ঈশ্বরদী বিমানবন্দর | ফাইল ছবি

মনজুরুল ইসলাম, ঢাকা: রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (ইপিজেড)সহ পাবনায় চলমান বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প গুরুত্ব বাড়িয়েছে ঈশ্বরদীর। এতে বন্ধ থাকা ঈশ্বরদী বিমানবন্দর আবারও চালুর দাবি উঠেছে বিভিন্ন মহল থেকে। কিন্তু দেশে নির্মাণাধীন প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ঘিরে উড্ডয়নমুক্ত এলাকার (নো ফ্লাই জোন) বিধিনিষেধ এই বিমানবন্দরে আবার বাণিজ্যিক ফ্লাইট কার্যক্রম চালুর ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে।

দেশে কার্যক্রম পরিচালনা করা বেসরকারি এয়ারলাইনসগুলো ঈশ্বরদী বিমানবন্দরে ফ্লাইট চালু করতে আগ্রহী। বেসরকারি উড়োজাহাজ পরিবহন সংস্থা নভোএয়ারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মফিজুর রহমান এ প্রসঙ্গে বলেন, পাবনায় রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প ছাড়াও আরও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কৃষিভিত্তিক শিল্প রয়েছে। ফলে ঈশ্বরদী বিমানবন্দরে বাণিজ্যিক ফ্লাইট পরিচালনা লাভজনক হবে। এ ছাড়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিমানবন্দরটি যে দূরত্বে রয়েছে, তাতে নিরাপত্তা নিশ্চিত করে ফ্লাইট পরিচালনা করতে কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়। এ জন্য বেসরকারি এয়ারলাইনসগুলো ঈশ্বরদী বিমানবন্দর চালুর জন্য বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়কে প্রস্তাব দিয়েছে।

এ ছাড়া সড়কপথে যাতায়াত সময়সাপেক্ষ হওয়ায় ঈশ্বরদী বিমানবন্দর চালুর দাবি জানিয়েছেন পাবনাসহ আশপাশের কয়েকটি জেলার মানুষ। তাঁরা বলছেন, বিমানবন্দরটি চালু হলে পাবনা, নাটোর ও কুষ্টিয়া জেলার মানুষ আকাশপথে খুব কম সময়ে যাতায়াত করতে পারবেন। যোগাযোগ সহজ হলে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডও বাড়বে।

২০১৩ সালের ৩০ অক্টোবর ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ ঈশ্বরদী বিমানবন্দর থেকে ফ্লাইট পরিচালনা শুরু করে। কিন্তু ছয় মাস ১১ দিন চালু থাকার পর ২০১৪ সালের ২৯ মে আবার বন্ধ হয়ে যায় এটি | ফাইল ছবি

২০২১ সালের ১৫ অক্টোবর বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী ঈশ্বরদী বিমানবন্দর পরিদর্শন করেন। একই বছরের ২৮ নভেম্বর জাতীয় সংসদে তিনি জানান, বিভিন্ন মহলের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সরকার ঈশ্বরদী বিমানবন্দর সংস্কার ও পুনরায় চালুর পরিকল্পনা করছে।

সূত্র জানায়, ঈশ্বরদী বিমানবন্দরের জন্য ৪৩৬ দশমিক ৬৫ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। এর মধ্যে বর্তমানে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) দখলে থাকা ১৪৫ দশমিক ৯১ একর জমিতে বিমানবন্দরের টার্মিনাল ভবন, রানওয়ে, ট্যাক্সিওয়ে, অ্যাপ্রোন, নেভিগেশন ও সংযোগ সরঞ্জাম, কর্মকর্তাদের আবাসিক এলাকা এবং বিমানবন্দরে প্রবেশের রাস্তা রয়েছে। বিমানবন্দরে বিদ্যমান রানওয়ের দৈর্ঘ্য ৪ হাজার ৭০০ ফুট, প্রস্থ ৭৫ ফুট, যা দেশীয় এয়ারলাইনসগুলোর অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট কার্যক্রমে ব্যবহৃত উড়োজাহাজগুলোর জন্য উপযুক্ত নয়। বাণিজ্যিক ফ্লাইট পরিচালনার জন্য বিদ্যমান রানওয়ের দৈর্ঘ্য আরও অন্তত ২০০ ফুট বাড়াতে হবে। পাশাপাশি বিমানবন্দরটির ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা আধুনিকায়নের পাশাপাশি অন্যান্য অবকাঠামোও সংস্কার করতে হবে।

বেবিচক সূত্রে জানা গেছে, ঈশ্বরদী বিমানবন্দরটি রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে মাত্র আট কিলোমিটার দূরে। এ কারণে বিমানবন্দরটির বাণিজ্যিক ফ্লাইট কার্যক্রম ও ওভার ফ্লাইং উড়োজাহাজগুলোর গতিপথের বিষয়ে শুরুতেই রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করে বেবিচক। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ঈশ্বরদী বিমানবন্দরের বাণিজ্যিক ফ্লাইট কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে। বর্তমানে বিশেষ প্রয়োজনে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সেনাবাহিনীর কন্টিনজেন্টের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের অনাপত্তি থাকলে ফ্লাইট চলাচলের অনুমতি দিচ্ছে বেবিচক। তবে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি চালু হলে এই বিমানবন্দর উড্ডয়নমুক্ত এলাকার আওতায় পড়তে পারে। এ কারণে ঈশ্বরদী বিমানবন্দরের বাণিজ্যিক ফ্লাইট কার্যক্রমকে অদূর ভবিষ্যতে অনিশ্চয়তায় ফেলতে পারে।

এ প্রসঙ্গে বেবিচকের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান বলেন, রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রের কারণে বর্তমানে ঈশ্বরদী বিমানবন্দর বন্ধ রাখা হয়েছে। বিদ্যুৎকেন্দ্রটি চালু হলে নিরাপত্তার বিষয়গুলো খতিয়ে দেখা হবে। এর আগে বাণিজ্যিক ফ্লাইট চালুর বিষয়ে কোনো নিশ্চয়তা দেওয়া যাচ্ছে না। তা ছাড়া বাণিজ্যিক ফ্লাইট কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ঈশ্বরদী বিমানবন্দরের রানওয়ে ও অন্যান্য অবকাঠামো আধুনিকায়ন করতে হবে।

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ঘিরে উড্ডয়নমুক্ত এলাকার বিষয়ে জানতে চাইলে বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রধান প্রকৌশলী ড. আবদুর রাজ্জাক মঙ্গলবার বলেন, কেন্দ্রটি স্পর্শকাতর স্থাপনা। এই বিবেচনায় বিদ্যুৎকেন্দ্র এলাকার ওপরে উড্ডয়নমুক্ত এলাকা ঘোষণার বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে। তবে উড্ডয়নমুক্ত এলাকা কতটুকু হবে, তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, ঈশ্বরদী অর্থনৈতিক অঞ্চল, বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট অন্য সবার সঙ্গে কথা বলে এটি চূড়ান্ত করা হবে।

উল্লেখ্য, ব্রিটিশ আমলে পাবনার ঈশ্বরদী বিমানবন্দর নির্মিত। ১৯৬২ থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত ঈশ্বরদী-ঢাকা ফ্লাইট চলাচল ছিল। এরপর বন্ধ হয়ে যায়। পরে প্রায় চার কোটি টাকা ব্যয়ে সংস্কার করে ১৯৯৪ সালে বিমানবন্দরটি আবার চালু করা হয়। কিছু দিন উড়োজাহাজ চলাচলের পর যাত্রীসংকটে আবার বন্ধ হয়ে যায়। এরপর দীর্ঘ ১৭ বছর পর ২০১৩ সালে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ ঈশ্বরদী বিমানবন্দর থেকে ফ্লাইট পরিচালনা শুরু করে। তবে ছয় মাস ১১ দিন পর যাত্রীসংকটে ২০১৪ সালের ২৯ মে এই বিমানবন্দরে আবার বাণিজ্যিক ফ্লাইট চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।