মেডিকেল ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের সদস্য গ্রেপ্তার

মেডিকেল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতি ও প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের সদস্য অভিযোগে নয়ন ইসলাম নামের এক তরুণকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন 

প্রতিনিধি রাজশাহী: মেডিকেল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতি ও প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের এক সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে রাজশাহী মহানগর গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) পুলিশ। সোমবার যশোর জেলার বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের সময় বেনাপোল ইমিগ্রেশন পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে। পরে গতকাল মঙ্গলবার তাঁকে রাজশাহীতে আনা হয়।

গ্রেপ্তার ব্যক্তির নাম নয়ন ইসলাম (২৫)। তিনি রাজশাহী জেলার বাগমারা থানার অচিনঘাট এলাকার আজগর হোসেন মন্ডলের ছেলে। নয়ন রাজশাহী মহানগরীর বোয়ালিয়া থানা এলাকায় থাকতেন। এ বিষয়ে গতকাল বুধবার দুপুরে মহানগর পুলিশের সদর দপ্তরে সংবাদ সম্মেলন করেন রাজশাহী মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) বিজয় বসাক।

সংবাদ সম্মেলনে বিজয় বসাক বলেন, চলতি বছর ২৩ ফেব্রুয়ারি একটি টেলিভিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশব্যাপী আসন্ন মেডিকেল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস, জালিয়াতির মাধ্যমে ভর্তির সুযোগ করে দেওয়ার জন্য একটি চক্র অপতৎপরতা চালাচ্ছে। তাঁরা মেডিকেল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি–ইচ্ছুক এবং চাকরিপ্রার্থীদের প্রলোভন দেখিয়ে প্রার্থীদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। চক্রটি রাজশাহীতে অবস্থান করছে বলেও তাঁরা জানতে পারেন। তাঁরা রাজশাহী নগরের বিভিন্ন কোচিং সেন্টারের মালিকদের সহযোগিতায় মুঠোফোনের মাধ্যমে বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি–ইচ্ছুক ও চাকরিপ্রত্যাশীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁদের পরীক্ষার প্রবেশপত্রের অনুলিপি নেন।

সংবাদ সম্মেলনে বিজয় বসাক আরও বলেন, চুক্তি অনুযায়ী তাঁদের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার মূল সনদ, রেজিস্ট্রেশন কার্ড সংগ্রহসহ প্রাথমিক খরচ বিকাশ, রকেট এবং নগদ অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে সংগ্রহ করতেন ওই চক্রের সদস্যরা।

পরে এ বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে রাজশাহী মহানগর ডিবি পুলিশকে নির্দেশ দেন রাজশাহী পুলিশ কমিশনার। সে অনুযায়ী গত ২৪ ফেব্রুয়ারি বিকেল সাড়ে চারটার দিকে রাজশাহী নগরের পিজি টাওয়ারের দশমতলায় অভিযান চালালে জালিয়াত চক্রের সদস্যরা কৌশলে পালিয়ে যান। ভবনের মালিকের মাধ্যমে পুলিশ ভাড়াটিয়ার নাম জানতে পারেন। ওই ভাড়াটিয়া নয়ন ইসলাম চিকিৎসক পরিচয় দিয়ে সহযোগীদের নিয়ে থাকতেন।

নয়নসহ অন্য সদস্যরা যাতে বিদেশে পালিয়ে যেতে না পারেন, সে জন্য ২৬ ফেব্রুয়ারি দেশের সব বিমানবন্দর ও স্থলবন্দরগুলোতে বিশেষ পত্র পাঠানো হয়। তবে নয়ন এর আগেই ভারতে পালিয়ে যান। পরে গত সোমবার নয়ন যশোর জেলার বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশকালে বেনাপোল ইমিগ্রেশন পুলিশ তাঁকে আটক করে বেনাপোল পোর্ট থানায় হস্তান্তর করে।

পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার হওয়া নয়ন জানিয়েছেন, প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রে তিনি ও তাঁর সহযোগী পলাতক রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফোকলোর বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী সনেটসহ তিন-চারজন আছেন। তাঁরা বিভিন্ন কোচিং সেন্টারের সঙ্গে যোগাযোগ করে চাকরিপ্রার্থী, মেডিকেল কলেজ ও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি–ইচ্ছুক প্রার্থীদের সঙ্গে মুঠোফোনের বিভিন্ন অ্যাপসের মাধ্যমে যোগাযোগ করেন। তাঁদের চাকরি দেওয়ার কথা বলে এবং মেডিকেল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আশ্বাস দিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেন।

বিজয় বসাক বলেন, পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে। গ্রেপ্তার নয়নসহ পলাতক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে নগরের বোয়ালিয়া মডেল থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়েছে।