১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে ঢাকায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর চালানো গণহত্যা | ছবি: সংগৃহীত

নিজস্ব প্রতিবেদক: ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ ও পরের ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধে গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আজও মেলেনি। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা থেকে এই গণহত্যার স্বীকৃতি মিললেও আসেনি জাতিসংঘ থেকে।

তবে স্বীকৃতি পেতে নানা ধরণের চেষ্টা চালানো হচ্ছে সরকারের পক্ষ থেকে।  

২০১৭ সালে ১১ মার্চ জাতীয় সংসদে ২৫ মার্চকে জাতীয় গণহত্যা দিবস হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়। সেই সময় থেকে ২৫ মার্চ বাংলাদেশে জাতীয় গণহত্যা দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে। তবে তার আগেই ২০১৫ সালে জাতিসংঘ ৯ ডিসেম্বরকে আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস হিসেবে ঘোষণা দেয়।

১৯৪৮ সালের ৯ ডিসেম্বর জাতিসংঘের ‘জেনোসাইড কনভেনশন’ গৃহীত হয়। সে কারণে ওই দিনটিকেই আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস হিসেবে ঘোষণা দেয় জাতিসংঘ। এর ফলে জাতিসংঘ থেকে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের গণহত্যার স্বীকৃতির বিষয়টি জটিল হয়ে পড়ে।

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী অপারেশন সার্চ লাইট নামে অভিযান শুরু করে। ওই এক রাতেই ঢাকায় নিহত হন অর্ধ লাখ মানুষ। এরপর মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাসে পাকিস্তানি বাহিনী ব্যাপকভাবে গণহত্যা চালায়। মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হন ৩০ লাখ মানুষ। ১৯৭১ সালে এত বড় গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আজও মেলেনি।

মুক্তিযুদ্ধের ৫২ বছর পর এখনো গণহত্যার স্বীকৃতির জন্য কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সরকার। কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংস্থা ও সংগঠন থেকেও সেই ভয়াবহ গণহত্যার স্বীকৃতি অবশ্য মিলেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের লেমকিন ইনস্টিটিউট ফর জেনোসাইড প্রিভেনশন ১৯৭১ সালের গণহত্যার স্বীকৃতি দিয়েছে। সংস্থাটি জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে ওই গণহত্যার স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি জানিয়েছে।  

এছাড়া বিশ্বজুড়ে গণহত্যা নিয়ে কাজ করা সংস্থা জেনোসাইড ওয়াচও ইতোমধ্যেই ১৯৭১ সালের গণহত্যার স্বীকৃতি দিয়েছে। একই সঙ্গে এ গণহত্যার স্বীকৃতির জন্য জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে প্রস্তাব পাসেরও আহ্বান জানিয়েছে।

১৯৭১ সালের গণহত্যার স্বীকৃতি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দুই কংগ্রেসম্যানও। তারা যুক্তরাষ্ট্রের হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসে স্বীকৃতি দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে একটি আইন প্রস্তাবও উপস্থাপন করেছেন।

এছাড়াও ১৯৭১ সালের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির লক্ষ্যে কানাডিয়ান মিউজিয়াম ফর হিউম্যান রাইটসে (সিএমএইচআর) আবেদন জানিয়েছে বাংলাদেশ। কানাডায় অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশন এই আবেদন করেছে।  

সিএমএইচআর এখন বাংলাদেশের আবেদনটি পর্যালোচনা করছে।

এদিকে, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের গণহত্যার বিষয়টি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নিকট তুলে ধরার লক্ষ্যে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বিভিন্ন দেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বিষয়টি উত্থাপন অব্যাহত রয়েছে। এছাড়াও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি জেনোসাইড কর্ণারও প্রতিষ্ঠা করেছে। জেনোসাইড কর্ণারটি বিদেশী কূটনীতিকদের নিয়মিত পরিদর্শনও করানো হয়।

এ নিয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, পাঁচ বছর আগে জাতীয় সংসদে আমরা ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তখন থেকেই বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আমাদের দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে আমরা গণহত্যার বিষয়টি উল্লেখ করার চেষ্টা করি। এতদিন পরেও সেই গণহত্যার ঘটনা শুনে মানুষ ধাক্কা খায়। আঁতকে ওঠে। সেই ঘটনা এখনো সবাইকে জানানো জরুরী।  

প্রতিমন্ত্রী বলেন, আগামী কয়েক বছরের মধ্যে বিশ্বের বেশিরভাগ দেশের কাছ থেকে অফিসিয়াল স্বীকৃতি না পেলেও মানুষের কাছ থেকে স্বীকৃতি পাবো।  

এ জন্য মিডিয়া ও প্রবাসীদের সহযোগিতা প্রয়োজন বলেও মন্তব্য করেন শাহরিয়ার আলম।