পাঁচ ঘণ্টা লাঠিতে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে ওএমএসের আটা কিনলেন মর্জিনা

লাঠিতে ভর দিয়ে দুই বৃদ্ধা ওএমএসের পণ্য কিনতে এসেছিলেন। সামনে মর্জিনা বিবি, তাঁর পেছনে ইজারন বিবি। সোমবার সকাল ১০টার দিকে বগুড়া সদর উপজেলার সাবগ্রাম এলাকায় | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রতিনিধি বগুড়া: পাঁচ ঘণ্টা লাঠিতে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে ওএমএসের (খোলাবাজারে) তিন কেজি আটা কিনেছেন বৃদ্ধা মর্জিনা বিবি। সোমবার সকাল ১০টার দিকে বগুড়ার সদর উপজেলার সাবগ্রামে ওএমএসের ডিলার পয়েন্টে তাঁর সঙ্গে আলাপকালে বিষয়টি জানা যায়। তিনি ভোর ৫টার দিকে এসে লাইনে দাঁড়িয়েছেন। ডিলার পয়েন্ট থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে মর্জিনা বিবির বাড়ি। তাঁর স্বামী মৃত কেরামত আলী।

লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় মর্জিনা বিবি বলেছিলেন, ‘তিন ছলের মধ্যে বড় দুই ছলে সংসার লিয়া ভিনো (আলাদা) হয়া গেছে। ছোট ছলডা মরা যাওয়ার পর তার একডা ছল হামার কাছে থাকে। আর ছলের বউডা অন্য জায়গায় বিয়া বসিছে। ছোট্ট ছলডাক (নাতি) লিয়া হামার সংসার। হাঁটা পাই না, বেনা (ভোরবেলা) ব্যার হইয়া এটি আচ্ছি। বউঝিদের লাইনত খুবই ঠেলাঠেলি। টিকবার পারি না। তাই এনা সাইডে দাঁড়িছি। দেখি কখন মিলে আটা।’

বগুড়া শহরে ওএমএসের চাল ও আটার কেনার ডিলার পয়েন্টে প্রতিদিনই ভিড় বাড়ছে। একেকটি ডিলার পয়েন্টে শত শত মানুষের ভিড় লক্ষ করা যাচ্ছে। অনেকে চাল-আটা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন। অবশ্য প্রতিদিন ঠিক কতজন মানুষকে খালি হাতে ফিরে যেতে হয়, তার কোনো হিসাব নেই বগুড়া সদর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ে।

ওএমএসের চাল কিংবা আটা কিনতে পৃথক লাইনে দাঁড়িয়েছেন তাঁরা। সোমবার সকাল ১০টার দিকে বগুড়া সদর উপজেলার সাবগ্রাম এলাকায় | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

সদর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. মনিরুল হক বলেন, ২১টি ওয়ার্ড নিয়ে বগুড়া পৌরসভা। এখানে ওএমএসের ডিলারসংখ্যা মাত্র ১৩। সপ্তাহে দুই দিন ছুটি বাদে পাঁচ দিন ওএমএসের ডিলার পয়েন্টে মেলে চাল ও আটা। বেশি মানুষকে দিতে মাথাপিছু তিন কেজি আটা ও তিন কেজি চাল বিক্রি করা হয়। তবুও চাহিদা থেকেই যায়। অনেককেই ভোর থেকে দাঁড়িয়েও খালি হাতে ফিরতে হয়। প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি করে ওএমএসের পয়েন্টে চাল বিক্রির ব্যবস্থা করার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

ওএমএসের ডিলার পয়েন্টের সামনে বাঁশের বেড়া। সেখানে মানুষের গাদাগাদি। অনেকেই কাকডাকা ভোর এসে লাইনে দাঁড়িয়েছেন। আবার কাউকে নিজের জায়গা ধরে রাখতে ঠেলাঠেলি করতে হচ্ছে। বিশেষ করে নারীদের লাইনে ভিড় ও ঠেলাঠেলি বেশি চোখে পড়ল। লাঠিতে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন আরেক বৃদ্ধা ইজারন বিবি। বয়স জানতে চাইলে তিনি বললেন, সঠিক বয়েস তাঁর জানা নেই। তাঁর স্বামী মৃত মজিবর মণ্ডল। তিনি আরও বলেন, ‘লাইনত ঠিকপার পাইনি, তাই সরা দাঁড়িইয়া আছি। দেখি কখন ভাগ্যে আটা মেলে।’

ঠেলাঠেলি করে লাইনের নিজের অবস্থান ঠিক রাখার চেষ্টা করছেন নারীরা। সোমবার সকাল ১০টার দিকে বগুড়া সদর উপজেলার সাবগ্রাম এলাকায় | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

বগুড়া সদরের চকবোচই এলাকা থেকে রাত দুইটায় এসে লাইন ধরেছেন জামাল সরকার। সকাল ১০টা পর্যন্ত তিনি চাল কিংবা আটা কিছুই কিনতে পারেননি। জামাল বলেন, ‘তিন কেজি আটা তুলতেই পুরো দিনের কামাই যায়। এখানে একটু খারান দেখেন এক থেকে দেড় শ লোককে চাল দেওয়ার পরেই ডিলারে চাল–আটা ফুরিয়ে যায়।’

বগুড়া সদরের সাবগ্রাম এলাকা ওএমএসের পয়েন্টে বসে ছিলেন চাল-ডাল সরবরাহকারী জিয়াউল হাসান। তিনি বলেন, সপ্তাহে পাঁচ দিন এক টন করে আটা ও এক টন করে চাল বরাদ্দ পান। তাতে পাঁচ থেকে ছয় শতাধিক লোককে তিন কেজি করে চাল বা আটা দিতে পারেন।