সার্কাসের কমেডিয়ান আব্দুল মজিদ | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রতিনিধি বেড়া: বিচিত্র এই জগতে কত বিচিত্র পেশায় নিয়োজিত থাকে মানুষ। জীবন আর জীবিকার তাগিদে সার্কাসের কমেডিয়ান চরিত্রের আড়ালে শহরে-গ্রামে লুকিয়ে আছে অসংখ্য মানুষের চেহারা। মানুষকে ক্ষণিকের বিনোদন দিতে নিজেকে উজাড় করা সেই সব মানুষের জীবনে নেই আনন্দ। বিনোদনের সেই ফেরিওয়ালাদের একজন আব্দুল মজিদ (৫০)। 

দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ভ্রাম্যমাণ সার্কাসে মানুষকে বিনোদিত করেই চলেছে মজিদের জীবন। তার বাড়ি নীলফামারীর জলডাঙ্গা উপজেলার খঁচিমাথা গ্রামে। প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে বুঝতে পারেন তিনি আর পাঁচজন মানুষের মতো স্বাভাবিক নন। তার উচ্চতা প্রায় দুই ফুট। আশপাশের মানুষের চরম অবহেলায় কাটে তার জীবন। হতাশ মজিদ এক পর্যায়ে বেছে নেন সার্কাসের কমেডিয়ান চরিত্রকে। নানা উৎসবে মানুষকে আনন্দ দিতে ডাক পড়ে তার। সেটাও নিয়মিত নয়। প্রচণ্ড গরমের মধ্যেও দিনভর ও গভীর রাত পর্যন্ত মুখোশ পরে অন্যকে বিনোদন দিয়ে আসছেন তিনি।

সম্প্রতি আব্দুল মজিদের দেখা মেলে পাবনার বেড়া উপজেলায় ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প মেলার ‘দি গোল্ড স্টার সার্কাস’ মাঠে। তিনি প্রতিদিনের বাংলাদেশকে জানান, সংসারে তার দুই সন্তান ও স্ত্রী রয়েছেন। আগে প্রতিদিন পারিশ্রমিক ছিল ২০০ থেকে ৩০০ টাকা। এখন ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। সামান্য এই আয়েই চলে তার চার সদস্যের সংসার। অন্য কোনো কাজ জানেন না। বছরের সব দিন কমেডিয়ানের কাজ জোটে না। তখন অনাহারে, অর্ধাহারে কাটাতে হয় স্ত্রী-সন্তানকে।

মজিদ বলেন, বছর কয়েক আগেও বিনোদন বলতে মানুষ বুঝত সার্কাসের খেলা, কৌতুক আর তাদের জোকারি। তখন ইনকাম ভালোই ছিল। বর্তমানে সার্কাসের খেলার চল প্রায় উঠেই গেছে। শিল্পী সমিতিতেও তেমন একটা কদর নেই। একটা প্রতিবন্ধী কার্ড আছে, সেখান থেকে সামান্য কিছু টাকা পান, তা দিয়ে সংসার চলে না। মেয়ে ক্লাস টেনে পড়ে। অভাবের সংসারে হয়তো বেশিদূর পড়াশোনা করানো যাবে না। মেয়েকে বিয়ে দিতে হবে। অনেক খরচের ব্যাপার। ছেলেটার বয়স ১১ বছর। ওকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন। পড়লেখা করিয়ে ডাক্তার বানাব।

দি গোল্ড স্টার সার্কাসের পরিচালক আরিফ হোসেন বলেন, ‘সারা দেশেই আমরা বিভিন্ন মেলায় সার্কাস খেলা পরিচালনা করি। সার্কাস চালু থাকলে তাদের তেমন একটা কষ্ট হওয়ার কথা নয়।’

মেলায় ঘুরতে আসা এক দর্শনার্থী বলেন, মজিদের মতো হাজারো মজিদ রয়েছে এই শহরে। তারাও এক ধরনের শিল্পী, তাদেরও মূল্যায়ন হওয়া উচিত।