নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের ব্যাংক খাতের তারল্য কমে গেছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রেপো হার ও আন্তব্যাংক ঋণের সুদহার। ফলে দেশের ব্যাংকগুলো চাপে আছে বলে মনে করছে আন্তর্জাতিক ঋণমান নির্ণয়কারী সংস্থা মুডিস। তারা বলছে, এসব কারণে ব্যাংকগুলোর মুনাফা কমে যেতে পারে।

মুডিস বলেছে, ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি, প্রবাসী আয় কমে যাওয়া ও উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে দেশের ব্যাংক খাতের তারল্য কমে গেছে। তারল্য কমায় ব্যাংকগুলোর চাহিদা বেড়েছে, সে কারণে আন্তব্যাংক ঋণের সুদহার বেড়েছে। এ ছাড়া মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক রেপো হার বৃদ্ধি করায় তারল্যে প্রভাব পড়েছে।

 বিশ্লেষকেরা বলেন, ব্যাংকিং খাতে তারল্য বাড়ানোর ক্ষেত্রে প্রবাসী আয় ও বিদেশি বিনিয়োগের বড় ভূমিকা আছে। কিন্তু গত বছর প্রবাসী আয়ে কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধি হয়নি। একই সময়ে বিদেশি বিনিয়োগও কাঙ্ক্ষিত হারে হয়নি, যদিও আগের বছর এ দুই খাতেই অনেক প্রবৃদ্ধি হয়েছিল। এসব কারণে ব্যাংকিং খাতে তারল্যের জোগান কমে গেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকে তথ্যানুসারে, ব্যাংকিং খাতে গত জানুয়ারি মাসে অতিরিক্ত তারল্যের পরিমাণ কমেছে ৮ হাজার ১২৮ কোটি টাকা। জুন মাসে ব্যাংকগুলোতে অতিরিক্ত তারল্যের পরিমাণ ছিল ২ লাখ ৩ হাজার ৪৩৫ কোটি টাকা; এরপর তা কমতে কমতে জানুয়ারিতে এসে ঠেকে ১ লাখ ৩৭ হাজার ৬০০ কোটি টাকায়। অক্টোবরেও যা ছিল ১ লাখ ৬৯ হাজার কোটি টাকা, নভেম্বর মাসে যা ১ লাখ ৫৩ হাজার কোটি টাকায় নেমে আসে।

এই পরিস্থিতিতে মুডিস মনে করছে, নিকট ভবিষ্যতে দেশের কিছু ব্যাংকের স্বাস্থ্য খারাপ হতে পারে। বিশেষ করে যেসব ব্যাংকের ট্রেজারি বিল-বন্ড কম, তাদের এ সমস্যায় পড়ার আশঙ্কা আছে। কারণ, এসব ট্রেজারি বিল-বন্ড বন্ধক রেখে ব্যাংকগুলো বাংলাদেশ ব্যাংক ও অন্যান্য ব্যাংকের কাছ থেকে স্বল্পমেয়াদি ঋণ বা তহবিল সংগ্রহ করে। এ পরিস্থিতিতে ব্যাংকগুলো তহবিল সংগ্রহ করতে ব্যর্থ হলে বিপদে পড়তে পারে।

তারল্য কমার কারণে ইসলামিক ব্যাংকগুলো বেশি বিপদে পড়বে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে মুডিস। কারণ হিসেবে তারা বলছে, এসব ব্যাংকের তারল্য অপেক্ষাকৃত কম হওয়ায় তাদের মুনাফা করার সক্ষমতাও কম।

সম্প্রতি নামে-বেনামে ঋণ বিতরণের খবর প্রচারিত হওয়ায় সম্প্রতি ইসলামি শরিয়াভিত্তিক ব্যাংকগুলো থেকে আমানত তুলে নিয়েছেন অনেক গ্রাহক। ফলে এসব ব্যাংকের আমানত উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে জানা গেছে, তিন মাসের ব্যবধানে ডিসেম্বর শেষে দেশে কার্যরত শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলোর আমানত কমেছে ১১ হাজার ৪২৬ কোটি টাকা বা ২ দশমিক ৭১ শতাংশ।

বিপদে পড়লে বিশেষ সহায়তার জন্য ব্যাংকগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকের দ্বারস্থ হতে হয়। এতে ব্যাংকের প্রতি আমানতকারীদের আস্থা কমে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে এবং পরিণামে তাদের আমানত কমে যেতে পারে। ব্যাংকগুলো একধরনের দুষ্টচক্রে পড়ে যেতে পারে বলে মনে করছে মুডিস।

মুডিস আরও বলেছে, ২০২৩ সালেও মূল্যস্ফীতির সূচক ঊর্ধ্বমুখী থাকবে (৭ থেকে ৮ শতাংশ থাকতে পারে), তাতে আমানতের প্রবৃদ্ধি কমে যেতে পারে। তারল্যসংকট পুরোপুরি দূর হবে না। সেই সঙ্গে সারা বিশ্বেই প্রবৃদ্ধির গতি কমে গেছে। আছে একধরনের অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা। রপ্তানি আয় কমে যেতে পারে।