অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিচ্ছেন রেলপথমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন। শুক্রবার দুপুরে  ঈশ্বরদী জংশন স্টেশন প্ল্যাটফর্মের কৃষ্ণচূড়া চত্বরে  | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন  

প্রতিনিধি ঈশ্বরদী: রেলপথ মন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন বলেছেন, বিএনপি-জামায়াত ধর্মের নামে মানুষ হত্যাসহ হাজার হাজার গ্রাম জ্বালিয়ে দিয়েছে। ধর্মের আড়ালে এখনও তারা আবার সেই অবস্থানটা তৈরি করতে চায়। এ বিষয়ে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।

বৃহস্পতিবার দুপুরে পাবনার ঈশ্বরদী জংশন স্টেশন প্ল্যাটফর্মের কৃষ্ণচূড়া চত্বরে পুনর্নির্মিত ফুটওভার ব্রিজ ও আধুনিক পাবলিক টয়লেটের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ রেলওয়ে লোকসানের প্রতিষ্ঠান নয়, এটা লাভজনক প্রতিষ্ঠান। এ জন্য দেশের সব জেলাকে রেল যোগাযোগের আওতায় আনতে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। দেশের সব মিটার গেজ রেললাইন ব্রডগেজে উন্নীত করা হচ্ছে। আর ট্রেনের সিডিউল বিপর্যয় রোধে ডাবল লাইন করা হচ্ছে।

রেলপথ মন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজনকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুজ্জামান বিশ্বাস এমপি | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন  

রেলমন্ত্রী আরও বলেন, অবিভক্ত ভারত ও পরবর্তী পাকিস্তান আমলে এই অঞ্চলের রেলওয়ে বিহারী দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত হতো। এই কারণে লোকবলের বিশাল সমস্যা ছিল। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রেলওয়েকে দ্রুততার সঙ্গে পুনর্গঠনের পরিকল্পনা শুরু করেন। কিন্তু উন্নয়নকল্পে যাওয়ার আগেই ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। এরপর বিএনপি ও জাতীয় পার্টি ক্ষমতায় আসলেও সমস্যায় জর্জরিত রেলওয়ের দিকে নজর দেয়নি। এমনকি স্বাধীনতার সময় পাওয়া তিন হাজার কিলোমিটার রেললাইনকে কমিয়ে আড়াই হাজারে আনা হয়। ৭৮ হাজার শ্রমিক কর্মকর্তা ও কর্মচারী থেকে কমিয়ে ২৫ হাজারে নামিয়ে আনা হয়। তারা রেলওয়েকে লোকসানজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে বেসরকারি খাতে ছেড়ে দিতে উদ্যোগ গ্রহণ করেছিল। এমনকি আইএমএফ ও বিশ্ব ব্যাংকের পরামর্শে ১৯৯১ সালে বিএনপি রেলওয়ে থেকে ১০ হাজার শ্রমিক কর্মকর্তা-কর্মচারীকে ছাঁটাই করে।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিচ্ছেন সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য নাদিরা ইয়াসমিন জলি | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন  

তিনি আরও বলেন, রেলওয়েতে ৪৮ হাজার লোকের অনুমোদন রয়েছে। কিন্তু বর্তমানে ২৫ হাজার জনবল রয়েছে। এ জন্য আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি হস্তক্ষেপে রেলওয়ের নিয়োগ বিধিতে সংশোধন আনা হয়েছে। ইতোমধ্যেই তিন হাজার নতুন জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আরও ২০ হাজার নতুন জনবল নিয়োগ দেওয়ার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।

নূরুল ইসলাম সুজন বলেন, প্রত্যেকটি জেলার সঙ্গে রেল সম্প্রসারিত করতে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। দেশের সকল মিটারগেজ লাইনকে ব্রডগেজে রূপান্তরিত করা হবে। একই সঙ্গে ডাবল লাইনের কাজ শুরু করা হয়েছে। কারণ দেশের জনগণ ট্রেন চাচ্ছে। তাই ট্রেনের সিডিউল বিপর্যয় রোধে ও সময় কমিয়ে ঈশ্বরদী-রাজশাহী, খুলনা, রংপুর, দিনাজপুরসহ দেশের পশ্চিমাঞ্চলের রেলের সঙ্গে পূর্বাঞ্চলের রেল যোগাযোগ সহজকরণে প্রতিটি সিঙ্গেল লাইনকে ডাবল লাইনে রূপান্তরিত করা হচ্ছে। এ জন্য বঙ্গবন্ধু সেতুর পাশ দিয়ে ডাবল লাইনের আলাদা রেল সেতুর নির্মাণকাজ চলছে। 

অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিচ্ছেন পাবনা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আ স ম আব্দুর রহিম পাকন | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন  

তিনি বলেন, আগামী জুন মাসের মধ্যেই ঢাকা-চট্টগ্রাম করিডরের মধ্যে সম্পূর্ণরূপে ডাবল লাইন করার কাজ চলছে। কাজ শেষ হলে ঈশ্বরদীসহ উত্তরাঞ্চলের মানুষ রেলযোগে সরাসরি কক্সবাজারে যেতে পারবে। একই সঙ্গে পদ্মা সেতুর ওপর বাকি থাকা এক কিলোমিটরা রেললাইন স্থাপন কাজ আগামী মাসে শেষ হলেই ঢাকার সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের চলাচল স্বাভাবিক হয়ে যাবে।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিচ্ছেন ওয়াটার এইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর পার্থ হেফাজ সেখ | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন  

রেলমন্ত্রী বলেন, দেশ এখনো স্বাধীনতাবিরোধী চক্রের ষড়যন্ত্র থেকে মুক্ত হতে পারেনি। তারা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে হত্যা করতে বারবার চেষ্টা চালিয়েছে। ধর্মের নামে হত্যা, জ্বালাও-পোড়াও, ভাঙচুর, লুটপাট করেছে। তারাই এখন স্লোগান দেয় ‘আমরা হবো তালেবান, দেশ হবে আফগান’। এদের ঐক্যবদ্ধভাবে রুখতে হবে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বাস্তবায়নে ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে কাজ করতে হবে। 

অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিচ্ছেন জেলা প্রশাসক বিশ্বাস রাসেল হোসেন | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন  

ঈশ্বরদী স্টেশন প্ল্যাটফর্মে আয়োজিত অনুষ্ঠানে রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক (ভারপ্রাপ্ত) মুহাম্মদ কুদরত-ই-খুদা সভাপতিত্ব করেন। পাকশী বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা (ডিসিও) নাসির উদ্দিনের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি ছিলেন পাবনা-৪ আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুজ্জামান বিশ্বাস এমপি, সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য নাদিরা ইয়াসমিন জলি, পাবনা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আ স ম আব্দুর রহিম পাকন, জেলা প্রশাসক বিশ্বাস রাসেল হোসেন, জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জিয়াউর রহমান জিয়া, প্রধান প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) লিয়াকত শরীফ খান, ওয়াটার এইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর পার্থ হেফাজ সেখ এবং ইএসডিওর নির্বাহী পরিচালক ড. মুহম্মদ শহীদ উজ-জামান।


আধুনিক পাবলিক টয়লেট প্রকল্প কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন অতিথিবৃন্দ | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন  

বক্তব্য শেষে মন্ত্রী ঈশ্বরদী রেলওয়ে জংশন এলাকায় নির্মিত নতুন ফুটওভার ব্রিজের উদ্বোধন ও আধুনিক পাবলিক টয়লেট প্রকল্প কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। 

উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ঈশ্বরদী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নায়েব আলী বিশ্বাস, পৌর মেয়র ইছাহক আলী মালিথা, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ মিন্টু, ঈশ্বরদী প্রেসক্লাবের সভাপতি মোস্তাক আহমেদ কিরণ, সম্পাদক আব্দুল বাতেনসহ রেলের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা, সাংবাদিক ও সুধীজন উপস্থিত ছিলেন। 

ফিতা কেটে ঈশ্বরদী রেলওয়ে জংশন এলাকায় নির্মিত নতুন ফুটওভার ব্রিজের উদ্বোধন করেন রেলপথ মন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন