রোহিঙ্গা শিবির | ফাইল ছবি

নুপা আলম, কক্সবাজার থেকে ফিরে: কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার রাজাপালং ইউনিয়নের কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প। এর ভেতরে লম্বাশিয়া গ্রাম। এই গ্রামে চারশ পরিবারের বাস।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কাঁটাতারের বেষ্টনীর কারণে গ্রামের বাসিন্দারা এক রকম বন্দি জীবনযাপন করছেন। অসুস্থ হলে চিকিৎসকের কাছে, সংসারের কেনাকাটা করতে দীর্ঘ পথ হেঁটে যেতে হয়। আসা-যাওয়ার ক্ষেত্রে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) নানা জেরার মুখে পড়তে হয়।

শুধু লম্বাশিরা গ্রাম নয়, উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি ক্যাম্পের অন্তত ১২শ পরিবার কাঁটাতারের বেষ্টনীর কারণে স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে পারছে না, যাদের সংখ্যা ১০ হাজারের বেশি।

স্থানীয়দের অভিযোগ- প্রতিদিন নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে তাদের। পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের কারণে তারা আতঙ্কিত। রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো অন্যত্র স্থানান্তর করতে কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তারা। কথা হয় লম্বাশিয়া গ্রামের বৃদ্ধা নূর জাহান বেগমের সঙ্গে।

তিনি বলেন, ‘এখন আর আমাদের কোনো স্বাধীনতা নেই। রোহিঙ্গাদের কারণে জীবন বন্দি হয়ে গেছে কাঁটাতারের বেষ্টনীতে। অসুস্থ স্বামীকে নিয়ে হাসপাতালে যেতে-আসতে পথে পথে তল্লাশিচৌকি, সেখানে নানা প্রশ্নের জবাব দিতে হয়। নিজেদের জমির ফসল আনতে যাওয়ার ক্ষেত্রেও একই পরিস্থিতি। এর সঙ্গে রোহিঙ্গাদের মধ্যে মারামারি, খুনাখুনি লেগেই আছে। সব মিলিয়ে চরম আতঙ্কের মধ্যে জীবনযাপন করছি।’

একই এলকার নাজির হোসেন বলেন, ‘রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নিরাপত্তায় কাঁটাতারের বেষ্টনী দেওয়াটা জরুরি ছিল। কিন্তু আমরা স্থানীয় বাসিন্দারাও এখানে বন্দি হয়ে পড়ছি।’ তিনি বলেন, ‘আমার মেয়ে অনার্স পাস করে ঘরে আসে। ইতোমধ্যে কয়েকটি বিয়ের প্রস্তাব এলেও রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ভেতরে গাড়ি নিয়ে প্রবেশ করা যায় না- এই অজুহাতে বিয়ে হচ্ছে না।’

স্কুলছাত্র রাহাত জানায়, আগে যে রাস্তা ব্যবহার করে তারা স্কুলে যেত এখন ওই রাস্তা বন্ধ। প্রায় আধা ঘণ্টা ঘুরে স্কুলে যেতে হয়। আসা-যাওয়ার ক্ষেত্রে রয়েছে পথে পথে তল্লাশি। এ থেকে তারা মুক্তি চান।

রাজাপালং ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন জানান, এ গ্রামে চারশ পরিবারের মানুষের চলাফেরা, জরুরি প্রয়োজনে বের হওয়া, চিকিৎসা, কেনাকাটায় নানা প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে স্থানীয় পরিবারগুলোকে রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে আলাদা করে নেওয়া জরুরি। রোহিঙ্গাদের সরিয়ে বা ক্ষেত্রবিশেষে কিছু স্থানীয় পরিবারকে সরিয়ে অন্যত্র নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।

পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, তার ইউনিয়নটির বিশাল এলাকাজুড়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্প। যেখানে কাঁটাতারের বেষ্টনীর কবলে রয়েছে স্থানীয় সাড়ে ৩শ পরিবার। তদের স্বাধীন চলাফেরার জটিলতা নিয়ে প্রশাসনের সংশ্লিষ্টদের লিখিতভাবে একাধিকবার জানানো হয়েছে। কার্যত কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। দ্রুত এ সমস্যার একটা কার্যকরী সমাধানের দাবি জানান তিনি।

রোহিঙ্গা শিবির | ফাইল ছবি

বিষয়টি স্বীকার করেছেন রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নিরাপত্তায় নিয়োজিত এপিবিএনের কর্মকর্তাও। ৮ এপিবিএনের অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মো. আমির জাফর বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তার জন্য বেষ্টনী এবং তল্লাশিচৌকি স্থাপন করা হয়েছে। এখানে স্থানীয় পরিবার থাকার কারণে ক্যাম্প থেকে বের হতে চেকপোস্টে এপিবিএন সদস্যদের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হচ্ছে। নিরাপত্তার স্বার্থে স্থানীয়রাও যাচাইয়ের আওতায় পড়েছে। এ নিয়ে সাময়িক অসুবিধা হলেও নিরাপত্তার জন্য তা জরুরি।’

কক্সবাজারের অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. সামছু-দ্দৌজা বলেন, ‘কাঁটাতারের বেষ্টনীতে কিছু স্থানীয় পরিবার বসবাস করছেন দীর্ঘদিন ধরে। সেখানে সাময়িক কিছু অসুবিধা রয়েছে বলে নানাভাবে জানা গেছে। এ ব্যাপারে স্থানীয়রা লিখিতভাবে আবেদন করেছেন কি না জানা নেই। তবে স্থানীয়দের সেখান থেকে সরানো সম্ভব না। এক্ষেত্রে রোহিঙ্গাদের কীভাবে আলাদা করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা চলছে।’