শনিবার বিকেলে ময়মনসিংহ সার্কিট হাউজ মাঠে ময়মনসিংহ জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত মহাসমাবেশে বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা | ছবি: ফোকাস বাংলা |
নিজস্ব প্রতিবেদক: তাঁর সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়িয়েছে, দেশকে ডিজিটাল বানিয়েছে—এসব সুযোগ-সুবিধা ব্যবহার করেই বিরোধীরা সরকারের বিরুদ্ধে অপবাদ দিয়ে যাচ্ছে। আজ শনিবার ময়মনসিংহের জনসমাবেশে বক্তব্য দেওয়ার সময় এমন মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপির কোনো এক নেতা সারা দিন মাইক লাগায়ে বসে থাকে। বাংলাদেশটাকে নাকি আমরা ধ্বংস করে দিয়েছি। ময়মনসিংহবাসী আপনাদের কাছে জিজ্ঞেস করি এই যে আমরা ৭৩টি প্রকল্পের উদ্বোধন এবং সব মিলিয়ে ১০৩টি প্রকল্প—এগুলো কি ধ্বংসের নমুনা? ওরা এত মিথ্যা কথা বলে কেন? আসলে মিথ্যা কথা বলা ওদের পেশা।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ময়মনসিংহ বিভাগের সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে আজ ১০৩টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। বিকেলে সার্কিট হাউস মাঠে আয়োজিত জনসভায় ফলক উন্মোচনকালে প্রধানমন্ত্রী ময়মনসিংহ বিভাগে ৫৭০ দশমিক শূন্য ৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ৭৩টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন এবং ২ হাজার ৭৬২ দশমিক ২৭ কোটি টাকা ব্যয়ে আরও ৩০টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা নাকি কিছুই পারি নাই। আজকে যে বাংলাদেশটা ডিজিটাল বাংলাদেশ হয়েছে, এই ডিজিটাল বাংলাদেশের বদোলতে তো এখন দূরে বসেও দেশের মানুষের কথাও বলে, রাজনীতিও করে, সবই করে। আমরা বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়িয়েছি, বিএনপি আমলের দুর্নীতি তা কমিয়ে দিয়েছে। এখন ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ। প্রায় ২৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা আমরা অর্জন করেছি। তার সঙ্গে বিদ্যুতের চাহিদা বাড়ছে। আমরা প্রতিটি ঘর আলোকিত করে রাখতে চাই।’
বিরোধী দল ও সমালোচকদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই বিদ্যুৎ দিয়েছি বলেই তো আজকে কথা বলার সুযোগ পাচ্ছে। আর যদি ডিজিটাল বাংলাদেশ না করতাম, বিদ্যুৎ না বাড়াতাম, তাহলে এত কথা মাইকে আসত কীভাবে। তো আমরা যে কিছুই করি নাই, আমাদেরই করা জিনিস ব্যবহার করে আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে যাচ্ছে। এটা তাদের স্বভাব। লুটপাট, চুরি, দুর্নীতি—এটাই তাদের স্বভাব।’
বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। এই মর্যাদা আমাদের ধরে রাখতে হবে। এই মর্যাদা ধরে রেখে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০৪১ সালের স্মার্ট বাংলাদেশ হবে। আমাদের জনগোষ্ঠী ডিজিটাল পদ্ধতিতে শিক্ষা গ্রহণ করবে, স্মার্ট জনগোষ্ঠী হিসেবে গড়ে উঠবে। আমাদের অর্থনীতি হবে স্মার্ট, আমাদের কৃষি হবে স্মার্ট, আমাদের স্বাস্থ্য হবে স্মার্ট, তৃণমূল পর্যন্ত বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের উন্নত জীবন হবে। প্রত্যেকটা গ্রামের মানুষ শহরের নাগরিক সুবিধা পাবে।’
‘আমার তো চাওয়া, পাওয়ার কিছু নেই। বাবা-মা, ভাই সব হারিয়েছি। যেদিন বাংলাদেশে ফিরে এসেছিলাম ’৮১ সালে নিঃস্ব, রিক্ত হয়ে। আমি জানতাম না কোথায় আমি থাকব, কীভাবে চলব—কোনো চিন্তা করিনি। শুধু একটা চিন্তা করেছি, এই দেশ আমার বাবা স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন। এ দেশের মানুষের ভাগ্য গড়তে হবে। এ দেশের মানুষকে দারিদ্র্যের হাত থেকে মুক্তি দিতে হবে। গৃহহীন মানুষ ঘর দিতে হবে, চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে, শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। মানুষকে উন্নত জীবন দিতে হবে। স্বাধীনতার সুফল প্রতি ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে হবে। এই স্বাধীনতা আমরা লাখো শহীদের রক্তে পেয়েছি। এই স্বাধীনতা কোনো মতে ব্যর্থ হতে দেওয়া যায় না।’ যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বিরোধী দলের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘দুর্ভাগ্যের বিষয়, আমাদের যারা তথাকথিত বিরোধী দল আছে, মিথ্যা বলে বলে এই স্বাধীনতার সুফল ব্যর্থ করতে চায়। তারা তা পারবে না। বাংলাদেশ আজ এগিয়ে যাচ্ছে, বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলব।’