেই ভূমিদস্যুরা মামলা করে দেন বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম। তিনি বলেছেন, ভূমিদস্যুরা টাকা দিয়ে সবকিছু ম্যানেজ করে নেন। তাঁদের বিরুদ্ধে কথা বলতে হবে।

আজ রোববার দুপুরে রাজধানীর মিরপুরের জল্লাদখানা বধ্যভূমিতে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে মেয়র আতিকুল ইসলাম এসব কথা বলেন। বধ্যভূমিসংলগ্ন এলাকায় ‘মুক্তির সবুজায়ন’ শীর্ষক বৃক্ষরোপণ প্রকল্পের উদ্বোধন করতে এ অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়।

আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘আজকের শিশুরা বড় হয়ে জিজ্ঞাসা করবে, “তোমরা আমাদের জন্য কী রেখে গেছ?” সেই জবাবদিহির জন্য প্রতিজ্ঞা করতে হবে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য গাছের কোনো বিকল্প নেই, মাঠের কোনো বিকল্প নেই, উন্মুক্ত জায়গার কোনো বিকল্প নেই। তাদের জন্য এসব রেখে যেতে হবে।’

খেলার মাঠ উদ্ধারে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার কথা উল্লেখ করে আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘উনি (প্রধানমন্ত্রী) বলেছেন, খেলার মাঠ উদ্ধার করতেই হবে। আপনারা এর আরেকটি জলন্ত প্রমাণ দেখেছেন, গত মাসে তিনি যখন কালশী উড়ালসড়ক উদ্বোধন করতে আসেন। তখন তাঁকে বললাম, যে জায়গায় বসে বক্তব্য দেবেন, সেই জায়গাটাও দখল হয়ে গেছে। তখন তিনি বললেন, এটা বালুর মাঠ না? আমি বললাম, জি, বালুর মাঠ। কিন্তু এখানেও ন্যাশনাল হাউজিং অথরিটি (জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ) বড় বড় বিল্ডিং করার পরিকল্পনা নিয়েছে। এই ১৫ বিঘা জমি আর আমরা দেখতে পাব না। এটা শোনার পর প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে বলেছেন, এই বালুর মাঠে কোনো বিল্ডিং হবে না। এটি খেলার মাঠই থাকবে।’

অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে কথা বলতে হবে উল্লেখ করে অনুষ্ঠানে মেয়র বলেন, ‘পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী যেমন আমাদের শত্রু ছিল, তেমন এখন মাঠ, পার্ক ও খালের জমি দখলদাররা আমাদের শত্রু। অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকতে হবে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য বাসযোগ্য শহর গড়তে মাঠ ও পার্কের বিকল্প নেই। খেলার মাঠকে প্লট আকারে বরাদ্দ দিয়ে ভবন নির্মাণ করা যাবে না।’

মিরপুরের জল্লাদখানা বধ্যভূমিসংলগ্ন এলাকায় চলছে সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

ঢাকা শহরকে পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন রাখতে নগরবাসীকে দায়িত্ব নিতে হবে বলে মনে করেন মেয়র আতিকুল। তিনি বলেন, ঢাকা শহরে যত্রতত্র অবৈধভাবে পোস্টার, রেক্সিন, দেয়ালে লেখা, নামফলক, সাইনবোর্ড, বিলবোর্ড, ব্যানার লাগানোর ফলে সৌন্দর্য ব্যাহত হচ্ছে। নগরী অপরিচ্ছন্ন হয়ে পড়ছে। ঢাকা শহরের সৌন্দর্য রক্ষায় ও স্মার্ট সিটি গড়ে তুলতে এসব বন্ধ করতে হবে।

‘মেট্রোরেল আমাদের রাষ্ট্রীয় সম্পদ। এটি জনগণের সম্পদ। যেখানে আমাদের প্রধানমন্ত্রী মেট্রোরেলে পড়ে থাকা ময়লা নিজ হাতে কুড়িয়ে পরিষ্কার করেছেন। তাঁর কাছ থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদের স্বপ্নের মেট্রোরেল পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে,’ বলেন মেয়র।  

ঢাকা উত্তর সিটির জনসংযোগ শাখা থেকে জানানো হয়, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত অন্যতম স্থান ‘মিরপুর জল্লাদখানা বধ্যভূমি’কে কেন্দ্র করে একটি আধুনিক ও সবুজ শিশুবান্ধব গণপরিসর গড়ে তুলতে উত্তর সিটির উদ্যোগে বেসরকারি সংগঠন শক্তি ফাউন্ডেশন এবং মেটলাইফ ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় জল্লাদখানা স্মৃতিসৌধের বিপরীতে পরিত্যক্ত জমিতে এক হাজার গাছ লাগানো হয়েছে।

শিশুদের জন্য উন্মুক্ত খেলার জায়গায় লাগানো হয়েছে সবুজ ঘাস। এ ছাড়া দুর্গন্ধযুক্ত ও দৃষ্টিকটু আবর্জনা ডাম্পিং করার সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশনকে কার্টুনিস্ট সৈয়দ রাশাদ ইমাম ও সহশিল্পীরা সাজিয়েছেন নতুন সাজে। জল্লাদখানা ও এর পাশের গণপরিসরটিকে আগামী দুই বছর রক্ষণাবেক্ষণ করবে শক্তি ফাউন্ডেশন; যাতে স্থানটি একটি টেকসই সবুজ এলাকায় পরিণত হতে পারে।

ঢাকা উত্তর সিটির ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কাজী জহুরুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী বিপ্লব বড়ুয়া, ঢাকা উত্তর সিটির অঞ্চল-২–এর নির্বাহী কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান, মেটলাইফ বাংলাদেশের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা আলা আহমেদ, শক্তি ফাউন্ডেশনের উপনির্বাহী পরিচালক ইমরান আহমেদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।