স্ত্রীকে অসামাজিক কাজে বাধ্য করায় খুন হন রূপপুর প্রকল্পের গাড়িচালক

সম্রাট খান | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রতিনিধি ঈশ্বরদী: স্ত্রীকে অসামাজিক কাজে বাধ্য করায় রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে নিয়োজিত একটি বিদেশি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ভাড়াচালিত প্রাডো গাড়ির চালক সম্রাট খান (২৯) খুন হন। পাবনা জেলা আমলি আদালতে এই স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে মমিন-সীমা দম্পতি।

বুধবার রাতে ঈশ্বরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অরবিন্দ সরকার এ তথ্য জানান। এদিকে মঙ্গলবার বিকালে মমিনের স্ত্রী সীমা খাতুনও একই আদালতে স্বীকারোক্তি দেয়।

পুলিশ কর্মকর্তা অরবিন্দ সরকার জানান, মমিন ও নিহত সম্রাটের মধ্যে বন্ধুত্ব হাওয়ায় তাঁদের মধ্যে পারিবারিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে একদিন সম্রাট সীমাকে কৌশলে অচেতন করে নগ্ন ছবি ও ভিডিও ধারণ করে রাখে। পরবর্তীতে সেই ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে সম্রাট বার বার সীমাকে অবৈধ শারীরিক সম্পর্ক করতে বাধ্য করতো। এতে সম্রাটের ওপর মমিন-সীমা দম্পতি চরম ক্ষুব্ধ ছিলো। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে তাঁরা সুযোগ খুঁজতে থাকে।

গ্রেপ্তারের পর আদালতে হাজির করা হয় সম্রাট খান হত্যা মামলার আসামি আব্দুল মমিনকে। মঙ্গলবার বিকেলে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

জবানবন্দিতে বলেছে, ২৩ মার্চ রাতে সম্রাটকে পরিকল্পনা করে মমিনের বাড়িতে ডেকে আনা হয়। রাত ৯টার দিকে রাতের খাওয়া-দাওয়া শেষে সম্রাট মাথা ব্যথার কথা বলে বিছানায় শুয়ে পড়ে। পরে তিনি (সম্রাট) মমিনকে মাথা ব্যথা দূর করার ওষুধ আনতে বলেন। মমিন ওষুধ আনতে বের হলে সম্রাট সীমাকে জাপটে ধরে। সেই মুহূর্তে দেখে ফেলে মমিন। একপর্য়ায়ে সুযোগ বুঝে মমিন রান্নাঘরে লুকিয়ে রাখা লোহার হাতুড়ি এনে সম্রাটের মাথায় আঘাত করে। এরপর দম্পতি মিলে সম্রাটকে নাকে-মুখে কাপড় পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে মৃত্যু নিশ্চিত করে। পরে মমিন সম্রাটের লাশ বস্তায় ভরে গাড়িতে করে নিয়ে যায়।

গাড়িচালক সম্রাট খান ঈশ্বরদী উপজেলার মধ্য অরনকোলা এলাকার আবু বক্কার সিদ্দীকের ছেলে। তিনি রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে নিয়োজিত একটি বিদেশি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ভাড়ায়চালিত প্রাডো গাড়ির চালক ছিলেন। স্থানীয় ব্যক্তিদের খবরের ভিত্তিতে গত শনিবার সকালে কুষ্টিয়া কুমারখালী উপজেলায় পদ্মাপাড় থেকে পুলিশ তাঁর লাশ উদ্ধার করে। 

এ ঘটনায় নিহত সম্রাটের বাবা আবু বক্কার বাদী হয়ে আবদুল মমিন ও সীমা খাতুনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও তিন-চারজনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেছেন।

সম্রাট খান হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার আসামি সীমা খাতুনকে আদালতে তোলা হয়। রোববার দুপুরে পাবনা জেলা চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

এরআগে লাশ উদ্ধারের ঘটনায় করা মামলায় গ্রেপ্তার আবদুল মমিনকে এক দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছেন আদালত। মঙ্গলবার বিকেলে তাঁকে পাবনা জেলা আমলি আদালত-২-এ হাজির করে পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হলে এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন বিচারক।

তাঁর আগে রোববার বিকেলে আবদুল মমিনের স্ত্রী সীমা খাতুনকে একই আদালতে হাজির করে পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়। আদালত তাঁর দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ড শেষে তাঁকে মঙ্গলবার বিকেলে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

এর মধ্যে গত রোববার রাতে র‍্যাব-১২-এর সিরাজগঞ্জ ক্যাম্পের সদস্যরা মমিনকে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করেন। পরে তাঁকে পাবনার ঈশ্বরদী থানায় হস্তান্তর করা হয়।

এদিকে সম্রাট খানকে হত্যায় ব্যবহৃত হাতুড়ি ও তাঁর ব্যবহৃত মুঠোফোনটি উদ্ধার করার কথা জানিয়েছে পুলিশ। এগুলো মমিন-সীমা দম্পতির বাড়ির একটি পরিত্যক্ত সেপটিক ট্যাংকে লুকানো ছিল।

সম্রাট খান হত্যায় হাতুড়ি এবং তাঁর ব্যবহৃত মোবাইল উদ্ধার করেছে ঈশ্বরদী থানা পুলিশ | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন