দোভাষীকে প্রত্যাহারের দাবিতে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছেন শ্রমিকেরা।সোমবার সকালে পাবনার ঈশ্বরদীর একটি পোশাক কারাখানায় | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রতিনিধি ঈশ্বরদী: পাবনার ঈশ্বরদীতে রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকার (ইপিজেড) নাইকো ইন্টারন্যাশনাল লিমিডেট নামের জাপানি একটি পোশাক তৈরির কারখানার দোভাষীকে প্রত্যাহারের দাবিতে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছেন শ্রমিকেরা। আজ সোমবার সকালে কারাখানায় এসে কাজে যোগ না দিয়ে তাঁরা এ কর্মসূচি পালন করেন।

ইপিজেড কর্তৃপক্ষ ও প্রত্যক্ষদর্শী ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জাপানি মালিকানাধীন কারখানাটিতে প্রায় ১ হাজার ৫০০ নারী কর্মী কাজ করেন। তাঁদের পরিচালনা করেন সুইটি আক্তার নামের বাংলাদেশি এক দোভাষী। দীর্ঘদিন ধরে এই নারীর সঙ্গে প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের বিরোধ চলছিল। এর জেরেই আজ সকালে কারখানার নারী কর্মীরা এসে কাজে যোগ না দিয়ে তাঁরা দোভাষী সুইটি আক্তারের প্রত্যাহারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেন। অবস্থা বেগতিক দেখে ইপিজেড কর্তৃপক্ষ সেখানে পুলিশ মোতায়েন করে। এরপরও শ্রমিকেরা দিনভর সেখানে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন। পরে ইপিজেড কর্তৃপক্ষ দোভাষী সুইটির বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলে বিকেলে শ্রমিকেরা বাড়িতে ফেরেন।

বিক্ষুব্ধ শ্রমিকেরা জানান, কারখানার দোভাষী সুইটি আক্তার একজন বদমেজাজি নারী। তিনি কথায়-কথায় শ্রমিকদের গায়ে হাত তোলেন, মারধর করেন। শুক্রবার ছুটির দিনে ওভারটাইম করতে শ্রমিকদের বাধ্য করেন। কিন্তু ঠিকমতো ওভারটাইমের টাকাও পরিশোধ করেন না। প্রতিষ্ঠান থেকে ওভারটাইমের জন্য প্রতি ঘণ্টায় ৪২ টাকা নির্ধারণ করা থাকলেও তিনি অনিয়মিত শ্রমিকদের ২৬ টাকা ৯০ পয়সা এবং নিয়মিত শ্রমিকদের ৩৫ টাকা করে দেন। শ্রমিকদের কোনো স্বজন মারা গেলেও তিনি ছুটি দেন না। উল্টো কোনো শ্রমিক কিছু ভুল করলে জরিমানার অজুহাতে ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত বেতন থেকে কেটে নেন।

বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের দাবি, দোভাষী সুইটি আক্তার নারী শ্রমিকদের মাতৃত্বকালীন ছুটি পর্যন্ত দেন না। মাতৃত্বকালীন ছুটি চাইলে তিনি চাকরিচ্যুত করেন। তাঁর অত্যাচারে কারখানার প্রতিটি শ্রমিক অতিষ্ঠ। এর ফলে সবাই কারখানা ছেড়ে এই বিক্ষোভ করছেন। যতক্ষণ পর্যন্ত দোভাষীকে প্রত্যাহার না করা হবে, ততক্ষণ তাঁরা কাজে যোগ দেবেন না।

এ বিষয়ে ঈশ্বরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অরবিন্দ সরকার বলেন, খবর পেয়ে ইপিজেড এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। দিনভর বিক্ষোভ শেষে বিকেলে শ্রমিকেরা বাড়িতে ফিরেছেন। পরিস্থিতি বর্তমানে শান্ত।

নাকানোর প্রশাসনিক কর্মকর্তা মেহেদী হাসানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এসেছে। আমরা ইতিমধ্যে বিষয়টি নিয়ে মিটিং করেছি। আশা করছি অল্প সময়ের মধ্যেই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।

বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষ (বেপজা) ঈশ্বরদী শাখার মহাব্যবস্থাপক (জিএম) আনিসুর রহমান বলেন, দোভাষী অপসারণের দাবি জানিয়ে শ্রমিকেরা একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। শ্রমিক ও মালিক উভয়ের স্বার্থ বিবেচনায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করছেন। আশা করা হচ্ছে, খুব দ্রুত সমস্যার সমাধান হবে। আগামীকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে শ্রমিকেরা কাজে যোগ দেবেন।